সত্যি আছে হীরক রাজার ‘যন্তর মন্তর’! সেখানে কীভাবে চলে মগজ ধোলাই?

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Nov 15, 2024 | 10:16 AM

Human Experience Centre: মূল মামলাকারী ৮৫ বছরের ক্যাথেনটিনার অভিযোগ, আমেরিকায় মূলত জেলবন্দি, নিখোঁজ কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের হ্যাঙ্কি সেন্টার পাঠানো হয়েছে। আমেরিকার বাইরে যে সব দেশে মার্কিন সেনার কারাগার বা সেনাঘাঁটি আছে, সেখানেও একই ঘটনা ঘটেছে।

যন্তর মন্তর ঘরের কথা মনে আছে? হীরক রাজার দেশে যন্তর মন্তর ঘর। বেয়াড়া প্রজাদের মগজ ধোলাইয়ের জন্য মস্তিষ্ক প্রস্খালক যন্ত্র। বানিয়েছিল হাল্লার রাজার মাইনে করা বিজ্ঞানী – গবেষক গবুচন্দ্র। তাঁর যন্তরমন্তর ঘরে চলত মগজ ধোলাই। সত্যজিত্‍ রায়ের অন্যতম সেরা সিনেমা। আমরা অনেকেই সিনেমাটা দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। এখনও সুযোগ পেলে দেখি। সত্যজিত্‍ বাবুর সিনেমা কি সেই সময় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কেও প্রভাবিত করেছিল? এতটাই, যে তাঁরা আমেরিকায়, এমনকি আমেরিকার বাইরেও যন্তরমন্তর ঘর তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগে।

হ্যাঁ, আঙ্কেল স্যামের দেশে যন্তরমন্তর ঘর। একদল মহিলা গবেষক ও সমাজকর্মীর অভিযোগ, আমেরিকা অবিকল একই কায়দায় মগজ ধোলাইয়ের চালিয়েছে ও চালাচ্ছে। আশির দশকে হয়েছে। মধ্যিখানে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আবারও সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই। সরকার বিরোধী, শাসক বিরোধিতার আভাস পেলে প্রথমেই তা সমূলে উপড়ে ফেলা। শাসক বিরোধী একজন মানুষকে এমন টনিক দেওয়া যাতে সে আপাদমস্তক সরকারপন্থী হয়ে ওঠে।

গুপি গাইন, বাঘা বাইনের সেই বিখ্যাত দৃশ্যটা মনে করুন। বিজ্ঞানী গবুচন্দ্র রাজাকে বলছেন, এর সাহায্যে রাজভক্তি প্রকাশে নারাজ যে, তাঁকে করে তোলা একনিষ্ঠ রাজভক্ত মোটেও নয় শক্ত। রাজা জানতে চাইছেন, এ যন্ত্র কাজ করে কীভাবে? বিজ্ঞানী গবুচন্দ্র বলছেন, এ যন্ত্র মস্তিষ্কে রোপণ করে মন্ত্র, যারে যা শেখাতে চান, তাই। বিরুদ্ধ মন্ত্র আছে যত, সব ধুয়ে মুছে মাথা পরিস্কার। হীরক রাজার দেশে সেই একই ফর্মুলা। ওদেশে যন্তরমন্তর ঘরের নাম হিউম্যান এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার বা হ্যাঙ্কি। গবেষক ও সমাজকর্মীদের অভিযোগ, হ্যাঙ্কি আসলে রাজভক্ত তৈরির কারখানা।

একদম ছোট শিশু থেকে সিনিয়র সিটিজেন – সব বয়সের মানুষের উপর দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে হ্যাঙ্কির ল্যাবরেটরিতে। আলোড়ন ফেলে দেওয়ার মতো অভিযোগ, সন্দেহ নেই। এনিয়ে মার্কিন আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই গবেষক ও সমাজকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, আমেরিকা, কানাডা ছাড়াও ইরাক, আফগানিস্তানের মতো দেশে একাধিক হ্যাঙ্কি সেন্টার তৈরি হয়। কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যাঙ্কি সেন্টার বন্ধ তো করেনই-নি। উল্টে নতুন নতুন জায়গায় সেন্টার তৈরি করিয়েছেন।

মূল মামলাকারী ৮৫ বছরের ক্যাথেনটিনার অভিযোগ, আমেরিকায় মূলত জেলবন্দি, নিখোঁজ কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের হ্যাঙ্কি সেন্টার পাঠানো হয়েছে। আমেরিকার বাইরে যে সব দেশে মার্কিন সেনার কারাগার বা সেনাঘাঁটি আছে, সেখানেও একই ঘটনা ঘটেছে। মামলাকারীরা আরও একটা দাবি করেছেন। সেটা আরও বিস্ফোরক ও শিউরে ওঠার মতো। এক থেকে বারো বছরের শিশুদেরও নাকি এইসব হ্যাঙ্কি সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল। গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে। মন্ট্রিওলে ম্যাকগ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগও দীর্ঘদিন ধরে এমনই এক মেডিক্যাল সেন্টার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।

আদালতে জেরার মুখে সেকথা পুরোপুরি অস্বীকারও করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। মার্কিন আদালতে শুনানির সময় কার্পেটের তলায় চাপা থাকা বেশ কিছু ঘটনাও সামনে এসেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন এক হিউম্যান এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার তৈরিতে আফ্রিকার গরিব দেশগুলোকে আর্থিক অনুদান দিয়েছিল ব্রিটেন সরকার। আর পুরো বিষয়টা দেখভালের দায়িত্বে ছিল সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শতাধিক শিশু ও অসুস্থ মানুষের উপর বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে আদালতে দাঁড়িয়ে ফোর্ট নক্সের দৃষ্টান্ত টেনেছেন মামলাকারীদের আইনজীবী। তাঁর আবেদন, ফোর্ট নক্সে কী আছে, এত বছর ধরে কী হয়েছে, তা যেমন কোনওদিন জানা যায় না, তেমনি হ্যাঙ্কি সেন্টার নিয়েও সরকার কিছুই বলবে না। ঠিকই। হ্যাঙ্কি সেন্টারের মতো, ফোর্ট নক্স-রহস্যের উপর থেকেও কখনও পর্দা সরে না।

Published on: Nov 15, 2024 10:00 AM