যে ভারতবর্ষ পাশে না থাকলে স্বাধীন বাংলাদেশই তৈরি হত না, সেই বাংলাদেশ এখন কী আর সেই সম্মান রাখছে? হাসিনার বিদায়ের পর থেকে যে নৈরাজ্য চলছে, তা দেখে অনেকেই বলছেন এ তো ’৭১-এর কায়দায় চলছে সংখ্য়ালঘুদের উপর নির্যাতন। গত কয়েক মাসে পদ্মাপাড়ে শুধুই মৌলবাদীদের দাপাদাপি! তারাই হয়ে উঠেছে হর্তাকর্তা বিধাতা! আইন, পুলিশে সেই কট্টরপন্থীদেরই মাতব্বরি! তবে কী জামাতের দেখানো পথেই ইউনূস প্রশাসন? প্রশ্ন ঘুরছে আন্তর্জাতিক আঙিনায়।
ঘরে বাইরে বিতর্ক-প্রতিবাদের ঝড়
বিগত কয়েকদিনের ছবি দেখলেই স্পষ্ট, জ্বলছে সোনার বাংলা। অভিযোগ, বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা হচ্ছে। বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, মন্দিরে হামলা। আদালত চত্বরে গুন্ডামি। হিন্দু সন্ন্যাসী যাতে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পেতে না পারেন তার জন্য তাঁর আইনজীবীদেরও শাসানি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। একদিকে ফাঁসানোর জন্য পুলিশের মামলা চলছে, আবার তার সঙ্গে হামলাও চলছে। এককথায় দেশজুড়ে নৈরাজ্য! এই পরিস্থিতিতে প্রথম কোনও বাংলা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি সফিকুল আলম। TV9 বাংলায় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে হামলার কথা স্বীকারও করেছেন ইউনূস প্রশাসনের প্রেস সেক্রেটারির।
ঘরে বাইরে বিতর্ক-প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কিন্তু, তারপরও বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের সন্ত্রাস তো বেড়েই চলেছে। কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা বাংলাদেশের নীলফামারি। সেখানে একাধিক বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। বিদ্বেষের বাংলাদেশে কি না চলছে! বাংলাদেশের এলিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিত, সেখানে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা! এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে সেই কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন সফিকুল আলম।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, নিজের জালে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। মুখে গণতন্ত্রের বুলি, আর কাজে যেন ঠিক উল্টো ছবি। যেখানে আইন আদালতে গিয়েও যে রেহাই মেলে না। কিছুই আর অস্বীকার করতে পারছেন না ইউনূসের প্রেস সচিব। এই বাংলাদেশেে বেড়াতে গিয়েছিলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সায়ন ঘোষ। সেখানে গিয়ে তাঁরও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়। ভারতীয় হিন্দু জানতে পেরে ওই যুবকের উপর বেশ কয়েকজন চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ইট দিয়ে মাথায় মারা হয়। এমনকী চিকিৎসার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরতে হয় বেলঘরিয়ার সায়নকে। যদিও বেলঘরিয়ার যুবকের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা ইউনূসের প্রেস সচিব।
যে দেশে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে সেখানে কোথায় মানুষের আইনি অধিকার?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মুখে বলছেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নাকি ঠিকমতো রয়েছে। কিন্তু, বেলঘরিয়ার সায়নের মতো বনগাঁর এক মহিলাও তো বাংলাদেশে আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন। বনগাঁর বাসিন্দার সাফ কথা, হিন্দু শুনেই হামলা হচ্ছে। নিজে তো প্রাণভয়ে বনগাঁয় ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাঁর চিন্তা যাচ্ছে না ওপার বাংলায় প্রিয়জনদের নিয়ে!
এদিকে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এধরনের অন্তর্বর্তী সরকার বেআইনি। আর সেই সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুদের শেষ করে দেওয়ার ছক? এই পরিস্থিতি কেন? প্রশ্ন ঘুরছে। তার মধ্যে বিরোধিতা করলেই গারদে পুরে দেওয়া চলছেই। এক মাস পিছিয়ে গিয়েছে চিন্ময়কৃষ্ণের জামিন মামলার শুনানি। যা দেখে অনেকেই বলছেন, যে দেশে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে সেখানে কোথায় মানুষের আইনি অধিকার?
সবটাই পরিকল্পনামাফিক?
হুমকির মুখে পড়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর। আইনজীবীদের একাংশের মতে, অত্যন্ত কৌশলে এধরনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবটাই পরিকল্পনামাফিক।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান বিল পাসের প্রাক্কালে, নতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্রিস্টান, প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নেই। আমাদের আপত্তি শুধুমাত্র এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু, সেই বাংলাদেশের এ কী হাল? উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। এখন দেখার আন্তর্জাতিক মহলে চাপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত কী করে ইউনুস সরকার।