ঢাকা : রবি ঠাকুরের ভাস্কর্য আবর্জনায় ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। তাতেই প্রতিবাদের ঝড় ওপার বাংলায়। ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলাদেশের (Bangladesh) তরুণ-তুর্কিরা। গত দুই দিন ধরে আলোচনায় থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) ভাস্কর্য কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে অপসারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (Dhaka University) প্রোক্টরিয়াল কর্তৃপক্ষ। যদিও তারা প্রথমে তা স্বীকার করেনি। পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তারা রবি ঠাকুরের এই বিতর্কিত ভাস্কর্য সরানোর কথা স্বীকার করে নেয়। তবে সেই ভাস্কর্য কোথায় রাখা হয়েছে সেটি তারা বলেনি।
সূত্রের খবর, অপসারণের পর পুরো ভাস্কর্য পাওয়া না গেলেও মাথার অংশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন টিএসসি গেটের মাঝামাঝি সেন্ট্রাল লাইব্রেবির ঠিক উল্টোপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে পাওয়া গিয়েছে। সংবাদপত্রের কাজে সরকারি হস্তক্ষেপ, বই প্রকাশনা ও মুক্তচিন্তায় বাধা-সহ নানা কারণে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এই অস্থায়ী ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বইমেলার প্রবেশমুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিবাদী ভাস্কর্যটি বসানো হয়েছিল। সেটির খণ্ডাংশই সম্প্রতি উদ্ধার করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সূত্রের খবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে বইমেলার প্রবেশপথে ভাস্কর্যটি স্থাপনের ১ দিন পর বুধবার ভোররাতে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এরই প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। নানা মহলে ওঠে নিন্দার ঝড়। ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে যে জায়গায় সেটি ছিল সেখানে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’ ব্যানার ঝুলিয়ে দেন পড়ুয়ারা। সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্য নির্মাণ ও স্থাপনের নেতৃত্ব দেন চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল কুম্ভকার। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতর থেকে খণ্ডাংশটি উদ্ধারের পর তা তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
চারুকলা অনুষদের নির্মাণকারীদেরও স্পষ্ট দাবি ছিল, মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের উপর সেন্সরশিপ এবং সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তাঁরা তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের এই ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটিতে রবি ঠাকুরের মুখ টেপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাতে থাকা একটি বইয়ে পেরেক মেরে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। যা নিয়েও বিগত কয়েকদিন ধরে বিতর্ক চলছিল সেদেশে। রেশ এসে পৌঁছে ছিল এপার বাংলাতেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই ভাস্কর্য তৈরি ও স্থাপনকে আদপে ‘অপসংস্কৃতি’ বলেই কটাক্ষ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুন্দর ভাস্কর্যের পাশে আরেকটি এই ধরণের ভাস্কর্য বানানো আসলে অপসংস্কৃতি। গোপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া এটি তৈরি করা কোনওভাবে সমীচীন নয়।” যদিও নির্মাতা শিমুল কুম্ভকার বলেন, “ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব বোঝানোর উদ্দেশ্যে। এটি পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাশে রাখার আশা করেছিলাম।” এবার সেই মূর্তিরই মাথা উদ্ধার হওয়ায় নতুন করে শুরু হয়েছে চাপানউতর।