ঢাকা: সুফি-সাধক হজরত সৈয়দ মুরশেদ আলি আলকাদেরি আল বাগদাদি, যিনি ‘মওলা পাক’ নামেও নামে পরিচিত। তাঁর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওরশ উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এল ট্রেন। নারী, শিশু-সহ ২২৫৬ জন পুণ্যার্থী নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর শহরে পৌঁছেছে বাংলাদেশের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ট্রেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা নাগাদ মেদিনীপুর স্টেশনে প্রবেশ করে এই ট্রেনটি। ট্রেনবোঝাই বাংলাদেশি পুণ্যার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে স্টেশন চত্বরেও। মেদিনীপুর স্টেশনে পৌঁছতেই তাঁদের স্বাগত জানানো হয় মেদিনীপুর পুরসভার তরফে। ফুল দিয়ে যাত্রীদের স্বাগত জানান মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খান।
মওলাপাক’ কাদেরিয়া তরিকার প্রাণপুরুষ বড় পীর সাহেব গওসুল আজম হজরত সৈয়দ শাহ আব্দুল কাদের জিলানির ২৩ তম বংশধর ৪ ফাল্গুন প্রয়াত হন। ওই দিনটিতে দেশ-বিদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ওরশ উৎসবের মাধ্যমে তাঁদের গুরুকে স্মরণ করেন। বর্তমানে এই তরিকার সাজ্জাদানশীন মাওলা পাকের স্থলাভিষিক্ত হজরত সৈয়দ শাহ ইয়াসুব আলি আল কাদেরি আল বাগদাদী পাকের পরিচালনায় ও তত্ত্বাবধানে এবার এই ওরশ উৎসব উদযাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশে থেকেও লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা এই উপলক্ষে মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজার এলাকাতে আসেন।
বাংলাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এই পৌঁছে দিতে ১৯৫৩ সাল থেকে এই বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়। করোনার কারণে ২০২১ এবং ২০২২ সালে এই পুণ্যার্থী স্পেশাল বাংলাদেশি ট্রেন মেদিনীপুরে আসতে পারেনি। সেক্ষেত্রে গত দুবছর এই উৎসবের বহর অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছিল। এদিন ২৪ কামরার এই স্পেশাল বাংলাদেশি ট্রেন দেখার জন্য উৎসাহ ছিল ভারতবাসীদের মধ্যেও। এদিন মেদিনীপুরের মাটি ছুঁতেই ভারতীয় রেলওয়ে ও আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পুণ্যার্থীরা।
মেদিনীপুর শহরের জোড়া মসজিদ ‘মওলপাকের’ মাজার শরিফে, তাঁর বাসস্থান দায়রাপাকে ও সাধনা স্থল কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত স্ত্রীগঞ্জ পাকে ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের ঢল নেমেছে মঙ্গলবার থেকেই। এর মধ্যে বাংলাদেশি পুণ্যার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে উরসের সময় ভাল ব্যবসা করে ব্যবসায়ী ও হোটেলগুলি । চাঙ্গা হয় স্থানীয় অর্থনীতি।
মেদিনীপুর টাউন মুসলিম কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক তথা মেলা কমিটির সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, “এবারেও বাংলাদেশের ট্রেনে করে তীর্থযাত্রীরা এসেছেন। তাছাড়া অনেক তীর্থযাত্রী বিমানে বা গাড়িতে করে এসে গিয়েছেন। যাতে কোন রকম কোন সমস্যা না হয় সেদিকে নজরদারি থাকে সকলের।” বুধবার বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে ছেড়ে যাওয়া স্পেশাল ট্রেন ট্রেনটি উৎসব শেষে ১৮ ফেব্রুয়ারি ফের রওনা দেবে বাংলাদেশের উদ্দেশে।