ঢাকা: ভোরের তখনও ঠিকভাবে ফোটেনি। কেউ কেউ ঘুমোচ্ছেন ট্রেনের ভিতরে। কেউ আবার অপেক্ষা করছেন ট্রেন থেকে নাম। ঠিক সেই সময় শুরু আর্তনাদ। ‘আগুন…আগুন…’। ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের ততক্ষণে ঘিরে ফেলেছে আতঙ্ক। শুধুই শোনা যাচ্ছে চিৎকার আর কান্নার শব্দ। প্রাণ বাঁচাতে উদভ্রান্তের মতো করতে ট্রেনের কামরার এদিক থেকে ওদিক ছুটছেন যাত্রীরা। কোনও ক্রমে ট্রেনটি বাংলাদেশের ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে থামতেই হুড়োহুড়ি করে নেমে যান সকলে। শুধু নামতে পারেননি চারজন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিন। আখেড়ে মা তো! নিজে নেমে পড়বেন আর সন্তান থেকে যাবে ট্রেনে? তাই কোলের শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরেই কামরার মধ্যে আগুনে ঝলসে গেলেন তাঁরা।
আজ ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় ও হাওর বেষ্টিত জেলা নেত্রকোনা থেকে ঢাকার দিকে আসছিল মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসটি। তখনই ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় আক্তার পপি ও তাঁর তিন বছরের ছেলে সহ আরও তিনজনের।
মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, পপির স্বামী মিজানুর রহমান কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যার সামগ্রীর ব্যবসা করেন। তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন গৃহবধূ। সোমবার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। উঠেছিলেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সেই অভিশপ্ত কামরায়। পপির সঙ্গে তাঁর অন্যান্য় পরিবারের মোট ৯ জন সদস্য ছিলেন। ছিল তাঁর ন’বছরের ছেলে মাহিন আর তিন বছরের ছোট্ট ইয়াসিন। এদের মধ্যে পাঁচ জন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান। তারপর ট্রেন ফের চলতে শুরু করে। এরপর খিলক্ষেতে আসতেই যাত্রীরা কয়েকটি বগিতে আগুন দেখতে পান।
আগুন ধরার পর ট্রেন থামতেই নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সকলে। একে একে নেমেও যান। কিন্তু তাঁরা লক্ষ্য করেন পপি ও ইয়াসিন নেই। ততক্ষণে ট্রেনের ওই কোচটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। বাকিটা আর বুঝতে বাকি রইল না কারোর। মৃতের মিনহাজুর রহমান বলেন, “বৌদির কোলে তখন ছোট্ট ইয়াসিন। বাচ্চা নিয়ে উনি আর নামতে পারেনি। ওই অবস্থাতেই একসঙ্গে জীবন্ত পুড়ে মারা যায় দুজন।”