Isreal Air Defence: ইজরায়েলকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাল ‘আয়রন ডোম’, ভারতকে বাঁচাবে কে?

Isreal Air Defence: মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। তবে, ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, এই হামলায় একজনও ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়নি। কীকরে ঘটল এই চমৎকার? আসলে, ইজরায়েলের আছে ত্রিস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা। ভারতের হাতে এই রকম কিছু আছে কি?

Isreal Air Defence: ইজরায়েলকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাল 'আয়রন ডোম', ভারতকে বাঁচাবে কে?
ত্রিস্তরীয় প্রতিরক্ষায় ইসরায়েল গোটা দেশটাই যেন দুর্গImage Credit source: PTI
Follow Us:
| Updated on: Oct 02, 2024 | 9:29 PM

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। ফলে, ইজরাইল এবং ইরান ও তাদের আরব মিত্রশক্তিগুলির মধ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলা উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যর আবহাওয়া এখন উত্তপ্ত। হামলার ছবি-ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, বৃষ্টির মতো ব্যালিস্টিক মিসাইল উড়ে যাচ্ছে ইজরায়েল লক্ষ্য করে। মধ্য পাল্লার ‘ইমাদ’, ‘গদর’ থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক দীর্ঘ পাল্লার ‘ফাতাহ-২’ – তুনে থাকা সকল ক্ষেপণাস্ত্রই প্রয়োগ করেছে তেহরান। তবে, ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, এই হামলায় একজনও ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়নি। কীকরে ঘটল এই চমৎকার? আসলে, হামলা শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আকাশপথে হামলার সাইরেন বাজিয়ে, বাসিন্দারা বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইজরায়েল। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে আটকাতে চালু করেছিল তাদের বিস্তৃত ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এর আগে হামাস হমলার সময় ইজরায়েলকে রক্ষা করেছিল তাদের ‘আয়রন ডোম’ এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা। তবে, মঙ্গলবার রাতে শুধু আয়রন ডোম নয়, ইরানের হামলার মোকাবিলায় তারা তাদের ত্রিস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েছে। কী এই ত্রিস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা?

ইজরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম

আসলে, ইজরায়েলের হাতে বেশ কয়েকটি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। বিভিন্ন উচ্চতা এবং বিভিন্ন দূরত্ব থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিরোধ করার জন্য আলাদা আলাদাভাবে এই সিস্টেমগুলিকে নকশা করা হয়েছে। ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে সবথেকে সুপরিচিত, ‘লৌহগম্বুজ’ বা ‘আয়রন ডোম’ ব্যবস্থা। ৪ কিমি থেকে ৭০ কিমি দূর থেকে ছোড়া স্বল্প-পাল্লার রকেট, শেল এবং মর্টারগুলিকে আটকানোর জন্য নকশা করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে ‘ডেভিডের গুলতি’ বা ‘ডেভিড’স স্লিং’। ৩০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে ছোড়া দূরপাল্লার রকেট, ক্রুজ মিসাইল এবং মাঝারি পাল্লার বা দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য এই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ইজরায়েলের হাতে আরও রয়েছে ‘তির-২’ বা ‘অ্যারো ২’ এবং ‘তির-৩’ বা ‘অ্যারো ৩’ সিস্টেম। এগুলি মাঝারি-পাল্লার এবং দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে প্রতিরোধ করতে তৈরি করা হয়েছে। ২,৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকেও প্রতিরোধ করতে পারে এই ব্যবস্থা। মঙ্গলবার রাতে এই সবকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। ইরানের ছোড়া ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্রর অধিকাংশই আটকে গিয়েছে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থার জালে। সামান্য কিছু আঘাত হেনেছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে। কিন্তু কীভাবে কাজ করে ইজরায়েলের এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলি?

আয়রন ডোম কিভাবে কাজ করে?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যেভাবে বারে বারে হামাস-সহ গাজার যোদ্ধা গোষ্ঠীগুলি এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী নাগাড়ে ইজরায়েল লক্ষ্য করে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে গিয়েছে এবং ইজরায়েল যেভাবে সেই হামলাগুলিকে ভোঁতা করে দিয়েছে, তাতে আয়রন ডোম-কে বর্তমান বিশ্বের সবথেকে যুদ্ধ-পরীক্ষিত এবং সফল বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইজরায়েল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আয়রন ডোমের ব্যাটারি। প্রতিটি ব্যাটারিতে তিন থেকে চারটি লঞ্চার থাকে। প্রতিটি লঞ্চারে থাকে ২০টি করে ইন্টারসেপ্টর মিসাইল।

রাডারের সাহায্যে উড়ে আসা রকেটগুলিকে সনাক্ত করে এবং ট্র্যাক করে আয়রন ডোম। তারপর এই ব্যস্থা হিসেব কষে দেখে যে, রকেটগুলি কোনও জনবহুল এলাকায় পড়তে পারে কিনা। যদি দেখে সেই সম্ভাবনা রয়েছে, সেই ক্ষেত্রে ওই রকেটগুলি লক্ষ্য করে ইন্টারসেপ্টর মিসাইল নিক্ষেপ করে। আর যেগুলি কোনও জনবহুল এলাকায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে না, সেগুলিকে মাটিতে পড়ে নষ্ট হতে দেয়। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, তাদের এই ব্যবস্থা ইজরায়েলের দিকে উড়ে আসা ৯০ শতাংশ রকেটকেই ধ্বংস করে।

