Bengal’s Contribution in Share Market: গুজরাটিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেয়ার বাজার দাপাচ্ছে বাঙালিরা! কীভাবে সম্ভব হল, জানুন

Nov 22, 2024 | 6:56 PM

Bengal's Contribution in Share Market: পরিসংখ্যান বলছে গুজরাটিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই শেয়ার বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঙালিরাও। কেন এই কথা বলছি, তা বোঝা যায় পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলেই।

Bengals Contribution in Share Market: গুজরাটিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেয়ার বাজার দাপাচ্ছে বাঙালিরা! কীভাবে সম্ভব হল, জানুন

Follow Us

বাঙালির নাক এমনিতেই যতই বড় হোক না কেন, একটি বিষয় নিয়ে খুব সাবধানে ফেলে! সেটি হল আর্থিক দিক। মিতব্যয়ী মধ্যবিত্ত বাঙালি এমনিতে টাকা পয়সার ব্যপারে খানিকটা সমঝেই চলে। তাই ১০-৫টার চাকরি আর তার পরে পরিবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা, সময় কাটানো এই নিয়ে জীবন কাটে মধ্যবিত্ত বাঙালির। ব্যবসার ‘রিস্ক’ থেকে দূরে মাস মাইনের চাকরিই তাই এতদিন তার কাছে প্রিয় ছিল। আর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ছিল ‘জুয়া’ খেলার মতোই ‘পাপ’ কাজ। বিনিয়োগ-ব্যবসা এই সব দিকে চিরকালে এগিয়ে ছিল গুজরাটি বা পশ্চিমের রাজ্যের বাসিন্দারা। গুটি কয়েক বাঙালি ছাড়া এই দিকে খুব একটা কেউ পা মারাত না। সঞ্চয় ছিল তাঁদের কাছে মূল মন্ত্র।

পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্কের নিশ্চিন্ত সুরক্ষাই বরাবর বেশি আদরের। তবে সময় বদলেছে, মধ্যবিত্তের টাকা রাখার চিরাচরিত জায়গাগুলিতে টাকা রেখেও আর ভাল রিটার্ন পাওয়া যায় না। তাই সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে বাঙালিও। পরিসংখ্যান বলছে গুজরাটিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই শেয়ার বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঙালিরাও। কেন এই কথা বলছি, তা বোঝা যায় পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলেই।

কী বলছে পরিসংখ্যান?

কিছুদিন আগেই ২০ কোটি গ্রাহকের গন্ডি ছুঁয়েছে ন্যাশানাল স্টক এক্সচেঞ্জ বা এনএসই। সেই সমন্ধে একটি তালিকা প্রকাশ করে ন্যাশানাল স্টক এক্সচেঞ্জ। যেখানে দেখা যায় ন্যাশানাল স্টক এক্সচেঞ্জের রেজিস্টার্ড অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২০ কোটির গন্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে মহারাষ্ট্রের। আর প্রথম পাঁচেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নাম। বাংলার প্রায় ১.২ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১০ কোটি। অর্থাৎ তথ্য বলছে প্রায় ১/১০ শতাংশ মানুষই এখন শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টে আগ্রহী। আবার গত পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৫০% বেড়েছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা।

এই পরিসংখ্যানের থেকে পরিষ্কার যে, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। বিশেষ করে বাঙালিরাও সেই ট্রেন্ডের বাইরে নয়। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই লোকসভা ভোটের সময় শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের বিষয়ে দেশবাসীকে উৎসাহ দিতে দেখা গিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগে বড় লাভ মিলতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

 

কিন্তু হঠাৎ কেন বাড়ছে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের প্রতি ঝোঁক? এই প্রবণতা কি কেবল তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নতুন অ্যাকাউন্ট খুলছে মানে কি বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়ছে? মহিলাদের মধ্যেও কি বাড়ছে বিনিয়োগের সংখ্যা? অল্প সময় বিত্তবান হয়ে উঠতেই কি এই ঝোঁক? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতেই টিভি৯ বাংলা ডিজিটালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বিশিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটর সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কী বললেন তিনি?

