ক্যালিফোর্নিয়া: হঠাৎ কোনও জিনিসের প্রয়োজন পড়লে, এখন আর সবসময় বাজারে ছুটতে হয় না। ঘরে বসে মোবাইলে আঙুল চালিয়ে অর্ডার দিলেই কিছুক্ষণে তা পৌঁছে যায় বাড়ির দরজায়। এবার আপনি কল্পনা করুন, সূর্য পাটে যেতেই, অন্ধকার নামতেই আপনি আপনার ফোন থেকে সূর্যের আলো অর্ডার করলেন। কি মনে হচ্ছে গল্পের গরু একেবারে গাছে তুলে দিলাম? না, এই কল্প-গল্পের ধারণাটিকেই বাস্তব করার পথে রয়েছে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সংস্থা, ‘রিফ্লেক্ট অরবিটাল’। তাদের দাবি, খুব শিগগিরই তারা সূর্য ডুবে গেলেও আপনাকে সূর্যালোক সরবরাহ করতে পারবে। আর এই দাবি হইচই ফেলে দিয়েছে নেট জগতে। কিন্তু অন্ধকার নামার পর, কীভাবে তারা সূর্যের আলো সরবরাহ করবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
রিফ্লেক্ট অরবিটালের লক্ষ্য একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি সূর্যের আলো সরবরাহ করা। সোজা কথায়, কেউ যেমন অ্যাপের মাধ্যমে খাবারের অর্ডার দেয়, সেই ভাবে অর্ডার দিলেই তারা মহাকাশ থেকে সরাসরি কারও বাড়িতে সূর্যের আলো পৌঁছে দেবে। গত এপ্রিলে, লন্ডনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রথম এই বৈপ্লবিক ধারণাটি সামনে এনেছিলেন রিফ্লেক্ট অরবিটালের সিইও, বেন নোয়াক। বেন বলেছিলেন, তাঁদের ওয়েবসাইটে লগ ইন করে কেউ তাঁর জিপিএস লোকেশন জানালেই আঁধার নামার পর সেই লোকেশনে সূর্যের আলো পৌঁছে দেবেন তাঁরা। ২০২৫-এই এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বলে আশা সংস্থাটির। আর সাড়াও মিলছে ব্যাপক। রিফ্লেক্ট অরবিটালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা সিটিও, ট্রিস্টান সেমেলহ্যাক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সূর্যালোক কেনার জন্য ৩০,০০০ আবেদনপত্র পেয়েছে এবং প্রতি সেকেন্ডে সংখ্যাটা বাড়ছে। কিন্তু কীভাবে তারা অন্ধকারের পর মানুষকে সূর্যালোক দেবে?
সম্প্রতি তাদের ওয়েবসাইটে সংস্থাটি এই ধারণাটির আরও ব্যাখ্যা দিয়েছে। ধারণাটি খুব সহজ, সাদামাটা। রিফ্লেক্ট অরবাইটাল প্রথম উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যালোককে বন্দি করবে। তারপর, তাকে পৃথিবীতে প্রতিফলিত করবে। এতেই আপনার চারপাশ রাত নামার পরও দিনের মতো আলোকিত হয়ে উঠবে। ওয়েবসাইটের একটি সিমুলেশন ভিডিয়োও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, একটি অ্যাপে দেওয়া মানচিত্রে কারসার সরিয়ে সরিয়েই একজন সূর্যের আলো ফেলছেন নিজের উপরে। এর জন্য মহাকাশে ৫৭টি স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে রিফ্লেক্ট অরবিটাল। প্রতিটি স্যাটেলাইটে ৩৩ ফুট বাই ৩৩ ফুট আকারের ‘মাইলার মিরর’ (আয়না) লাগানো থাকবে। মাইলার হল একটি প্লাস্টিকের উপাদান। মহাকাশ কম্বল, ইনসুলেটর এবং প্যাকেজিংয়ে এটি ব্যবহৃত হয়। এই আয়নাগুলি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে এগুলি একটি সূক্ষ্ম রশ্মিতে সূর্যের আলোকে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। ফলে, এগুলিকে সহজেই চাহিদা অনুযায়ী ঘোরানো এবং ফোকাস করা যাবে।
Watch this to see what we are working on 👇 https://t.co/GEy93lzeSQ
— Reflect Orbital (@reflectorbital) April 10, 2024
এইভাবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের জন্য রোদ পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন বেন নোয়াক। তিনি বলেছেন, “সমস্যা হল, দরকারের সময় আমরা সৌর শক্তি পাই না।” সোলার প্ল্যান্টগুলি রাতে কোনও শক্তি উত্পাদন করতে পারে না। আবার আকাশে ঘন মেঘ থাকল, বা ঝোড়ো আবহাওয়া হল, দিনের বেলাতেও সূর্যালোক পৃথিবীতে আসতে পারে না। ফলে সৌরশক্তি উৎপাদন করা যায় না। অথচ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্স হিসেবে সৌরশক্তির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু, এই সকল অসঙ্গতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রিফ্লেক্ট অরবাইটালের প্রযুক্তি সৌর বিদ্যুতের এই অসঙ্গতি দূর করতে পারে।
Watch this to see what we are working on 👇 https://t.co/GEy93lzeSQ
— Reflect Orbital (@reflectorbital) April 10, 2024
তবে, এর কিছু সমস্যাও আছে। ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরির অ্যান্ড্রু উইলিয়ামসের মতো বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর কক্ষপথে কোনও প্রতিফলকের নকশায় একটু ভুলচুক হলে, সূর্যের থেকেও উজ্জ্বল আলো তৈরি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের আলো, দূষণের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া, রিফ্লেক্ট অরবিটালের মতো প্রচেষ্টা অতীতে রাশিয়াও করেছিল। ১৯৯২ সালে, জামিয়া ২ (Znamya 2) অভিযান করেছিল তারা। পৃথিবীর কক্ষপথে একটি আয়না স্থাপন করেছিল। অল্প সময়ের জন্য সেটি পৃথিবীর দিকে একটি আলোর রশ্মির ঝলক পাছিয়েছিল। তবে, তার থেকে বেশি কিছু করা যায়নি। মূল সমস্যা ছিল, সেই সময় মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল। রিফ্লেক্ট অরবাইটালও এখনও ধারণার স্তরে রয়েছে। তা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হয়, সেটাই এখন দেখার।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)