কলকাতা: বছরে সাড়ে আট লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয় করেন, ভারতে এমন মানুষের সংখ্যা আগামী তিন বছরেই ১০ কোটি ছুঁয়ে ফেলবে। বছরে সাড়ে আট লক্ষ টাকা আয় মানে ভারতের নিরিখে উচ্চবিত্ত শ্রেণীতে ঢুকে পড়বেন এই ১০ কোটি মানুষ। গত মাসে মার্কিন সংস্থা গোল্ডম্যান শ্যাক্সের রিপোর্টে এমন একটা পূর্বাভাস ছিল। এবার ভারতের উপদেষ্টা সংস্থা ক্রিসিলের সমীক্ষাতেও একই তথ্য উঠে এল। ক্রিসিলের তালিকা অনুযায়ী, ভারতে যাঁরা বছরে সাড়ে আট লক্ষ টাকা রোজগার করেন, তারাই উচ্চবিত্ত। বিদেশি উপদেষ্টা সংস্থাগুলিও মোটামুটি সেটাই মেনে চলে। আয়কর দফতরের তথ্য খুঁটিয়ে দেখলে এই পূর্বাভাস নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই থাকে না।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কমবেশি আড়াই কোটি মানুষ বছরে পাঁচ লাখ টাকা তার বেশি আয় করতেন। আয়কর রিটার্নের পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে। এই সংখ্যাটা আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হবে। গত এক দশকের তথ্য খুঁটিয়ে দেখলে সেটাই সেটাই স্পষ্ট হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বলি, ২০১২ সালে বছরে ৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয় করতেন ৩৮ লক্ষ মানুষ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, ২০১২ সালে ভারতে বছরে ৫ লক্ষ বা তার বেশি টাকা আয় করতেন মাত্র ৩৮ লক্ষ মানুষ। কোভিড কাল ধরে দশ বছরে সেটা বেড়ে হয়েছে আড়াই কোটি। আগামী ৫ বছরে তাই ১০ লক্ষ মানুষ সাড়ে আট লক্ষ টাকা আয়ের গন্ডিতে ঢুকে পড়লে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং সেটাই স্বাভাবিক। যে শ্রেণীর কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা সব অর্থেই মধ্যবিত্ত। আর মধ্যবিত্তদের একটি অংশের আয় বাড়ছে, এটাও ঘটনা। মধ্যবিত্তদের আরও একটা সুবিধা – সংসারে সদস্য কম। তাই খরচের বহরও কম। তবে? এই তবেটাই হল আসল কথা। তবে এতকিছুর পরেও মধ্যবিত্তদের পকেট গড়ের মাঠ কেন? মাসের ২০ তারিখের পরই টাকার টানাটানি শুরু হয়ে যায় কেন? ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে পার্সোনাল লোন নেওয়ার কথা ভাবতে হয় কেন? ভাবতে হয়, কারণ সংসার খরচ বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাড়ছে সে তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু কতটা বাড়ছে জানি কী?
ইন্ডিয়া হাউসহোল্ড এক্সপেন্স ইনডেক্স বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ – এই পাঁচ অর্থবর্ষে সংসার খরচ বেড়েছে বছরে গড়ে ২৩ হাজার টাকা। মাসে কমবেশি ১ হাজার ৯০০ টাকা। এটা শুধুই সংসার খরচ। এর মধ্যে চিকিত্সা, বীমার মতো প্রয়োজনীয় খরচ ধরা নিই। এবার প্রশ্ন হল, এই সংসার খরচ বাড়ছে কেন? মূল্যবৃদ্ধি একটা বিষয় তো অবশ্যই। তবে সব দোষ মূল্যবৃদ্ধির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। সমীক্ষায় স্পষ্ট যে, প্রয়োজনে, অনেক সময় প্রয়োজন না থাকলেও কেনাকাটা করছেন মানুষজন। বিশেষত নামীদামী ব্র্যান্ডের জিনিস, ভাল হোটেলে খাওয়াদাওয়া, পোশাকআশাকের পিছনে অনেক বেশি খরচ করছেন মধ্যবিত্তরা। যাকে বলে হাত খুলে খরচ। ভাগ্যিস করছেন, কারণ মধ্যবিত্তদের হাত ধরেই চাঙ্গা থাকছে দেশের অর্থনীতি, চাঙ্গা থাকছে বাজার।