নয়া দিল্লি: অর্থমন্ত্রী হয়েই বাজেট পেশের চিরাচরিত রীতিতে বদল এনেছিলেন নির্মলা সীতারামন(Nirmala Sitharaman)। তাঁর হাত ধরেই ব্রিফকেসের বদলে এসেছিল লাল শালুতে মোড়া বাজেট নথি। বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাব কাটিয়ে দেশে যে ‘স্বদেশী’ পণ্যের দিকেই ঝুঁকছে, সেই বার্তাই দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণের জেরে ফের বদল এসেছিল বাজেট পেশের পদ্ধতিতে, ভারতের বাজেটের ইতিহাসে প্রথমবার “পেপারলেস বাজেট”(Paperless Budget) পেশ করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, এবারও পেপারলেসই হতে চলেছে কেন্দ্রীয় বাজেট (Budget 2022)। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণেই এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতেই বাজেট পেশ করা হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নিয়ে দ্বিতীয় বছর কেন্দ্রীয় বাজেট ‘পেপারলেস’ হতে চলেছে। সম্প্রতিই সংসদে প্রায় ৯০০ জন কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। দেশেও ক্রমশ বেড়েছে সংক্রমণ। সেই কারণেই করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতেই এই বছরও সংস্পর্শ এড়াতে পেপারলেস বাজেট পেশ হতে চলেছে।
জানা গিয়েছে, এবারের বাজেটেও যাবতীয় নথি ডিজিটালিই পাওয়া যাবে। কেবলমাত্র কয়েকটি কপিই ছাপানো হবে। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি বছরই বাজেট পেশের আগের দিন যাবতীয় নথি ছাপানের জন্য নর্থ ব্লকের বেসমেন্টে প্রায় শতাধিক কর্মী রাত কাটান। বাজেট পেশ না হওয়া অবধি তারা সেখানেই থাকেন। কিন্তু গতবছরই করোনা সংক্রমণের কারণে এই রীতিতে বদল আনতে হয়েছিল। ছোট জায়গার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, সেই কারণেই কর্মীদের রাত্রিবাসের রীতি স্থগিত করে দেওয়া হয়। তার বদলে ডিজিটাল মাধ্যমেই বাজেট পেশ করা হয়।
সংসদের সদস্য ও সাধারণ মানুষ যাতে সহজেই বাজেট নথি পড়তে পারেন, সেই কারণেই গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় বাজেট নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এনেছিল। এবারও সেই অ্যাপের মাধ্যমেই বাজেট দেখা যাবে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও ট্যাবেই বাজেট পেশ করতে পারেন।
করোনাকালে নয়, বরং ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময় থেকেই কেন্দ্রের তরফে হাজার হাজার কাগজ ব্য়বহারে কাটছাঁট করা হয়েছিল। পরিবেশ বান্ধব বাজেটের লক্ষ্যেই যথাসম্ভব কাগজের ব্যবহারে হ্রাস টানা হয়েছিল। প্রথমেই সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের জন্য আলাদাভাবে বাজেট নথি ছাপানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে কেবল অর্থমন্ত্রী ও সাংসদদের জন্যই বাজেট পত্র ছাপানো শুরু হয়। গতবছরই প্রথমবার সম্পূর্ণ রূপেই বাজেট ছাপানো বন্ধ হয়ে যায়। এবারও ডিজিটাল মাধ্যমেই ভরসা রাখছে কেন্দ্র। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থও সঞ্চয় হবে।
বাজেটের দিন প্রত্যেকবারই ব্রিফকেস হাতে দেখা যেত অর্থমন্ত্রীদের। সেই রীতিতে পরিবর্তন এনেই ২০১৯ সালে অশোকস্তম্ভের চিহ্ন দেওয়া লাল শালুতে মুড়িয়ে এনেছিলেন বাজেটের নথি। জানা গিয়েছিল, ২০১৯,সালে যে লাল শালুতে মুড়িয়ে নির্মলা সীতারামন বাজেট পত্র এনেছিলেন, তা তাঁর এক আত্মীয়া তৈরি করে দিয়েছিলেন। সিদ্ধি বিনায়ক এবং মহালক্ষী মন্দিরে ওই শালু নিয়ে গিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী। দেশের অর্থনীতি নির্ভর করছে এই বাজেট পরিকল্পনার উপরই। সেই কারণেই পবিত্রতা ও আধ্বাত্বিক ছোঁয়া এনেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
করোনাকালে ২০২১ সালের বাজেটে আরও এক ধাপ এগিয়ে ট্যাব ব্যবহার করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তবে সেখানেও ছিল স্বদেশী ছোঁয়া। মেড ইন ইন্ডিয়া ট্যাব ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এবার অর্থমন্ত্রীর হাতে নতুন কোনও চমক থাকে কিনা, তাই-ই এখন দেখার।