মুম্বই: এক সময়ে বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন অনিল অম্বানী। দাদা মুকেশ অম্বানী আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে হয়তো আজ বাণিজ্য জগতে টিকেও থাকতে পারতেন না অনিল অম্বানী (Anil Ambani)। সবে ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন অনিল অম্বানী, সেই সময়ই আরও বড় ধাক্কা। এবার অনিল অম্বানীর উপরে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করল সেবি। ৫ বছরের জন্য তাঁর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫ কোটি টাকার আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। তবে অনিল অম্বানীর এই দুরাবস্থার সূচনা কিন্তু সম্প্রতি নয়, বহু বছর আগে থেকেই হয়েছিল।
বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি মুকেশ অম্বানী। তবে একসময়ে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ছিলেন তাঁর ছোট ভাই অনিল অম্বানী। ২০০৮ সালে তাঁকে বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হিসাবে ঘোষণা করা ছিল। সেই সময়ে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ৪২০ কোটি ডলার! তাঁর এই বিপুল সাফল্য এনে দিয়েছিল রিলায়েন্স পাওয়ারের আইপিও।
১৯৮০ সালে ধীরুভাই অম্বানী হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরই ছেলেদের হাতে রিলায়েন্স সংস্থার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় এক ছাতার তলাতেই ছিল রিলায়েন্স। ২০০২ সালে ধীরুভাই অম্বানীর মৃত্যুর পর মুকেশ ও অনিল অম্বানী যৌথভাবে রিলায়েন্স সংস্থার দায়িত্ব নেন। দুই ভাইয়ের বিরোধে ২০০৫ সালে দুই টুকরো হয়ে যায় রিলায়েন্স। মুকেশ অম্বানী পান তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসার দায়িত্ব। অন্যদিকে অনিল অম্বানী পান টেলিকমিউনিকেশন, বিদ্যু ও আর্থিক পরিষেবার ভার।
উচ্চাভিলাষী অনিল অম্বানীর পতনের অন্যতম কারণ ছিল তাঁর ভুল পদক্ষেপ। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে যেমন ঝাঁপিয়ে পড়তেন, তেমনই কোনও এক সংস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে মনসংযোগ করতেন না অনিল অম্বানী, এমনটাই অভিযোগ করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
তবে সবথেকে বড় ধাক্কা খান দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন সংস্থায় বিনিয়োগ করে। ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন অনিল অম্বানী, এর জন্য নিজের রিলায়েন্স সংস্থাকে দেনার দায়ে ডুবিয়ে দিতেও দু’বার ভাবেননি। এই ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই রিলায়েন্স সংস্থার পতন হতে থাকে। উত্তর প্রদেশের দাদরিতে একটি মেগাবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের চেষ্টাও করেছিলেন অনিল অম্বানী, কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০০৯ সালে সেই জমি অধিগ্রহণ বেআইনি বলে বাতিল করে দেয়।
সংস্থা যখন দেনায় ডুবে, তখনও বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় কোনও পরিবর্তন আনেননি অনিল অম্বানী। তিনটি চিনা ব্যাঙ্ক ৬৮০ মিলিয়ন ডলার ঋণ খেলাপের অভিযোগে লন্ডন আদালতে অনিল অম্বানীর বিরুদ্ধে মামলা করে। আরও বড় ধাক্কা খান ২০১৯ সালে। বিপুল দেনায় ডুবে যায় রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। আরকম এরিকসন ৫৫০ কোটি টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট গ্রেফতারির নির্দেশ দেয়। সেই সময়ে ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মুকেশ অম্বানী। তিনি ঋণ পরিশোধ করে ভাইকে জেলে যাওয়া থেকে বাঁচান। ২০২০ সালে ব্রিটেন আদালতে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন অনিল অম্বানী। সেই ছিল অনিল অম্বানীর সাম্রাজ্যের পতন। তবে বিগত কয়েক বছরে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন অনিল অম্বানী। হাত ধরেছিল ছেলে জয় আনমোল। কিন্তু ফের সেবির নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা অনিল অম্বানী।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)