বাঙালিদের মধ্যে কেন বাড়ছে শেয়ারে ইনভেস্ট করার ঝোঁক?

সিদ্ধার্থ বাবু বলেন, “গত তিন বছর ধরে শেয়ারের দাম এবং মিউচাল ফান্ডের দাম উভয় খুব বেড়েছে। যা স্বাভাবিক ভাবেই বাঙালির চোখে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, আজকাল ব্যাঙ্কে টাকা রাখলেও আহামরি কিছু রিটার্ন পাওয়া যায় না। অথচ শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করলে যে সেই টাকা বাড়তে পারে তা অনেকেই জানেন। ব্যাঙ্কের সুদের হারের থেকে অনেক বেশি টাকা রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে সেই বিষয়টিও মানুষের মধ্যে কাজ করে।”

তবে শুধু এগুলিই নয়। এখন ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র যুগে। প্রায় সকলের হাতেই একটি করে মোবাইল রয়েছে। চারপাশে মিউচুয়াল ফান্ড বা অনান্য মাধ্যমে বিনিয়োগের বিষয়ে সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন সিদ্ধার্থ বাবু। তিনি বলেন, “এখন মানুষের মধ্যে ইকোনমিক লিটারেসি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চারপাশে মিউচুয়াল ফান্ড বা বিনিয়োগের ব্যাপারে বিজ্ঞাপন বাড়ছে। তাই অনেকেই চেষ্টা করে দেখতে চাইছেন, ‘যদি কিছু হয়’। এই বিষয়টি আমি আরও ভাল বুঝতে পারি কারণ, আমার কাছে প্রত্যেক কোর্সে ছাত্র সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।”

বিনিয়োগের ঝোঁক কি কেবল নতুন প্রজন্মের মধ্যেই ধরা পড়ছে?

সিদ্ধার্থবাবু কিন্তু বলছে না। তরুণ এবং প্রবীণ প্রজন্ম, সবার মধ্যেই এখন বিনিয়োগ করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আসলে যে সব বাঙালি গতানুগতিক জীবন থেকে বেরিয়ে এসে একটু অন্য ভাবে, ভাল ভাবে বাঁচতে চান, তাঁরাই এখন শেয়ারে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। আবার অনেকেই ভাবছেন, যে ভাবে প্রতিদিন বাজারদর বেড়ে চলেছে তাতে অবসরের পরে পেনশনের টাকায় চলবে কিনা সেটাও একটা ব্যপার! তাই বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। তরুণ প্রজন্ম একটু বেশি রোজগারের আশায় এগিয়ে আসছে।

শেয়ারে বিনিয়োগ নিয়ে কারা বেশি আগ্রহী?

মূলত তিন ধরনের মানুষের মধ্যে বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ চোখে পড়েছে। এক তরুণ প্রজন্মের ,মধ্যে। যারা একটু বেশি রোজগার করে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে চান। দুই,বাড়ির মহিলারা, যাঁদের বাইরে বেরিয়ে রোজগারের খুব একটা পথ নেই। তিন,প্রবীণ ব্যক্তি। অবসর গ্রহণের পরে যাঁদের সেই রকম কোনও কাজ নেই, তাঁরাও খানিকটা ভয় থেকেই বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে আসছেন।

 

অল্প সময় বিত্তবান হওয়ার ‘লোভ’ই কী মানুষকে বিনিয়োগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

সিদ্ধার্থ বাবু মনে করেন, অল্প সময় বড়লোক হত চায় মানুষ। তাই জন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান অনেকেই। তবে শর্টকাটে বড়লোক হওয়া যায় না। যদিও বা দু-এক ক্ষেত্রে খেটে যায়, তবে নিয়ম না মানলে ফল মেলে না।

কোন ধরনের বিনিয়োগে প্রবণতা বেশি?

