ওয়শিংটন: পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অধিকাংশ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। সেই প্রতিশ্রুতি পেয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে সব রকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু, আচমকা দুর্নীতির আশঙ্কা জানিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রতিশ্রুত অর্থ আর দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সেই সিদ্ধান্তে চরম বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ সরকার। একের পর এক তদবিরেও মন গলেনি বিশ্ব ব্যাঙ্কের। ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্য়ূত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেটা ছিল ২০১২ সালের কথা। এরপর, নিজেদের কোষাগার ব্যবহার করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তব করেছে হাসিনা সরকার। মঙ্গলবার (২ মে), প্রথম সুযোগেই ওই তিক্ত ঘটনা নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ককে জব্বর খোঁচা দিলেন হাসিনা।
এদিন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের আমন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে সংস্থার সদর দফতরে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির কথা তুলে যে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে পিছিয়ে এসেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এদিন বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে সেই পদ্মা সেতুরই একটি চিত্রকর্ম উপহার হিসেবে তুলে দেন হাসিনা। এই উপহারের মধ্য দিয়ে অতীতের সেই ক্ষতেই প্রলেপ লাগালেন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী, এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্ক হাত তুলে নেওয়ায় চরম সংকটে পড়েছিল হাসিনা সরকার। বিশেষ করে দুর্নীতির অভিযোগ গোটা দেশে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। শেখ হাসিনা বারবারই এই সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন। বিশ্বব্যাঙ্ক কোনওদিনই সেই দুর্নীতির অভিযোগের সপক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। ২০১৭ সালে কানাডার এক আদালতও জানিয়েছিল, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু, জনরোষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, নিজেদের কোষাগারের অর্থেই বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই সময়ের সবথেকে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল হাসিনা সরকার।
অনেকেই সেই সময়ে বিশ্বাসই করতে চায়নি যে, বাংলাদেশ সরকার নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে। তবে, সেই সব দিনকে পিছনে ফেলে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এবং এখন সেই সেতু দিয়ে নিয়মিত যানবাহণও চলছে। তবে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের সেই দিনের সেই অপমান ভোলেননি হাসিনা। আর তাই প্রথম সুযোগেই পুরনো ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর সুযোগ ছাড়লেন না তিনি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
এদিন ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাঙ্কের সদর দফতরে সংস্থার কার্যনির্বাহী কর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর, ডেভিড ম্যালপাসের হাতে চিত্রকর্মটি তুলে দন শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ‘বিশ্বব্যাঙ্ক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছরের প্রতিফলন’ শীর্ষক এক অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি। হাসিনা বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেটি ভুল প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘নিজস্ব সম্পদে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপ্তি এবং গত বছর এর উদ্বোধন সম্ভবত আমাদের সহনশীলতা ও সাফল্য অর্জনের সেরা উদাহরণ।’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন বিশ্বব্যাংকের সভাপতি ডেভিড ম্যালপাস এবং এর প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।
এদিন, বিশ্ব ব্যাঙ্ককে খোঁচা দিলেও আগামী দিনে যে এই আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েই কাজ করতে চায় বাংলাদেশ, তাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাসিনা। বাংলাদেশের নয়া উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প, ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়নে এবং নতুন করে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী। এদিন, পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তিও হয়েছে।