নয়া দিল্লি : ব্রিটেনকে পিছনে ফেলে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে এল ভারত। ভারত ২০২১ সালের শেষ তিন মাসের হিসেবে ব্রিটেনকে ছাপিয়ে পঞ্চম দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। এই হিসেবটি করা হয়েছে মার্কিন ডলারের উপর ভিত্তি করে। ইন্টারন্যাশনাল মনেটরি ফান্ডের জিডিপি পরিসংখ্যানের হিসেবে ভারত প্রথম ত্রৈমাসিকেও এগিয়ে রয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতির জন্য এক এক বিশাল সাফল্য।
উল্লেখ্য, ভারতীয় অর্থনীতি এই বছর সাত শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে আমেরিকা, চীন, জাপান ও জার্মানির পরেই পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত।
উল্লেখ্য আজ জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ভারত হল সবচেয়ে দ্রুত অর্থনীতির দেশ। স্মার্টফোন ডেটা কনজিউমারের দিক থেকে আজ ভারত বিশ্বের এক নম্বরে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিরিখে ভারত রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে। আজ ভারত গ্লোবাল রিটেল ইনডেক্সে দ্বিতীয় স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উপভোক্তা বাজার রয়েছে ভারতে। ‘ইনোভেশন ইনডেক্সে’ও ভারতের র্যাঙ্কিং আগের থেকে বেড়েছে।
এ বছর ভারত ৬৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০ লাখ কোটি টাকা। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ভারত ৪১৮ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩১ লাখ কোটি টাকার মার্চেন্ডাইজ় রফতানির নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। গত আট বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কোম্পানি তৈরি হয়েছে ভারতে এবং প্রতি মাসে নতুন কোম্পানি যুক্ত হচ্ছে। গত আট বছরে তৈরি করা এই মাইলফলকগুলির অর্থনীতিতে ব্রিটেনকে ছাপিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে আসার পিছনে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
২০১৪ সালের পর প্রথম ১০ হাজার স্টার্ট আপের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে ভারতের সময় লেগেছে প্রায় ৮০০ দিন। আর এখনকার পরিস্থিতিতে প্রতি ১০ হাজার নতুন স্টার্ট-আপের জন্য ২০০ দিনেরও কম সময় লাগছে। গত আট বছরে আমাদের দেশ কয়েক’শো স্টার্ট-আপ থেকে ৭০ হাজার স্টার্ট আপে উঠে আসার সাক্ষী থেকেছে। এই স্টার্ট-আপগুলি শুধুমাত্র দেশের বড় শহরগুলি নয়, ছোট শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারত সাম্প্রতিক কালে যে গতিতে এগোচ্ছে তার অন্যতম একটি উদাহরণ হল ডিজিটাল দুনিয়ায় আমূল বিপ্লব। ২০১৪ সালে আমাদের দেশে মাত্র সাড়ে ছয় কোটি ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ছিল। আজ তাদের সংখ্যা ৭৮ কোটি ছাড়িয়েছে। ২০১৪ সালে এক জিবি ডেটার দাম ছিল প্রায় ২০০ টাকা। আজ তা মাত্র ১১-১২ টাকায় নেমে এসেছে। ২০১৪ সালে, দেশে ১১ লাখ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ছিল। এখন দেশে অপটিক্যাল ফাইবার ২৮ লাখ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত।
ভারতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় 2 লক্ষ কোটি টাকার একটি PLI স্কিম শুরু করেছে। গত সাত-আট বছরে, ভারত সরকার DBT (ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার) এর মাধ্যমে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে। দেশে এই সাত-আট বছরের মধ্যে DBT-র মাধ্যমে যে পরিমাণ পাঠানো হয়েছে, তার অঙ্ক ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
দেশে নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে ঐক্যমতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে নতুন স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়নের কাজও চলছে। আজ, ভারতে রেকর্ড সংখ্যক নতুন বিমানবন্দর নির্মিত হচ্ছে। ছোট শহরগুলিকে বিমান রুটের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। ভারতে মেট্রো সংযোগ বাড়ানোর জন্য যে পরিমাণ কাজ করা হচ্ছে, তা আগে কখনও হয়নি। আজ ভারতে রেকর্ড সংখ্যক নতুন মোবাইল টাওয়ার বসানো হচ্ছে। ৫জি পরিষেবা দেশের দরজায় কড়া নাড়ছে। সব মিলিয়ে ভারত এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সাক্ষী থাকছে।