কলকাতা/ওয়াশিংটন: বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না, এই কথা বলার দিন শেষ। এই বঙ্গেরই বর্ধমানের মেয়ে অঙ্কিতা নন্দী। একেবারে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। পড়াশোনা কোনও আইআইটি বা আইআইএম থেকে নয়। বাংলা মিডিয়াম স্কুল-কলেজ থেকেই পাস করেছেন। কিন্তু, আজ বাংলার এই ‘সাধারণ’ মেয়েই ১০০ কোটি টাকার এক সংস্থার মালিক! জেদ আর কঠোর পরিশ্রমে অঙ্কিতা তৈরি করেছেন তাঁর নিজের সংস্থা ‘টায়ার৫ টেকনোলজি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড’। এটি একটি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক সংস্থা। তাঁর অধীনে কাজ করেন প্রায় ১০০ জন। আর তাঁর ব্যবসার সদর দফতর হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা প্রদেশে। কলকাতার সল্টলেকেও একটি কার্যালয় রয়েছে।
কলেজে পড়তে পড়তেই উদ্যোগপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন অঙ্কিতা। তখন থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে নিজের ব্যবসা শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অঙ্কিতার পক্ষে সহজ ছিল না। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মেয়ে, বাবা একজন সরকারি কর্মচারী। নিজের শহরেই এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তেন কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। তবে, ছাত্রী অবস্থাতেই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরিতে হাত পাকিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত রোজগারের জন্য সেই অ্যাপগুলি বিক্রিও করতেন।
এইভাবেই চলছিল। তবে, তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল এমন একটি অ্যাপ, যা তাঁর নিজের তৈরি নয়। ডেটিং অ্যাপ ‘টিন্ডার’-এ একদিন আচমকাই তাঁর পরিচয় হয়েছিল জিন উজেনের সঙ্গে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁকে নিজের ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা খুলে বলেছিলেন অঙ্কিতা। এরপর, ২০১৫ সালে জিন ও অঙ্কিতা যৌথভাবে এই সংস্থা স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের কারোরই বিনিয়োগ করার মতো যথেষ্ট টাকা ছিল না। দুটি মাত্র কম্পিউটার ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাঁরা। বাকিটা ইতিহাস।
২০২১ সালে জিন ও অঙ্কিতা গাঁটছড়া বেঁধেছেন। ওই বছর তাঁদের সংস্থা ‘টায়ার ৫’-এর বার্ষিক আয় ছিল ১০০ কোটি টাকারও বেশি। ভাড়ার দুটি কম্পিউটার থেকে তাঁদের সংস্থায় এখন ১০০ জন কর্মচারী কাজ করেন। সবটাই হয়েছে মাত্র ৬ বছরে। ১,৫০০-রও বেশি ক্লায়েন্ট তাদের পরিষেবাগুলি ব্যবহার করেন। অঙ্কিতার ব্যবসা একটি সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেলে চলে। অর্থের বিনিময়ে অন্যান্য সংস্থাগুলিকে তাদের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে দেয় ‘টায়ার ৫’৷ এখনও পর্যন্ত এই সংস্থা ২৫টি সফটওয়্যার পণ্য তৈরি করেছে। নিঃসন্দেহে অঙ্কিতা, যারা ব্যবসা করতে চায়, যারা উদ্যোগপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাদের কাছে এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছের সামনে সীমিত সম্পদ কখনই প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পরে না।