নিউ ইয়র্ক: মনে করা হয়, টুইটার কেনার আইডিয়া টুইটার থেকেই পেয়েছিলেন। নেটিজেনদের কাছে ধনকুবের এলন মাস্ক প্রশ্ন রেখেছিলেন, টুইটারের বিকল্প সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন আছে কিনা? উত্তরে অধিকাংশ নেটিজেনদের আবদার ছিল, টুইটারকেই কিনে নিন না, তাহলে আর নতুন প্ল্যাটফর্মের দরকার কী! এর পরই এলন আরও ৯ শতাংশ অংশীদারিত্ব কিনে হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলে টুইটারকে। ওই সংস্থার ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইও পরাগ আগরওয়াল টুইটার বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেন। সরাসরি পরাগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে টুইটারের পুরো শেয়ার কিনে নেওয়ার পাল্টা প্রস্তাব দেন তিনি। এরপর এলনের প্রায় ৪৪০০ কোটি ডলারের প্রস্তাব ফেরাতে পারেনি টুইটার বোর্ড। তাই, এখন এলনের টুইটার কেনা সময়ের অপেক্ষা। এ তো গেল পটভূমিকা। যদি টুইটার এলনের হাতে চলে আসে, তাহলে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে এই সোশ্যাল মিডিয়ায়?
বাক স্বাধীনতা: প্রথম থেকেই টুইটারের নিয়মবিধি নিয়ে সওয়াল করেছেন এলন মাস্ক। এই সওয়াল আরও জোরালো হয়, যে দিন একাধিক উস্কানিমূলক টুইটের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এলনের যুক্তি, টুইটার একটি সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে সবার বাক স্বাধীনতা থাকা উচিত। রাতারাতি কাউকে ব্যান করা উচিত নয় বলে এলনের দাবি। মনে করা হচ্ছে, এলন টুইটারের দায়িত্ব নিলে বাক স্বাধীনতার উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেবেন তিনি। উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য ব্যান করা নাও হতে পারে কাউকে।
এডিট অপশন: এখন টুইটারে এডিট অপশন নেই। পোস্ট একবার হয়ে গেলে এডিট করা সম্ভব নয়। এলন মাস্ক মনে করেন, এই অপশন অবশ্যই থাকা উচিত টুইটারে। টুইটারে পোল করে এডিট অপশন থাকা উচিত কিনা নেটিজেনদের মতামত জানতে চেয়েছিলেন এলন মাস্ক। এডিট অপশন থাকার পক্ষে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। মনে করা হচ্ছে, এলন দায়িত্ব নিলে এডিট অপশন যোগ হতে পারে টুইটারে।
অ্যালগরিদম: টুইটারে অ্যালগরিদিম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন এলন মাস্ক। তিনি মনে করেন, টুইটার ব্যবহারকারীর যাবতীয় পোস্টের পরিসংখ্যান সর্বসমক্ষে তুলে ধরে উচিত। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে টুইটারে। কিন্তু বর্তমান টুইটারের অ্যালগরিদম এলনের ভাবনার পরিপন্থী। এই বিষয় নিয়ে নেটিজেনদের মতামত চেয়ে টুইট করেছিলেন এলন মাস্ক। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এলনের এই ভাবনাকে সমর্থন করে। তাই অ্যালগরিদমেরও আমূল পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্রিপ্টো কারেন্সি দুর্নীতি: টুইটারে তাঁর নাম ভাঙিয়ে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবসার ফাঁদ পাতা হচ্ছে বলে একাধিক বার অভিযোগ করেন এলন মাস্ক। এ নিয়ে টুইটারে ক্রিপ্টো কারেন্সি দুর্নীতি বিরোধী প্রচারও চালান তিনি। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে ক্রিপ্টো কারেন্সি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে পারে ‘এলনের টুইটার’।
শেয়ার মার্কেটে ধাক্কা: একশো শতাংশ শেয়ারের অংশীদার হলে এলনের টুইটারে আর গ্রুপ অব বোর্ড থাকবে না। মার্কিন কোম্পানি আইন অনুযায়ী, টুইটার লিমিটেড থেকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে স্টক মার্কেট থেকে তালিকাবহির্ভূত হবে টুইটার। উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে টুইটারের শেয়ারের দাম ৫১.৭০ ডলার।
ম্যানেজমেন্টের বদল: প্রথম থেকেই টুইটারের ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত এলন মাস্ক। বাক স্বাধীনতা থেকে অ্যালগরিদম, সব কিছু নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন টুইটার-বোর্ডের উপর। টুইটারের সিইও পরাগ আগরওয়াল তাঁকে বোর্ডের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিলে মুখের উপর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, এই ম্যানেজমেন্টকে পরিবর্তন করতে পারেন এলন মাস্ক। ইতিমধ্যেই টুইটার সিইও পরাগের ইস্তফা নিয়েও জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এলন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণ বাণিজ্যিক ভাবনা থেকে হচ্ছে না। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এলন মাস্ককেও ব্যান করেছিল টুইটার। এরপর থেকেই টুইটারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এলন মাস্ক। টুইটারেই সরব হয়ে ক্যাম্পেন চালান তিনি। টুইটারের বিকল্প সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির চ্যালেঞ্জ করে নেটিজেনদের কাছেই পরামর্শ নেন এলন। তাই বিশেষজ্ঞদের দাবি, টুইটারের অধিগ্রহণ অনেকটা আবেগতাড়িত ভাবেই নিচ্ছেন এলন মাস্ক।