নয়া দিল্লি: সিলিকন হাইওয়ে ধরে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর যাত্রাটা বেশ থমকে থমকেই শুরু হয়েছিল। অবশেষে সেই যাত্রায় ভারত অতিক্রম করেছে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মোদী সরকার শুরু করেছিল ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন। এই প্রকল্পের অধীনে প্রথম পর্যায়ে, ৭৬,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের এক তহবিল অনুমোদন করা হয়েছিল। এই প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। সরকারি উৎসাহের জেরে, তিন বছরেরও কম সময়ে ভারত পাঁচটি বড়মাপের সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি চিপ প্যাকেজিং প্ল্যান্ট এবং একটি চিপ ফ্যাব্রিকেশন ইউনিট। ২০২৫ থেকে২০২৭ সালের মধ্যে এই পাঁচটি প্রকল্পই কাজ শুরু করে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেমিকন্ডাক্টর মিশনের প্রথম পর্যায় সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, শিল্প বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। শীঘ্রই তাও চালু হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পর্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে বিশ্বর অন্যান্য নেতৃস্থানীয় দেশ ও সংস্থাদের সঙ্গে অংশীদারী স্থাপন, রাসায়নিক ও গ্যাসের মতো কাঁচামাল সংগ্রহের মতো বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলা এবং ক্রমবর্ধমান এই শিল্পের জন্য দক্ষ প্রতিভা বিকাশের উপর জোর দেওয়া হবে। ।
মার্কিন সংস্থা, মাইক্রনকে, সরকার ২৭৫ কোটি মার্কিন জলারের অ্যাসেম্বলি, টেস্টিং, মার্কিং এবং প্যাকেজিং ইউনিট স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার পরই, টাটা গোষ্ঠী,মুরুগাপ্পা গোষ্ঠী এবং কেনস সেমিকনের মতো দেশিয় সংস্থাগুলিও সেমিকন্টাক্টর উত্পাদন এবং অ্যাসেম্বলি কারখানা গড়ার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এর ফলে, গোটা বিশ্বর সেমিকন্ডাক্টর সংস্থাগুলির কাছে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা গিয়েছে বলে মনে করেন ‘ভারত সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশনে’র চেয়ারম্যান, পঙ্কজ মহিন্দ্রু। তিনি বলেছন, “আমরা সেমিকন্ডাক্টর উত্পাদনের জন্য ভিত স্থাপন করে ফেলেছি। দুর্দান্ত শুরু করেছি আমরা। তবে এটা একটি দীর্ঘ যাত্রার সূচনা মাত্র।”
ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা সিইও, নিবৃত্তি রাইয়ের মতে, আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গড়তে পারলে, ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার আর বাধা হবে না এবং প্রযুক্তির স্থানান্তরও সহজ হবে। তিনি বলেছেন, “এমইএমএস এবং সেন্সরগুলির মতো বিশেষ প্রযুক্তিগুলির জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে উদ্ভাবন আরও বাড়বে। ভারত শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে ব্যবসা বাড়াতে চাইছে না, সাশ্রয়ী এবং শক্তিশালী ইকোসিস্টেম তৈরির কথা ভাবছে।” রাসায়নিক ও গ্যাসের মতো কাঁচামালের যে সকল স্থানীয় সরবরাহকারীরা আছে, তাদের বাকি বিশ্বর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার জন্য সক্ষম করতে পর্যাপ্ত মূলধন সহায়তার উপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
পঙ্কজ মহিন্দ্রুও, ছোট সংস্থা এবং স্টার্টআপগুলিকে বিশ্ব-প্রতিযোগিতার নামার মতো সক্ষম করে তুলতে সরাসরি সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। ভারতের নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন ক্ষমতা বিকাশের জন্য ইডিএ সরঞ্জামগুলিতে বিনিয়োগ, আইপি লাইব্রেরি, এবং আরএনডি ইনসেনটিভগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, সামগ্রিকভাবে একটি সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে গেলে, উৎপাদন, সাব-অ্যাসেম্বলি এবং কম্পোনেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি-সহ পুরো সাপ্লাই চেইনকেও উন্নততর করে তুলতে হবে। যেমন, আনুষঙ্গিক কারখানাগুলি তাদের কতটা সমর্থন দিতে পারছে, তার উপরই গুজরাটের সানন্দ-ধলেরা বেল্টের নতুন মেগা-কারখানাগুলির সাফল্য নির্ভর করবে বলে মনে করেন তিনি। সেমিকন্ডাক্টর মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ধরনের জন্য সমর্থন হবে সরকারকে।
এলঅ্যান্ডটি সেমিকন্ডাক্টরের সিইও, সন্দীপ কুমারের মতে, শুধুমাত্র উচ্চ-মূল্যের সেমিকন্ডাক্টর পণ্য তৈরির দিকে না তাকিয়ে, ভারতের উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। এনভিডিয়া এবং ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে গেলে, শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনই নয়, শক্তিশালী পরিকাঠামো, বিক্রয় এবং ব্র্যান্ডিংও প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন শিল্প বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক সেমিকন্ডাক্টর সংস্থা, সেমি (SEMI)-র সভাপতি, অজিত মনোচা জানিয়েছেন, ভারতে বিশাল ইংরেজিভাষী জনসংখ্যা রয়েছে। তাই সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং দক্ষতা অর্জন করাটা তাদের পক্ষে সহজ হবে।