মুম্বই: ষষ্ঠী-সপ্তমীর সন্ধ্যায় মহীরুহ পতন। প্রয়াত ভারতের শিল্পবাণিজ্য জগতের সবথেকে প্রভাবশালী নেতা রতন টাটা। টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাসের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। টাটা গোষ্ঠীকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রতন টাটা। নুন থেকে মোটরগাড়ি, বিবিধ ক্ষেত্রে পৌঁছে দিয়েছেন টাটা ব্র্যান্ডকে। টাটা মানেই ভরসা, আস্থার এই জায়গায় তিনি পৌঁছে দিয়েছেন পারিবারিক ব্যবসাকে। গড়ে তুলেছেন ৩,৮০০ কোটি টাকার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যই নয়, জনহিতৈষী কাজের জন্যও তাঁর পরিচিতি বিশ্বজোড়া। এমন এক বহুমাত্রিক মানুষের উত্তরাধিকার বহন করা সহজ কথা নয়। তবে, সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। রতন টাটার জন্যও থেমে থাকবে না। রতন টাটার প্রয়াণের পর, এখন সকলের চোখ টাটা গোষ্ঠীর পরবর্তী প্রজন্মের দিকে। কে বহন করবেন রতন টাটার উত্তরাধিকার? টাটা গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দেবেন কে?
উঠে আসছে তিনটি নাম – লিয়া টাটা, মায়া টাটা এবং নেভিল টাটা। টাটা গোষ্ঠীর পরবর্তী প্রজন্মের এই তিন নেতাই টাটা গোষ্ঠীর মধ্যে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন। তাঁদের উপর ভরসা করেছিলেন খোদ রতন টাটাও। স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং স্যার রতন টাটা ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসেবে এই তিনজনকেই নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিলেন রতন টাটা। টাটা পরিবারের তরুণ প্রজন্মের এই তিন প্রতিনিধি, টাটা গোষ্ঠীর পাঁচটি জনহিতকর সত্ত্বার বোর্ড সদস্য। কারা এই লিয়া, মায়া এবং নেভিল টাটা? রতন টাটা বিয়ে করেননি, নিঃসন্তন। এই তিনজন হলেন তাঁর সৎ ভাই, নোয়েল টাটার তিন সন্তান। টাটা গোষ্ঠী পরিচালিত বিভিন্ন সংস্থায় ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁরা। এই তিনজনের মধ্যে কোনও একজনই রতন টাটার উত্তরাধিকারকে বহন করে নিয়ে যাবেন, এমনটাই মনে করছে ব্যবসায়িক জগত। দেখে নেওয়া যাক, এই তিনজনের কার কী যোগ্যতা, এখন তাঁরা কোন ভূমিকায় আছেন –
নোয়েল টাটার বড় মেয়ে হলেন লিয়া টাটা। তিনি স্পেনের মাদ্রিদের আইই বিজনেস স্কুল থেকে মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। হসপিটালিটি বা আতিথেয়তা ক্ষেত্রে টাটা গোষ্ঠীর উপস্থিতি বাড়াতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন লিয়া। ২০০৬ সালে তিনি ‘তাজ হোটেল রিসর্টস এবং প্যালেসেস’-এ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেই সংস্থায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে ‘তাজ গ্রুপ অব হোটেলস’-এর কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করেন তিনি।
নোয়েল টাটার কনিষ্ঠতম সন্তান হলেন নেভিল টাটা। তিনি বেইস বিজনেস স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে, তিনি রিটেইল চেইন, ‘ট্রেন্ট লিমিটেড’-এর জন্য হাইপারলোকাল কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। এখানেই তিনি তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ওয়েস্টসাইড, স্টার বাজার, ল্যান্ডমার্ক এবং জুডিও স্টোরের মতো ব্র্য়ান্ডগুলি চলে এই ট্রেন্ট লিমিটেড সংস্থার অধীনে। মানসী কির্লোস্করকে বিয়ে করেছেন তিনি। এই কির্লোস্কর গোষ্ঠীর হাতে টয়োটা সংস্থার একটা বড় শেয়ার রয়েছে। টাটা গোষ্ঠীর ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নেতা হিসাবে নেভিলকেও ধরা হচ্ছে।
তিনজনের মধ্যে রতন টাটার উত্তরাধিকার বহন করার বিষয়ে, সবথেকে এগিয়ে রয়েছেন মায়া টাটা। নোয়েল টাটার ছোট মেয়ে। ব্রিটেনের বেইস বিজনেস স্কুল এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই টাটা গোষ্ঠীতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন মায়া। টাটা ক্যাপিটালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, টাটা অপর্চুনিটিস ফান্ডে পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। টিসিএফ বন্ধ হওয়ার পর, তিনি টাটা ডিজিটালে চলে এসেছেন। টাটা অপারচুনিটিস ফান্ড এবং টাটা ডিজিটাল – দুই সংস্থার প্রসারণেই তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তবে, তাঁর সবথেকে বড় সাফল্য হল টাটা নিউ অ্যাপ চালু করা। এই অ্যাপ, টাটা গোষ্ঠীর সমস্ত অ্যাপগুলিকে এক ছাতার তলায় এনেছে। সেখানেই তিনি তাঁর শক্তিশালী নেতৃত্বের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মায়ার মা, আলু মিস্ত্রি আবার আরেক ধনকুবের শিল্পপতি পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে। টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, প্রয়াত সাইরাস মিস্ত্রি ছিলেন সম্পর্কে তাঁর মামা।
তবে, রতন টাটার উত্তরাধিকার বহন করতে গেলে, শুধু তো ব্যবসায়িক সাফল্য পেলেই চলবে না, সেই সঙ্গে জয় করতে হবে আপামর ভারতবাসীর মনও। একের পর এক জনহিতকর কাজের মধ্য দিয়ে যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন রতন টাটা। লিয়া, নেভিল না মায়া – কে সেটা করতে পারেন, সেটাই এখন দেখার।