নয়া দিল্লি: জি এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছে সোনি গোষ্ঠী? এই নিয়ে জল্পনার মধ্যে, মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি), শেয়ার বাজারে বড় ক্ষতির মুখে পড়ল জি এন্টারটেইনমেন্ট। এদিন, সকালের ট্রেডিং সেশনে জি এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ারের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ পড়ে যায়। তবে, এরপরই, এক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে জি এন্টারটেইনমেন্ট দাবি করেছে, সোনি যে তাদের সঙ্গে একীভূতকরণের পরিকল্পনা বাতিল করবে বলে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। এই বিষয়ে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ সংস্থার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। জবাবে জি এন্টারনটেইনমেন্ট বলেছে, প্রতিবেদনটি ভুল।
এদিন এক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে জি এন্টারটেইনমেন্ট বলেছে, “আমরা ফের বলতে চাই, আমাদের সংস্থা সোনির সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রস্তাবিত একীকরণ চুক্তি সফল করার লক্ষ্যে আমাদের সংস্থা কাজ করে চলেছে। আমরা আরও বলতে চাই, সবসময়ই ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডের বাধ্যবাধকতাগুলি মেনে চলে আমাদের সংস্থা।”
এদিকে, সোনি এই চুক্তি বাতিল করতে পারে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শেয়ার বাজারে হুড়মুড়িয়ে পড়েছে জি-এর শেয়ারের দাম। সোমবার বাজার বন্ধের সময় জি এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ারের মূল্য ছিল ২৭৭.৪৫ টাকা। এদিন বাজার খোলার সময় তাদের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ২৪৯.৭৫ টাকা। কিছু পরে আরও নেমে জি এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ২৪২.৩০ টাকায়। অর্থাৎ, প্রায় ১৩ শতাংশ পতন হয় শেয়ারের দরে। এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে একীভূতকরণ পরিকল্পনা জারি আছে বলে জানানোর পরও পরিস্থিতির বিশেষ বদল ঘটেনি। বেলা ৩টের সময় জি এন্টারটেইনমেন্টের শেয়ারের দর ছিল ২৫৮.৩৫ টাকা।
বস্তুত, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন বা রিলায়েন্সের মতো শক্তিশালী বিনোদন সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে, জি এন্টারটেইনমেন্ট এবং সোনি গোষ্ঠী হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২১ সালেই এই বিষয়ে দুই সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি হয়েছিল। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, এই দুই সংস্থা হাত মেলালে ১০০০ কোটি মার্কিন ডলারের এক অত্যন্ত শক্তিশালী বিনোদন সংস্থা তৈরি হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নবগঠিত সংস্থায় সোনি পিকচটার্স নেটওয়ার্কস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ৫০.৮৬ শতাংশ শেয়ার থাকার কথা। জি এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা গোয়েঙ্কা পরিবারের হাতে থাকবে নয়া সংস্থার ৩.৯৯ শতাংশ মালিকানা। এই চুক্তির বিষয়ে নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেয়েছে এই দুই সংস্থা।
ডিসেম্বরেই এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, তা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। ২০ জানুয়ারি চুক্তির ডেডলাইন। কিন্তু, তার আগেই এই চুক্তি বাতিল করার নোটিশ পাঠাতে পারে সোনি বলে, জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। কারণ, সোনি গোষ্ঠীর অভিযোগ, একীকরণ চুক্তির প্রয়োজনীয় কিছু শর্ত মানছে না জি। তবে, প্রধান বিরোধ বেধেছে জি-এর প্রধান নির্বাহী কর্তা তথা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ চন্দ্রের ছেলে পুনিত গোয়েঙ্কাকে নিয়ে। দুই সংস্থা একীভূত হওয়ার ফলে, নয়া যে সংস্থা গঠিত হবে, প্রাথমিকভাবে তার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল পুনিতের। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে তদন্ত করছে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সেবি। এই তদন্তের মধ্যে তাঁকে নয়া সংস্থার সিইও হিসাবে চাইছে না সোনি। এই নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আর এই কারণেই এই চুক্তি নিয়ে আর এগোতে চাইছে না সোনি বলে শোনা যাচ্ছে।