সিদ্ধার্থ বাবু জানাচ্ছেন মানুষ লং টার্ম অর্থাৎ ১০-১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগের কথা ভেবেই প্রথমে আসেন। তবে শেয়ার মার্কেটের একটি মজা হল এখানে প্রতিদিন দামের ওঠা পড়া চোখে পড়ে। তাই বাজারের অস্থিরতা দেখে নিজের মধ্যেও একটা অস্থিরতা তৈরি হয়। ফলে অনেকেই অল্প সময়ে টাকা তুলে নেন। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে একটি কথা মনে রাখা দরকার, একদিনে কোনও সংস্থার শেয়ারের দাম বাড়ে না। তার জন্য সময় দিতে হয়, ধৈর্য্য ধরতে হয়।”

বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কী মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরী?

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ধারাবাহিকতা। ধারাবাহিকভাবে শেয়ার মার্কেট নিয়ে চর্চা না করলে, বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে লাভ করা কঠিন। এই বিষয়ে সিদ্ধার্থ বাবু বলেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লেগে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা একদিন ভাগ্যের শিঁকে ছেড়ার আশায় প্রতিদিন একটা করে লটারির টিকিট কেনেন। সেই ভাবেই প্রতিদিন নিয়ম করে বিনিয়োগ করাটাও জরুরি।”

অ্যাকাউন্ট খোলা মানেই কি বিনিয়োগ বাড়ছে?

যদিও এই ধারাবাহিকতা নিয়েই খানিকটা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সিদ্ধার্থবাবু। তিনি বলেন, ” এখন প্রতিদিন হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও ক’জন বাঙালি নিয়মিত বিনিয়োগ করেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ র‍য়েছে। কোনও একটা কারণে হয়তো উদ্বুদ্ধ হয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল কিন্তু তা থেকে কোনও বিনিয়োগ নেই। এগুলিকে ডরম্যান্ট অ্যাকাউন্ট বলে। অনেকটা ব্যাঙ্কে জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলে রাখার মতো।”

তবে আজকাল অ্যাকাউন্ট খোলা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে বলে সেই সংখ্যাটা বাংলায় অনেক বাড়ছে। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “আগে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হত। এখন তা অনেক সোজা। ১০ মিনিটে হয়ে যায়। তবে আমার মনে হয় বাংলার হয়তো ৭০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট ডরম্যান্ট অ্যাকাউন্ট। সেদিক থেকে অনেক এগিয়ে পশ্চিমের রাজ্য। মহারাষ্ট্র, গুজরাট বা দিল্লিতে মানুষ সচেতন ভাবে অ্যাকাউন্ট খুলছেন এবং নিয়মিত ট্রেডিং করছেন।”

প্রাথমিক ট্রেডাররা কী মাথায় রাখবেন?

সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিনিয়োগ বিষয়টি কি তা একটু ভাল করে জেনে নেওয়া দরকার। এখন ডিজিটালি সব তথ্য পাওয়া যায়। মিউচুয়াল ফান্ড কী, শেয়ার বাজার কী ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞ কারও সঙ্গে একটু কথা বলে নিন। তৃতীয়ত, নিজের রিস্ক প্রোফাইল সম্পর্কে সম্মক ধারণা থাকা প্রয়োজন। আপনি কত টাকা রিস্ক নিতে পারেন সেটা ভাল করে বুঝুন। সাধারণত বলা হয়, আয়ের ১০ শতাংশ অবধি রিস্ক নেওয়া যায়। তবে সেটা আয় এবং ব্যয়ের অনুপাতের উপর নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষে বদলে বদলে যায়।”

প্রসঙ্গত, বাঙালিদের মধ্যে ব্যবসা করা বা বিনিয়োগের প্রবণতা বহু পুরনো। ইতিহাস ঘাটলে সেই ১৮৫৭ সালেই প্রথম ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের উল্লেখ পাওয়া যায়। আর অদ্ভুতভাবে সেই প্রথম বিনিয়োগকারী ছিলেন এক বাঙালি মহিলা। তিনি হলেন রানি রাসমনি। সিপাহী বিদ্রোহের সময় হুরমুড় করে পতন হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দামের। সেই সময় জলের দামে সেই শেয়ার কিনে নেন রাসমনি। পরে যা বেচে বিপুল মুনাফা করেছিলেন তিনি। তাই সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায় বাঙালি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে এটাই স্বাভাবিক। তাঁর কথায়, “বেটার লেট দ্যান নেভার।”

Next Article