বর্তমানে বিনিয়োগের একটি উল্লেখ্যযোগ্য ক্ষেত্র হল মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund)। এদিকে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির আশঙ্কা করে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা থেকে দূরে সরে যান। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের (Fixed Deposits) উপরই ভরসা রাখেন তাঁরা। গত অর্থবর্ষে দফায় দফায় রেপো রেট বৃদ্ধি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। তারপর ব্যাঙ্কগুলিও নিজেদের স্থায়ী আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে। ফলে অতিরিক্ত মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারী। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনটা বেশি ভাল, স্থায়ী আমানত নাকি মিউচুয়াল ফান্ড? বিস্তারিত জেনে নিন এই প্রতিবেদন থেকে।
রিটার্ন:
স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করলে তা থেকে রিটার্ন নিশ্চিত। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও ছবিটা একইরকম। ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা ম্যাচুরিটির পর কত রিটার্ন পাবেন তা আগে থেকেই জানতে পারেন। এবং একবার FD-তে বিনিয়োগ করলে সেই ডিপোজিটের জন্য সুদের হার অরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদের হার পূর্ব নির্দিষ্ট। রিটার্নও নিশ্চিত।
অন্যদিকে, নিশ্চিত রিটার্নের কোনও গ্য়ারান্টি নেই মিউচুয়াল ফান্ডে। মিউচুয়াল ফান্ড থেকে রিটার্নের বিষয়টি বাজারের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ বাজারের উপরের নির্ভর করে কম বেশি হতে পারে রিটার্ন। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ফিক্সড ডিপোজিটের পরিবর্তে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদিকে স্বল্প মেয়াদের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইলে ভাল বিকল্প হতে পারে ডেট মিউচুয়াল ফান্ডও।
ঝুঁকি:
ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে কোনওপ্রকার ঝুঁকিই থাকে না। একেবারে শূন্য বলা চলে। আপনার স্থায়ী আমানতের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সুদ সমেত আসল টাকা আপনি ফেরত পাবেন। এমনকী ব্য়াঙ্ক উঠে গেলেও সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা আপনি পাবেন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকি সবসময় বেশি। যেহেতু মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্ন বাজারের উপরে নির্ভরশীল তাই এখানে রিটার্নের বিষয়ে কোনও গ্যারান্টি নেই। তবে যেসব বিনিয়োগকারীরা বাজার সম্বন্ধে সম্যক খবর ও জ্ঞান রাখেন তাঁদের ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ অতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
কর:
বিনিয়োগকারী ব্যক্তির আয়করের স্ল্যাবের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ফিক্সড ডিপোজিট করযোগ্য হয়। কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদী ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন ৫ বছর বা তার বেশি লক ইন পিরিয়ডের স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ৮০ সি ধারার অধীনে কর ছাড় পাবেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ডের রিটার্নের ক্ষেত্রেও কর দিতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
লিকুইডিটি:
মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে ফিক্সড ডিপোজিট থেকে কোনওভাবে টাকা তোলা যায় না। যদি কেউ মেয়াদ পূরণের আগেই টাকা তুলে নিতে চান সেক্ষেত্রে ভেঙে দিতে হবে সেই আমানত। এর জন্য বিনিয়োগকারীদের দিতে হবে জরিমানাও। তবে মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা নেই। নিজের মন চাইলে এক ক্লিকেই মিউচুয়াল ফান্ড থেকে তুলতে পারেন টাকা। আর দু’ থেকে তিন দিনের মধ্যে সেই অর্থ বিনিয়োগাকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও জমা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কোনও জরিমানাও দিতে হয় না।