‘আমার চাকরি সুরক্ষিত?’ বেসরকারি ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করলে এ প্রশ্ন আপনার মনে উদয় হতে বাধ্য। আন্তর্জাতিক তথ্য বলছে, শুধু অগস্ট মাসে কর্মছাঁটাইয়ের (Lay Offs) হার বছরের গত ৭ মাসের পরিসংখ্যানকে হার মানাবে! অ্যাপেল (Apple), ইন্টেল (Intel), সিসকো (Cisco) বা আইবিএম-এর (IBM) টেক জায়ান্ট যে হারে কর্মী কমিয়ে খরচ বাঁচানোর দিকে এগোচ্ছে, তাতে চিন্তায় বিশ্বের আইটি কর্মীরা (IT Professionals)।
আপনার কাজের গুণগতমানই কি আপনার ছাঁটাইয়ের কারণ?
বিশ্বায়নের যুগে কর্মী ছাঁটাইয়ের পিছনে নানা কারণ থাকতে পারে। অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির অভাব বা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর চাহিদা কমে যাওয়ার থেকে বড় কারণ হিসাবে উঠে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বাড়বাড়ন্ত! যদিও ২০২৪ অর্থবর্ষ-এর প্রথম ৩ মাসে অ্যাপলের আয় গত বছরের একই কোয়ার্টারের তুলনায় প্রায় ৫% বেশি―প্রায় ৮,৫৮০ কোটি মার্কিন ডলার! IBM-এর ক্ষেত্রেও রোজগারটা নেহাত কম নয়, প্রায় ১৫৮০ কোটি ডলার। সূত্রের খবর, Intel-এর মতো বহুজাতিক সংস্থাও বছরে ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার বাঁচাতে ১৫,০০০ মানুষকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেওয়ার ভাবনায়। ফলত এটা ভাবার সত্যিই কোনও কারণ নেই যে, সংস্থার রোজগার ভাল হলেই আপনার চাকরি ১০০% সুরক্ষিত!
ভারতীয় কর্মসংস্কৃতির খোলনলচে সম্পূর্ণ বদলে যাবে?
ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে মূলত ৬টি সংস্থার নাম উঠে আসে সর্বাগ্রে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে Tata, Relaince, Adani গোষ্ঠীর মতো সংস্থাদের লাভ বেড়েছে ২২.৩%, মূলধন বেড়েছে প্রায় ৪৩.৮%! অন্যদিকে কর্মীনিয়োগের হার মাত্র -০.২%। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, MNC-গুলির ‘ডাউনসাইজিং’ (Downsizing) করার এই প্রবণতা আদতে কর্মসংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রবল ক্ষতিকারক। তবে RBI-এর নতুন নিয়মনীতি, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধির আরও কড়াকড়ি যে কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে নিয়োগ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে, তাও বলছে অর্থনীতি ওয়াকিবহাল মহল। তবে এই অবস্থাও বেশিদিন চলবে না বলেই মত বাজার-অর্থনীতিকদের। নিয়োগব্যবস্থা ও কর্মসংস্কৃতির খোলনলচে যে বড় বদলের পথে, আপাতত তারই আভাস পাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা।
দৈত্যাকার রোজগার, তাও এত ছাঁটাই―কেন?
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, কয়েকশো কোটির আয় সত্ত্বেও Amazon-এর Prime Video বিভাগ থেকে ছাঁটাই হতে পারে কয়েক হাজার কর্মী। এ বছরের শুরুতে একই পথে হেঁটেছিল Google-এর মতো সংস্থাও। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের সাফ বক্তব্য, এখনই বোঝার সময়, সাবধান হওয়ার সময়! আয় প্রচুর হলেও মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুত হারে, ফলত অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি অনেক ক্ষেত্রেই বহুজাতিক সংস্থাগুলোর (MNCs) কাছে খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। অন্যদিকে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বেড়ে চলেছে AI-এর ব্যবহার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চাকরির দুয়ার খুলে দিচ্ছে, পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রের কর্মীর যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তুলে দিচ্ছে প্রশ্ন!
কীভাবে বাঁচাবেন আপনার বেসরকারি চাকরি?
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকারি চাকরির গুরুত্ব এখনও বেশি, এর কারণ একটাই―নিরাপত্তা। আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা এখনও সরকারি চাকরি যতটা প্রদান করতে সক্ষম, বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো ততটাই কম। IT বা অন্যান্য যেকোনও ক্ষেত্রে বেসরকারি কর্মী হলে আপনাকে একটা বিষয় মাথা রাখতে হবে, আপনার চাকরি থাকবে না যাবে―তা আপনার হাতে নেই। তবে যথাযথ ব্যবস্থা আগাম নিলে আখেরে আপনারই লাভ। কীভাবে ধরে রাখবেন চাকরি? প্রতিদিনের প্রতিযোগিতায় কীভাবে থাকবেন এগিয়ে?
চাকরি বাঁচান! কী কী জরুরি?
আজকের সদা পরিবর্তনশীল যুগে সবসময় নিজেকে Updated রাখাটা জরুরি, তা আপনি তথ্যপ্রযুক্তির কর্মী হোন বা সাংবাদিক। আর এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে আরও বেশ কিছু তথ্য…
■ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হলে AI নিয়ে নাড়াচাড়া করুন। অন্য যেকোনও চাকরি করলেও একই কথা। বহু কোর্স করা যায় কাজ করার পাশাপাশি, সেগুলো করে ফেলুন। আপনার কাজের পরিসর বাড়িয়ে ফেলুন। বাজারের চাহিদা বুঝে ঠিক করুন―কী পড়বেন, কী পড়বেন না এবং কী করবেন, কী করবেন না।
■ নিজের ‘Skill’ বাড়িয়ে ফেলুন জলদি। নতুন ভাষা শেখা হোক বা AI Prompt―বাজারে চাহিদা আছে বা বাড়তে পারে আগামী ২ বছরের মধ্যে, এমন বিষয় নোট করুন সর্বদা। যেসকল বিষয়ে আপনার ভুল হয় বরাবর, শুধরে নিন দ্রুত। ভাবুন, আপনার কর্মক্ষমতাকে সুদৃঢ় করবে আর কোন কোন বিষয়ের জ্ঞান?
■ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), তথ্যবিজ্ঞান (Data Science) বা ক্লাউড প্রযুক্তির (Cloud Technologies) ক্ষেত্র বাড়ছে ক্রমশ। অতএব, এমন ধরনের বিষয়ে পড়াশোনা করুন প্রতিনিয়ত। কর্পোরেট জগতে টিকে থাকতে গেলে হোন জলের মতো, যেকোনও পাত্রে অনায়াসে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করুন! নাঃ, জ্ঞান নয়। এমন উপদেশ দিচ্ছেন আজকের সমাজবিজ্ঞানী এবং বাজার বিশেষজ্ঞরাই।