ভারতীয় শেয়ার বাজারে এখন বুল রান চলছে। অর্থাৎ, চাহিদা তৈরি হওয়ায় শেয়ারের দাম বাড়ছে ও রোজই নিফটি ও সেনসেক্স নিজেদের সর্বোচ্চ মার্কের রেকর্ড ভাঙছে। এই অবস্থায় সরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ারের দামও রোজই প্রায় নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ারের দাম সেভাবে বাড়ছে না। গত কয়েক বছরে যেখানে সরকারি ব্যাঙ্কের গড় প্রাইস টু বুক ভ্যালু ০.৮ থেকে বেড়ে ১.২ হয়েছে সেখানে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলোর গড় প্রাইস টু বুক ভ্যালু ২.৫ থেকে কমে ২.৩ হয়েছে। এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক ও কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের বর্তমান প্রাইস টু বুক ভ্যালু গত ৫ বছরের গড় প্রাইস টু বুক ভ্যালুর তুলনায় কমই রয়েছে।
“বড় সেক্টরগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সেক্টর একমাত্র সেক্টর, যেখানে গত ২-৩ বছরে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলোর ভ্যালুয়েশন কমেছে ও পিএসইউ ব্যাঙ্কগুলোর ভ্যালুয়েশন বেড়েছে”, বলছেন কোটাক ইন্সটিটিউশনাল ইক্যুইটিসের কর্তা সঞ্জীব প্রসাদ। বিশেষজ্ঞরা বলছে, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলো বর্তমানে এমন অবস্থানে রয়েছে যেখান থেকে তারা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারবে।
“সরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ার থেকে সব টাকা তোলার কথা আমরা বলছি না, তবে এখান থেকে কিছু টাকা সরিয়ে লার্জক্যাপ বেসরকারি ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করুন। তারা জানিয়েছে, শুধুমাত্র আমানতের অঙ্ক বাড়ানোর জন্য তারা সুদের মার্জিন কমাবে না। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ার মূল্য বাড়তে থাকবে। আর এখানে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কই বড় খেলোয়াড় হতে চলেছে। যদিও আমরা এইচডিএফসি, আইসিআইসিআই ও কোটাক, এই ৩টে ব্যাঙ্ক সম্পর্কেই আশাবাদী “, বলছেন দালাল স্ট্রিটের বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব বাসিন।
সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর এই গ্রোথের একটি মূল কারণ হচ্ছে তাদের ভ্যালুয়েশন। “এতদিন, সরকারি ব্যাঙ্কগুলোয় ঋণ ও আমানতের অনুপাত সাধারণত অনেক কম ছিল। যা তাদের ঋণ দেওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও কোভিডের আগে ও পরের মধ্যে সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে প্রাইভেট ব্যাঙ্কে জমা থাকা আমানতের অঙ্কের পার্থক্যও কমেছে”, বলছে আমেরিকার বিখ্যাত ব্যাঙ্কিং কোম্পানি জেফারিস।
আবার অন্যদিকে, সরকারি বেশ কিছু ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে অর্থনীতির সাপ্লাই ও ডিম্যান্ডের নীতিও কাজ করে। যেমন, পঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাঙ্ক, ইউসিও ব্যাঙ্ক ও সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় সরকারের অংশীদারত্ব ৯০ শতাংশেরও বেশি। বিদেশি বিনিয়োগকারী, মিউচিয়াল ফান্ড বাদ দিলে কেনা-বেচা করার জন্য পড়ে থাকে মাত্র ২ বা ৩ শতাংশ শেয়ার। ফলে সরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ারের চাহিদা থাকায় ও অনেক ক্ষেত্রে তার সাপ্লাই কম থাকায়ও শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও বলা যায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকাঠামো নির্মাণ ও কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর এই সমস্ত প্রকল্পে টাকা ঢালার জন্য বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলোর বদলে সরকারি ব্যাঙ্কের উপরই সরকারকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয়। ফলে সরকারি ব্যাঙ্ক সরকারকেই লোন দিচ্ছে যার ফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। ফলে, সরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ারের দামেও তার একটা প্রভাব পড়ছে।
বিঃ দ্রঃ – এটি একটি শেয়ার বাজার এবং বিনিয়োগ সম্পর্কিত শিক্ষামূলক প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কখনই বিনিয়োগে উৎসাহিত করা বা মুনাফা কামানোর সহজ উপায় খুঁজে দেওয়া নয়। শেয়ার বাজারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানোই এই প্রতিবেদনের অন্যতম লক্ষ্য। উল্লেখ্য, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিুপূর্ণ।