পুণে: বর্তমানে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উল্কার গতিতে উত্থান ঘটছে ভারতের। আর ভারতের প্রযুক্তিগত বিবর্তনের ইতিহাসে একটি বড় নাম হল ‘এক’ (Eka)। টাটা গোষ্ঠীর তৈরি সুপার কম্পিউটার। বর্তমানে ভারতের হাতে ১৮টি সুপার কম্পিউটার রয়েছে। তবে, এক-ই ছিল ভারতের প্রথম সুপার কম্পিউটার। টাটাদের তৈরি এই সুপার কম্পিউটার দেশের প্রযুক্তি খাতে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক তৈরি করেছিল তো বটেই, একটা সময় বিশ্বের সেরা দশটি দ্রুততম সুপার কম্পিউটারের তালিকাতেও স্থান করে নিয়েছিল। এস রামাদোরাইয়ের নেতৃত্বে, ২০০৬ সালে এই বড় পদক্ষেপ করেছিল টাটা গোষ্ঠী। ভারতের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক বিশাল শূন্যতা পূরণ করেছিল এই সুপার কম্পিউটার।
২০০০-এর শূন্য দশকের গোড়ার দিকে, সুপারকম্পিউটিং সম্পর্কে আগ্রহী দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের নিয়োগ করেছিল টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস। তাঁদের মধ্যে আইআইটি বোম্বের গবেষক ড. সুনীল শেরলেকর, বিখ্যাত গণিতবিদ ড. নরেন্দ্র কারমারকর, এস রামাদোরাইরা ছিলেন। প্রাথমিকভাবে এই তিন মাথা একসঙ্গে বসে আলোচনা করে একটি সুপার কম্পিউটার তৈরির ধারণা তৈরি করেছিলেন। এর কী সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে, তা বুঝে তাঁরা রতন টাটার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। রতন টাটার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছিলেন ড. শেরলেকর। জানা যায়, সুপার কম্পিউটার তৈরির কথা শুনেই উত্তেজনায় ফুটতে শুরু করেছিলেন রতন টাটা। তবে, তিনি বিশদ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরির উপর জোর দিয়েছিলেন।
এরপরই, ২০০৭ সালের নভেম্বরের মধ্যে বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। এর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল। তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ১৮০ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ পেতে রাজস্ব আসার তিনটি পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছিল এই পরিকল্পনায়। ২০০৬-এর মার্চে, পরিকল্পনাটিতে অনুমোদন দিয়েছিল টাটা সন্স। এরপর, পুনেতে কম্পিউটেশনাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। মেধাবী ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দলকে সেই প্রকল্পে নিয়োগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্প কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, সেই সম্পর্কে টাটা গোষ্ঠী কেন, গোটা দেশের কেউ নিশ্চিত ছিলেন না। তাই, এক দারুণ সাহসী পদক্ষেপ করেছিল টাটারা।
সুপারকম্পিউটারটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘এক’। প্রাথমিকভাবে একটি ১-পেটাফ্লপের সুপার কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে, পরে পরিকল্পনা বদলে একটি ১০০-টেরাফ্লপের সুপার কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। ২০০৭-এর ৩১ অক্টোবর, ১১৮ টেরাফ্লপের গতিতে পৌঁছেছিল এক। ফলে, ১০০-টেরাফ্লপের বেঞ্চমার্ককে অতিক্রম করে বিশ্বের সেরা সুপার কম্পিউটারগুলির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল ভারতের প্রথম সুপারকম্পিউটারটি। ২০০৭-এর ৬ নভেম্বর, সুপারকম্পিউটারগুলির র্যাঙ্কিং ঘোষণা করা হয়েছিল। চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিল এক সুপার কম্পিউটার।
অবিলম্বে কাজে লাগানো শুরু হয়েছিল এক। চন্দ্রযান অভিযানে, এই সুপারকম্পিউটারের বড় অবদান ছিল। পরবর্তী সময়ে আরও বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেছে এই সুপারকম্পিউটার। পরবর্তীকালে, পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হয়েছে এই সুপারকম্পিউটারকে। তবে, এক-এর উত্তরাধিকার ভারতের পরবর্তী সুপারকম্পিউটারগুলি তৈরির অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)