কয়েকদিন আগেই বিশ্বজুড়ে গম, ভোজ্য তেলের আকাল দেখা গিয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই ঘাটতি দেখা গিয়েছিল বিশ্ব বাজারে। যার জেরে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। আর গম, ভোজ্য তেলের পর এবার বিশ্বে চালের আকাল দেখা দিতে পারে। উল্লেখ্য, চলতি মরশুমে ভারতে বর্ষার আগাম আগমন ঘটলেও বৃষ্টির ঘাটতি দেখা গিয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে। এদিকে ভারত চালের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ। এই আবহে ভারতের ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা গোটা বিশ্বের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ইউরোপের বহু দেশ, আমেরিকায় খাদ্য সামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখী। মূল্যস্ফীতির জ্বরে আক্রান্ত বিশ্ব অর্থনীতির দেশগুলি। এই পরিস্থিতিতে ভারতে এবছর ১৩ শতাংশ কম জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। স্বভাবতই ধানের উৎপাদন এর জেরে প্রভাবিত হবে। এবং তা হলে ভারতের চাল রফতানির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। এবছর পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি এই আকালের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এদিকে ব্যবসায়ীরাও এই পরিস্থিতির কারণে চিন্তিত। কারণ, ধান চাষ প্রভাবিত হলে তাতে দেশের অর্থনীতি প্রভাবিত হবে। চালের দাম বাড়লে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এদিকে চাল রফতানি কমলে তার জেরে দেশের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারও প্রভাবিত হবে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের চাল রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের ৪০ শতাংশ ভাগ রয়েছে। এর আগে দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার চিনি ও গম রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ভয়, ধানের উৎপাদন কম হলে চাল রফতানির উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে সরকার।
ইতিমধ্যেই গত দুই সপ্তাহে দেশে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি এবং বাংলাদেশে চালের চাহিদা বৃদ্ধি এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ। উল্লেখ্য, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চাল খাওয়া হয় এশিয়া মহাদেশেই। এই কারণে চালের সরবরাহ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই আবহে অনেক কৃষি বিজ্ঞানী আশাবাদী যে এখনও অগস্ট-সেপ্টেম্বরে বর্ষার মরশুম রয়েছে। সেই সময় বৃষ্টির ঘাটতি মেটানো গেলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে।
চিন, নেপাল, বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ সহ মোট ১০০টি দেশে ভারত চাল রফতানি করে থাকে। এদিকে কোভিডের পর চাল থেকে ইথানোল উৎপাদনের উপর সব নিষেধাজ্ঞা হটিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তবে একাধিক চাল উৎপাদনকারী রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সরকার ইথানল তৈরির ক্ষেত্রে চালের ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ করে, তা সময়ই বলবে।