লৌহ গম্বুজ বা আয়রন ডোম

ইসরাইল ও হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর মধ্যে, ২০০৬ সালে যে “গ্রীষ্মকালীন যুদ্ধ” হয়েছিল, তাতে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহরা ইজরায়েলে প্রায় ৪,০০০ রকেট ছুড়েছিল। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল ইজরায়েলকে। ডজন খানেক অসামরিক নাগরিকের মৃ্ত্য হয়েছিল। এরপরই, তারা তৈরি করেছিল আয়রন ডোম সিস্টেম। মার্কিন সমর্থনে, এই আকাশপথে হামলা প্রতিরোধের ব্যবস্থাটি তৈরি করেছিল ইজরায়েলি ফার্ম, ‘রাফাল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস’ এবং ‘ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ’। ২০১১ সালে ইজরায়েল জুড়ে আয়রন ডোম স্থাপন করা হয়েছিল। ওই বছরই গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেটকে বাধা দিয়েছিল সেই ব্যবস্থা। সেই শুরু হয়েছিল যুদ্ধে এর ব্যবহার। তারপর থেকে ইজরায়েলকে রকেট হামলা থেকে রক্ষা করে চলেছে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ২০১৭ সালে, জাহাজ এবং সমুদ্রে থাকা অন্যান্য সম্পদকে রক্ষার জন্য, আয়রন ডোমের একটি নৌ-সংস্করণও তৈরি করা হয়েছে।

কীভাবে কাজ করে ডেভিডের গুলতি?

ডেভিডের গুলতি বা ডেভিডস স্লিং-কে ইজরায়েলিরা “জাদুদণ্ড”ও বলে থাকে। ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকেও আটকে দিতে পারে এই ব্যবস্থা। ইজরায়েলের ‘রাফাল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেথিয়ন’ সংস্থা যৌথভাবে এটি তৈরি করেছিল। ২০১৭ থেকে কাজ করা শুরু করেছে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এর “স্টানার” মিসাইলগুলি নকশা করা হয়েছে, কম উচ্চতায় উড়ে আসা স্বল্প-পাল্লার, মধ্য-পাল্লার এবং দূর-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ধ্বংস কার জন্য। আয়রন ডোমের মতো, ডেভিডস স্লিং শুধুমাত্র যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি জনবসতি এলাকায় পড়ার হুমকি দেয়, সেগুলিকেই নিশানা করে। ডেভিডস স্লিং এবং আয়রন ডোম – দুই ব্যবস্থাই বিমান হামলা, ড্রোন হামলা এবং ক্রুজ মিসাইল হামলা আটকাতে পারে।

ডেভিডের গুলতি বা ডেভিডস স্লিং

২০২৩-এর মে মাসে, ইসরায়েলে ১,১০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল ‘প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদ’ নামে, গাজার এক যোদ্ধা গোষ্ঠী। সেই সময় প্রমবার ডেভিডস স্লিং ব্যবহার করেছিল ইজরায়েল। তারা বলেছিল, ৯৬ শতাংশ রকেট ধ্বংস করেছে ব্যবস্থাটি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেও, লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছিল, ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল ইরানের তৈরি কদর-১ ক্ষেপণাস্ত্র। এই মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ৭০০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে। হিজবুল্লাহ দাবি করেছিল, ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্য ছিল তেল আবিবে অবস্থিত ইজরায়েলি গুপ্তচর বাহিন ‘মোসাদে’র সদর দফতর। তবে ইজরায়েল দাবি করে, সেটি একটি আবাসিক এলাকার দিকে যাচ্ছিল।

অ্যারো-২ এবং অ্যারো-৩ কীভাবে কাজ করে?

ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৫০ কিমি উপর দিয়ে উড়ে আসা স্বল্প-পাল্লার এবং মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি আয়রন ডোম বা ডেভিডস স্লিং ব্যবস্থার রাডারে ধরা পড়ে না। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ধ্বংস করার জন্য মকশা করা হয়েছে অ্যারো-২ ব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে, প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইসরায়েলে কয়েক ডজন সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি ‘স্কাড’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল ইরাক। এই যুদ্ধের পরই অ্যারো-২ সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ২০০০ সালে এই ব্যবস্থা স্থাপন করেছিল ইজরায়েল। তার আগে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর তৈরি ‘প্যাট্রিয়ট’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করত। অ্যারো-২-কে ওই ব্যবস্থারই একটি আপগ্রেড বলে মনে করা হয়। ৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকেও সনাক্ত করতে পারে এই ব্যবস্থা। আর তারপর, ওই ক্ষেপণাস্ত্রটিks ধ্বংস করতে পারে। অ্যারো-২-এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলি, শব্দের গতির নয় গুণ গতিতে ছোটে। শুধু তাই নয়, একবারে ১৪টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে এটি। অর্থাৎ, ১ ঢিলে মারা যাবে ১৪ পাখি। ২০১৭ সালে, সিরিয়ার সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে, প্রথমবার যুদ্ধে অ্যারো-২ ব্যবহার করা হয়েছিল।

