লন্ডন: কাজের সময় নিয়ে এক নতুন পরীক্ষা শুরু করেছে ব্রিটেন। সেই দেশে চার দিনের কর্ম সপ্তাহ শুরু করা হয়েছে। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে কাজ করতে হবে মাত্র ৪ দিন। আর এর জন্য বেতনেও কোনওরকম কাটছাঁট করা হচ্ছে না। ৭০ টি সংস্থার ৩,৩০০ জনেরও বেশি কর্মীকে নিয়ে চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে এই অভিনব উদ্যোগ। একেবারে স্থানীয় খাবারের দোকানের কর্মীদের থেকে শুরু করে বড়মাপের আর্থিক সংস্থার কর্মীরা এই পরীক্ষামূলক ব্যবস্থায় অংশ নিচ্ছেন। আগামী ছয় মাস ধরে এভাবে কাজ করে দেখা হবে কর্মীদের কাজ করার ক্ষমতা আগের থেকে বাড়ছে কি না।
‘ফোর ডে উইক গ্লোবাল’ নামের অলাভজনক সংস্থা, ‘অটোনমি’ নামে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং ‘ফোর ডে ইউকে’ প্রচারাভিযানের যৌথ উদ্যোগে এই পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন ব্রিটেনের ‘অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়’ ও বস্টন কলেজের গবেষকরা। পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই পাইলট স্কিমের প্রধান গবেষক হলেন বস্টন কলেজের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক জুলিয়েট স্কোর। তিনি বলেছেন, ‘চার দিনের সপ্তাহ সাধারণত একইসঙ্গে কর্মচারী, সংস্থা এবং জলবায়ুর জন্য উপকারী হয়ে থাকে। তাই আমরা একে ট্রিপল ডিভিডেন্ড নীতি বলে মনে করি। গবেষণায় আমরা এই সব কয়টি দিকেই নজর রাখব।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যতদিন এই পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা চলবে, ততদিন অংশগ্রহণকারী কর্মীদের তাঁদের আগের কর্মঘণ্টার ৮০ শতাংশ সময় কাজ করতে হবে। তবে, বেতন ১ শতাংশও কমানো হবে না। তাঁরা জানিয়েছেন, উৎপাদনশীলতা পরিমাপের মাপকাঠিটা ব্যবসা ভেদে আলাদা হয়। কোনও ক্ষেত্রে কত লাভ হচ্ছে সেটাই একমাত্র মাপকাঠি। কোনও ক্ষেত্রে কয়টি পণ্য বিক্রি হল, সেই সংখ্যা মাপকাঠি হতে পারে। আবার, কোনও কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সংখ্যা কত বাড়ানো গেল, সেটাই সাফল্যের এক মাত্র মাণদণ্ড। তাঁদের লক্ষ্য, এই মাপকাঠিগুলি নির্বিশেষে, চার দিনের কর্মসপ্তাহের একটি সাধারণ মানদণ্ড তৈরি করা। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, সময়-ভিত্তিক কর্মপদ্ধতি একটি শতাব্দী-প্রাচীন ব্যবস্থা। তা বদলানোর সময় এসেছে।
বস্তুত, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশেষ করে কোভিড মহামারির সময়ে অনেক দেশেই সপ্তাহে কাজের দিন কমানোর দাবি পালে বাতাস পেয়েছে। অতিমারির সময় বহু কর্মীকে অফিস থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। কাজ করতে হয়েছে বাড়ি থেকে। তাতে দেখা গিয়েছে অফিসে যাতায়াতের সময় এবং খরচ – দুটোই কমেছে। এর ফলে এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। আইসল্যান্ডে চার দিনের কর্মসপ্তাহের পরীক্ষা দারুণ সাফল্য পেয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কাজের দিন কমলেও উত্পাদনশীলতা একই থেকেছে কিংবা উন্নত হয়েছে। এরপর, সেই দেশে অনেক সংস্থাই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চলতি বছরের শেষের দিকে সরকারি উদ্যোগে ব্রিটেনের মতো ৪ দিনের কর্মসপ্তাহের পরীক্ষা করবে স্পেন, বেলজিয়াম, সুইডেন, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসও।
এখন প্রশ্ন হল, ভারত কী করবে? সরকারি সূত্র মতে, ভারত সরকারও কর্মসপ্তাহ কমিয়ে আনার কথাই বিবেচনা করছে। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক সপ্তাহে পাঁচ বা ছয়টি কাজের দিনের পরিবর্তে, চারটি কর্মদিবস করার কথা ভাবছে। মোদী সরকার আগামী অর্থবর্ষে বেতন, সামাজিক নিরাপত্তা, পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং কাজের অবস্থার বিষয়ে চারটি নতুন শ্রম কোড লাগু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানেই চার দিনের কর্ম সপ্তাহের কথা বলা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, কাজের দিন কমালেও, কাজের সময় কমাতে চায় না সরকার। শ্রম মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে, যদি চার দিনের কর্মসপ্তাহের প্রস্তাব আনা হয়, তাহলে দিন প্রতি ১২ ঘন্টা করে কাজ করতে হবে। ফলে, সপ্তাহে আগের মতোই ৪৮ ঘন্টা করেই কাজ করতে হবে।
তবে, কর্মসপ্তাহ বাড়ানোটাই শতাব্দী প্রাচীন কাজের প্রথাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ, এমনটা মনে করছে না শিল্প সংস্থাগুলি। বিকল্প পন্থা হিসাবে বলা হচ্ছে সবেতন ছুটির সময় বাড়ানো। কিংবা, প্রতিদিন তাঁরা কখন কাজ শুরু করবেন এবং শেষ করবেন, সেই বিষয়ে কর্মীদের আরও নমনীয়তা দেওয়া।