জামশেদপুর: ভারতীয় সমাজে অন্তর্বাস নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এখনও হয় না। মহিলাদের অন্তর্বাস নিয়ে তো আরোই ঢাক ঢাক গুড় গুড় রয়েছে। যেখানে ব্রা-প্যান্টি নিয়ে আলোচনাই প্রায় নিষিদ্ধ, সেখানে দোকানে গিয়ে নিজেদের পছন্দের অন্তর্বাস বেছে নেওয়াটা মহিলাদের পক্ষে কতটা দুষ্কর, তা কল্পনা করা কঠিন নয়। প্রায় গোপনে নিষিদ্ধ কাজ করার মতো করে অন্তর্বাস কিনতে বাধ্য হতেন ভারতীয় মহিলারা। নকশা, রঙ – ইত্যাদির মতো বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগই ছিল না। ভারতীয় মহিলাদের অন্তর্বাস কেনার এই অভিজ্ঞতা বদলে দিয়েছেন রিচা কর। মহিলাদের যেখানে অন্তর্বাস কিনতেই লজ্জা-সঙ্কোচের মোকাবিলা করতে হত, সেখানে এক মহিলা শিল্পপতি হয়ে গড়ে তুলেছিলেন অনলাইনে মহিলাদের অন্তর্বাস কেনার প্ল্যাটফর্ম, ‘জিভামে’। আর এই ব্যবসায় তিনি এতটাই সফল হয়েছেন, যে ২০২০ সালে জিভামে সংস্থাকে অধিগ্রহণ করেছে রিলায়েন্স রিটেইলস। বর্তমানে রিচা ৭৪৯ কোটি টাকার মালিক।
১৯৮০ সালের ১৭ জুলাই ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে জন্মেছিলেন রিচা। ২০০৭-এ তিনি নার্সি মনজি ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ থেকে ডিপ্লোমা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে তিনি তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করা শুরু করেছিলেন। স্পেন্সার্স এবং এসএপি রিটেইলস কনসালটেন্সির মতো সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি নিজস্ব উদ্যোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২০১১-য় তিনি চালু করেঝছিলেন অনলাইন অন্তর্বাস কেনার প্ল্যাটফর্ম জিভামে। এটিই ছিল, ভারতের প্রথম শুধুমাত্র অন্তর্বাস কেনার ইকমার্স সংস্থা। আর অন্তর্বাসের খুচরো ব্যবসার জগতকে পাল্টে দিয়েছে এই সংস্থা।
হিব্রু ভাষায় জিভামে কথার অর্থ ‘উজ্জ্বল আমি’। ভারতীয় মহিলারা যাতে তাঁদের মর্যাদা, গোপনীয়তা বজায় রেখে, নিশ্চিন্তে তাঁদের পছন্দের অন্তর্বাস কিনতে পারেন, প্রধানত সেটাই লক্ষ্য ছিল এই সংস্থার। সব মিলিয়ে বর্তমানে জিভামের অ্যাপে, ৫০০০-এর বেশি নকশার, ৫০টি ব্র্যান্ডের এবং ১০০টি বিবিধ আকারের অন্তর্বাসের মধ্য থেকে নিজের পছন্দটা বেছে নিতে পারেন মহিলারা। ভারতীয় মহিলাদের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী অন্তর্বাসের এই সংগ্রহ তৈরি করেছে রিচা করের সংস্থা। আর এর জেরেই অল্প সময়েই দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল তাঁর সংস্থা।
প্রাথমিকভাবে অন্তর্বাস তৈরি করলেও, পরবর্তী সময় জনপ্রিয়তা বাড়াতে, জিভামে মহিলাদের পোশাক, ফিটনেসের পোশাক, ঘুমের পোশাক তৈরি করাও শুরু করেছে। গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে দাম এবং গুণমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিচা। সংস্থার গ্রাহক পরিষেবাও যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। জিভামের অনলাইন পরিষেবা তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর, অফলাইন দোকান স্থাপনও করেছেন রিচা। ২০১৬ সালে, তিনি জিভামে স্টুডিও নামে এই স্টোরগুলি চালু করেছিলেন। ভারতের বেশ কয়েকটি টায়ার ২ এবং টায়ার ৩ শহরে জিভামের অফলাইন পরিষেবা রয়েছে।
২০১৭ সালে সংস্থার সিইও পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রিচা। তবে, তারপরও সংস্থার পরিচালন পর্ষদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। জিভামেতে তাঁর ইক্যুইটিও ধরে রেখেছেন। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৪৯ কোটি টাকা। ৪২ বছরের রিচা এখন আমেরিকার মিশিগান প্রদেশের নর্থভিলে থাকেন। উদ্যোগপতি হিসেবে রিচা কর-এর যাত্রা শুধুমাত্র ভারতীয় অন্তর্বাসের খুচরা বাজারে বৈপ্লবিক পরিবর্তনই আনেনি, বরং ভারতে অন্তর্বাস কেনাকাটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সমস্ত ট্যাবু নিষেধাজ্ঞাগুলিও ভেঙ্গে দিয়েছেন।