কলকাতা: এ এক অদ্ভুত দেশ। যেখানে আয়কর নেই। ভ্যাট বা জিএসটির বালাই নেই। সম্পত্তি কর দিতে হয় না। যে কেউ এক টাকাও কর না দিয়ে দিব্যি থাকতে পারেন। চাকরি, ব্যবসা করতে পারেন। এমনকি জিনিস কেনার সময়ও তাঁকে কোনও কর দিতে হবে না। দেশটার নাম ব্রুনেই। বিশ্বে যে দেশগুলোয় কর ভার সবচেয়ে কম, সেই তালিকায় বহু বছর ধরেই এক নম্বরে ব্রুনেই। তা হলে দেশটা চলে কী করে?
এদের মডেলটা একটু অন্যরকম। যে নীতি তৈরি করতে হয় করো। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করো। বড় সংস্থাগুলি এখানে ব্যবসা করলে অর্থনীতি এমনিতেই দৌড়বে। ব্রুনেইয়ে শুধু তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংস্থাগুলিকেই কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। আর কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয় মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে। কর্পোরেশন কিন্তু সেটা মানুষের থেকে আদায় করতে পারে না। কর্পোরেশনের অনেকগুলো কাজের মধ্যে একটা কাজ-নিজেদের সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে টাকা জোগাড় করা।
সংখ্যায় কম হলেও দুনিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেই কিন্তু আয় করের বালাই নেই। সৌদি আরব, আরব আমিরশাহি, বাহরিনের মতো আরব লিগের দেশ বা বাহামা, ভানুয়াতুর মতো ক্যারিবিয়ান দেশ। নয় নয় করেও দুনিয়ার অন্তত ১৭ দেশে আয় কর নেই। এদের মধ্যেই ব্রুনেই আলাদা কারণ এখানে আয়কর তো নেই-ই, ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেরও বালাই নেই বললেই চলে। তবে একটা জিনিস বাধ্যতামূলক। বেতনের ৫ শতাংশ টাকা ব্রুনেই সেন্ট্রাল সিকিউরিটি ফান্ডে জমা করতে হয়। এই টাকার ৩০ শতাংশ পরিকাঠামো খাতে খরচ হয়। বাকি ৭০ শতাংশ বাজারে খাটিয়ে অবসরকালীন পেনশনের ব্যবস্থা করে সেদেশের সরকার।
চাকরি থেকে অবসরের পর থোক টাকা ছাড়া মাসে মাসে পেনশন পান নাগরিকরা। এদিকে ভারতের করের হার দুনিয়ার মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। ভারতে ক্ষেত্র বিশেষে একজন নাগরিককে কম করেও ১৭ রকম কর দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে ব্রুনেই তেল সমৃদ্ধ দেশ। সে কারণেই ওরা ট্যাক্স ফ্রি দেশ হতে পেরেছে বলে মনে করেন অনেকে। দেশটায় রাজার কথাই নিয়ম। এর বাইরে আর দ্বিতীয় কথা চলে না। তাই ওরা যেটা পারে, সেটা গণতান্ত্রিক দেশে একপ্রকার অসম্ভব। তবে ব্রুনেই আয়কর না রেখেই মজবুত একটা সোশাল সিকিউরিটি সিস্টেম তৈরি করেছে। আর সেটা করেছে নিজেদের সম্পদকে ব্যবহার করে। সেই সম্পদকে ঠিকঠাক লগ্নি করে। এখানেই পিছিয়ে অন্যান্য অনেক দেশ। অন্যদিকে সৌদি আরব, আমিরশাহি থেকে ব্রুনেই-এই দেশগুলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফান্ড হাউসগুলো চালায়। বিশ্বের অধিকাংশ বড় সংস্থায় এদের টাকা খাটছে। এই টাকা থেকেই দেশের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে সরকার।