নয়া দিল্লি: যত দিন যাচ্ছে, ততই বিদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের ভারতে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি পাল্টে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত দেখা যেত, আরব উপসাগরীয় দেশগুলিতে বসবাসরত ভারতীয়রাই দেশে বেশি টাকা পাঠাতেন। কিন্তু, ক্রমে এই প্রবণতা বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে, বিদেশে বসবসারত ভারতীয়দের পাঠানো অর্থের একটা বড় অংশ আসছে আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলি থেকে। তবে, ক্রমে বিদেশ থেকে ভারতীয়দের টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমছে।
২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে দেখা গিয়েছিল, বিদেশ থেকে ভারতীয়দের দেশে পাঠানো অর্থের ৫০ শতাংশই এসেছে আরব উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে, বিদেশ থেকে ভারতীয়রা দেশে মোট ৮৯০০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে এর মাত্র ৩০ শতাংশ এসেছে আরব উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে। এর কারণ হল, বর্তমানে আমেরিকা ও অন্যান্য উন্নত দেশগুলি থেকে সেইসব দেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন।
আরব উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ভারতীয়দের দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ কম হওয়ার প্রভাব পড়েছে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের অর্থনীতিতেও। উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে ভারতীয়রা যে অর্থ দেশে পাঠাতেন তার সিংহভাগ পেত কেরল, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটক রাজ্য। এই রাজ্যগুলির অর্থনীতিতে বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর প্রবণতায় এই পরিবর্তন স্পষ্ট ধরা পড়েছে। আসলে এই রাজ্যগুলি থেকে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ জীবিকার তাগিদে আরব উপসাগরীয় দেশগুলিতে যান, তাঁরা প্রায় সকলেই অদক্ষ শ্রমিক। কিন্তু যেসব ভারতীয়রা আমেরিকা এবং অন্যান্য উন্নত দেশে পাড়ি দেন, তারা বেশিরভাগই দক্ষ এবং উচ্চ শিক্ষিত। সাম্প্রতিক সময়ে, আবার বিদেশে বসবাসকারী সুশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই কারণেই বদলেছে বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ধরন।
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৩ বছরে অন্তত ৩.৯ লক্ষ মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়ে পাকাপাকিভাবে বিদেশে বসবাস করা শুরু করেছেন। এই ৩.৯ লক্ষের মধ্যে ১.৭ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। তবে, যদি এই ভাবে আরও বেশি ভারতীয় বিদেশে বসতি স্থাপন করা শুরু করেন, সেই ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমতে থাকবে। কারণ বিদেশে পাকাপাকিভাবে বসবাস করলে দেশে টাকা পাঠানোর আর কোনও প্রয়োজন হবে না। ফলে অদূর ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে ভারতীয়রা অনেক কম টাকা পাঠাবেন।