ওই বছরই, অ্যারো-৩ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করেছিল ইজরায়েল। মার্কিন সংস্থা, ‘বোয়িং’-এর সহায়তায় ইজরায়েলের সরকারি সংস্থা, ‘ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ’ এই সিস্টেমটি তৈরি করেছে। দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি উড়ে আসার সময়, অনেকটা পথ এগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে দিয়ে ওড়ে। এই সময় এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে সনাক্ত করতে পারে না অ্যারো-২ ব্যবস্থাও। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে আটকানোর জন্য ইজরাইল তৈরি করেছে অ্যারো-৩। মহাকাশ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফের প্রবেশের আগেই তাদের আটকাতে পারে এই ব্যবস্থা। এতে হিট-টু-কিল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। এর পাল্লা ২,৪০০ কিলোমিটার। ২০২৩ সালে, প্রথমবার এটি যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা দক্ষিণ ইজরায়েলের উপকূলীয় শহর ইলা লক্ষ্য করে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। সেটিকে আটকাতে কাজে লাগানো হয় অ্যারো-৩।

অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা

ভারতের কি আছে লৌহগম্বুজ, ডেভিডের গুলতি বা কোনও তীর?

ইজরায়েলের মতো ত্রিস্তরীয় না হলেও, ভারতও একটি ভূমি-ভিত্তিক, দ্বি-স্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই সিস্টেমের জন্য একাধিক পরীক্ষা করেছে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ডিআরডিও। সেগুলি সফলও হয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতরে এবং এর বাইরে মহাকাশে- দুই জায়গাতেই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ট্র্যাক এবং ধ্বংস করার মতো করে এই ব্যবস্থার নকশা করা হয়েছে। এমনকি, ক্ষেপণাস্ত্রর মাথায় পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকলেও কোনও অসুবিধা হবে না। তবে, ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত প্রকৃত যুদ্ধের ময়দানে পরীক্ষিত নয়।

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রকল্পর কাজ হচ্ছে দুটি ভাগে। প্রথম ধাপে যে ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়েছে সেটির পাল্লা ৩০০০ কিমি পর্যন্ত। পরবর্তী ধাপে যেটি তৈরি করা হবে তার পাল্লা হবে ৫০০০ কিমিরও বেশি। প্রথম ধাপের অধীনে, ‘পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স ভেহিকল’ বা ‘পৃথ্বী ডিফেন্স ভেহিকল’ এবং ‘অশ্বিন অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স’ ইন্টারসেপ্টরের সমন্বয়ে একটি দ্বি-স্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। ভৃপৃষ্ঠ থেকে ৫০-১৮০ কিমি উচ্চতা দিয়ে ওড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ধ্বংস করার দায়িত্ব পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স ভেহিকল বা পৃথ্বী ডিফেন্স ভেহিকল-এর। আর অশ্বিন অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স আটকায় ভৃপৃষ্ঠ থেকে ২০-৪০ কিমি উচ্চতায় ওড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে।

২০১৯-এর এপ্রিলেই প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিগগিরই এই সিস্টেমের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য সরকারি অনুমোদন আসবে। প্রথম পর্যায়ে, দিল্লি এবং মুম্বইকে সুরক্ষা দেবে এই ব্যবস্থা। প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে, দুটি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি দূরপাল্লার রাডারও মোতায়েন করা হয়েছে। ২০২২-এর ডিসেম্বরের জানা গিয়েছিল, রাজস্থানের উদয়পুর ও আরও এক জায়গায় এবং মধ্য প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে এই ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেই কাজ শেষ হয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার দ্বিতীয় ধাপে, এডি-১ এবং এডি-২ নামে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে, ডিআরডিও এডি-১ ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ফ্লাইট-টেস্ট করেছিল এবং তা সফল হয়েছিল। এটিকে একটি দূর-পাল্লার ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র হিসাবে নকশা করা হয়েছে। বায়ুমন্ডলের ভিতরে তো বটেই, এমনকি তার বাইরেও কম উচ্চতা দিয়ে ওড়া, দূর-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানগুলিকে ধ্বংস করতে পারবে এডি-১। এডি-২ তৈরির কাজ চলছে। এর পাল্লা হতে চলেছে ৩০০০ থেকে ৫০০০ কিমির মধ্যে।

সমুদ্রে সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে, ভারতও নৌবাহিনীর জন্যও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করছে। ২০২৩-এর এপ্রিলে, বঙ্গোপসাগরে ওড়িশার উপকূলে ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ফ্লাইট পরীক্ষা করেছিল ডিআরডিও এবং ভারতীয় নৌবাহিনী। তা সফলও হয়। বিশ্বে হাতে গোনা দেশের নৌবাহিনীর হাতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে।