ঢাকা: ১৪ বছর পর পালাবদল ঘটেছে ব্রিটেনে। কনজারভেটিভ পার্টিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। আর নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ২ মহিলা। তাঁরা হলেন টিউলিপ সিদ্দিক ও রুশনারা আলি। লেবার পার্টির হয়ে গত দেড় দশক ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তাঁরা। ২০১০ সালে প্রথমবার ব্রিটেনের এমপি হন রুশনারা আলি। সেই থেকে জিতে আসছেন তিনি। আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে টিউলিপ সিদ্দিকের মাসি। ব্রিটেনের মন্ত্রিসভায় ২ বাঙালির অন্তর্ভুক্তিতে আনন্দে ভাসছে পুরো বাংলাদেশ।
প্রথম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি হিসেবে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় স্থান পান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নতুন সরকারের নগরমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন তিনি। টিউলিপ সিদ্দিক বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার বড় মেয়ে। ফলে বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ হাসিনা টিউলিপের মাসি হন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই লন্ডনে ছিলেন শেখ রেহানা। সেখানেই ১৯৮০ সালে জন্ম টিউলিপ সিদ্দিকের। পরে বাংলাদেশে ফিরে এসে দীর্ঘদিন ছিলেন ঢাকায়। উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে ব্রিটিশ লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন টিউলিপ।
চলতি মাসের ৪ তারিখে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন টিউলিপ সিদ্দিক। লেবার পার্টি বিরোধী দলে থাকাকালীন তিনি ছায়া নগরমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে জয়ী হন হাসিনার বোনঝি টিউলিপ।
টিউলিপকে লেবার পার্টির অভ্যন্তরে নতুন প্রজন্মের তুমুল সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা হয়। তিনি ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রথমবার লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়েই জিতে চমক দেখান।
মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি টিউলিপ সিদ্দিককে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। লন্ডন শহর ও বৃহত্তর আর্থিক পরিষেবা শিল্প নিয়ে কাজ করা এই পদটি নগরমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। এই পদে দায়িত্বগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ, ক্রিপ্টো সম্পদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতির মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভসের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিক বিশ্বের একটি আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে লন্ডনের মর্যাদা বাড়াতে কাজ করবেন।
এদিকে, ব্রিটেনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন আরও এক বাঙ্গালি কন্যা রুশনারা আলি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নতুন সরকারে আবাসন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ব্রিটেনের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মন্ত্রীদের নামের তালিকায় মঙ্গলবার রুশনারার নাম আছে। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে যুক্তরাজ্যের নবনির্বাচিত লেবার পার্টির সরকারে অন্তর্ভুক্ত হলেন রুশনারা আলি।
গত ৪ জুলাই ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে টানা পঞ্চমবারের মতো জেতেন রুশনারা আলি। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে জিতেন তিনি। তাঁর নিকটতম নির্দল প্রার্থী আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান ৪ হাজার ৭৭৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। অর্থাৎ বাঙালি অধ্যুষিত লন্ডনের এই এলাকায় প্রার্থী হওয়া প্রায় সবাই ছিলেন বাঙালি।
এই আসনে ২০১০ সাল থেকে টানা ৫ বার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রুশনারা আলি। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। রুশনারা আলির জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে। তাঁর বয়স যখন সাত বছর, তখন ব্রিটেনে পাড়ি জমায় তাঁর পরিবার। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক পাশ করেন। রুশনারা আলি প্রথম বাংলাদেশি বংশদ্ভূত, যিনি ২০১০ সালে ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হন।