আপনি কি ফিটনেস ফ্রিক? শরীর চর্চাই আপনার নেশা? তাহলে এই নেশাকে পেশায় বদলে ফেলার দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র ফিটনেসকে কেন্দ্র করেই দুর্দান্ত কেরিয়ার গড়া যেতে পারে। গত ৩০ বছরে ফিটনেস শিল্প এতটাই এগিয়েছে, যে কোনও ব্যক্তি স্বচ্ছন্দে ফিটনেস প্রশিক্ষণকে একটি পূর্ণ সময়ের কেরিয়ার হিসাবে ভাবতে পারেন। ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসাবে কেরিয়ার গড়তে অনেকেই আগ্রহী হলেও, কীভাবে সেই পথে এগোনো যেতে পারে, সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকে না।
কেন ফিটনেস শিল্পে কেরিয়ার গড়বেন?
বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান কেরিয়ার পথের অন্যতম হল ফিটনেস শিল্প। আগামী ২০ বছর এই ধারা চলতেই থাকবে বলে মনে করেন কেরিয়ার বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ক্রমবর্ধমান ব্যস্ত জীবনে যত দিন যাচ্ছে মানুষ ততই ফিটনেস সচেতন হচ্ছে। কাজেই এই শিল্পক্ষেত্রে কাজ হারানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাছাড়া, নিজেকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ এবং রাজনীতিবিদদের মতো উচ্চ স্তরের সেলিব্রিটি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। তাতে ভাল উপার্জনের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পাওযা যায়। করেন না কিন্তু তাদের সাথে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কও গড়ে তোলেন। তাছাড়া, ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসাবে অন্যদের সাহায্যও করা যায়।
বেছে নিন কোনও একটি
ফিটনেস শিল্পে অনেকভাবে কেরিয়ার গড়া যেতে পারে। তবে পেশাদার হতে গেলে, বেছে নিতে হবে কোনও একটি।
ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক
ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক হিসাবে ক্লায়েন্টের কর্মক্ষমতা জানতে হবে। তিনি কী ধরণের ওয়ার্কআউট করবেন, কতক্ষণ করবেন, তার নির্দেশ দিতে হবে। তাঁর স্বাস্থ্যগত সমস্যারও খেয়াল রাখতে হবে।
গ্রুপ প্রশিক্ষক
বিভিন্ন সেশনে একেকটি গ্রুপ বা ব্যাচকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের একসঙ্গে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সাধারণত ডান্স এরোবিক্স, জুম্বা ডান্সিং, পাইলেটস-এর মতো ওয়ার্কআউট সেশন করিয়ে থাকেন গ্রুপ প্রশিক্ষকরা।
ফিটনেস ডিরেক্টর
ফিটনেস ডিরেক্টরের কাজটা কিছুটা কর্পোরেট অফিসের এইচআর ম্যানেজারের মতো। পুরো জিমের দায়িত্ব নিতে হবে। কয়েক ডজন প্রশিক্ষকে তত্ত্বাবধান করতে হবে। জিমের মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে।
যোগা প্রশিক্ষক
যোগব্যায়াম সম্পর্কে নির্দেশ দেন যোগা প্রশিক্ষক। তাঁকে সমস্ত ধরণের আসন জানতে হবে।
ওয়েট অ্যান্ট এবং লাইফস্টাইল কোচ
অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের প্রয়োজন হয় ওয়েট অ্যান্ড লাইফস্টাইল কোচের। তাদের ওয়ার্কআউটের বিশেষ পদ্ধতি এবং খাদ্যতালিকার পরিকল্পনা করতে হয়।
ফিটনেস প্রশিক্ষক হওয়ার শর্ত
শুধু ফিটনেসের নেশা থাকলেই অবশ্য এই শিল্পে কেরিয়ার গড়া যাবে না। চাই আরও কিছু গুণাবলী। প্রাথমিকভাবে উপার্জন খুব কম হবে। তাই বলে হতোদ্যম হলে চলবে না। ধৈর্য ধরে সুযোগের অপেক্ষা করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, এই ক্ষেত্রে আপনিই পণ্য, আপনিই বিক্রেতা। তাই, নিজের প্রচার নিজেকেই করতে হবে। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে কাজ পাওয়া যেতে পারে, এমন লোকের সঙ্গে পরিচিতি বাড়াতে হবে।
ফিটনেস ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে কেরিয়ার গড়বেন?
ধাপ ১: ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসাবে কোথাও কাজ করতে গেলে নিয়োগকর্তা প্রথমেই শংসাপত্র দেখতে চাইবেন। আর এর জন্য প্রথম ধাপ হল ফিটনেসে একটি ডিগ্রি থাকা। যদি স্নাতক ডিগ্রি করার মতো সময় বা সুযোগ না থাকে, সেই ক্ষেত্রে অন্তত একটি অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। এই কোর্সে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, পুষ্টি, ব্যায়াম প্রশিক্ষণের মতো ফিটনেসের বিভিন্ন ধরণের বিষয় শেখানো হয়। এই ডিগ্রির কোর্সে ভর্তি হতে গেলে উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে হবে।
ধাপ ২: পেশাদার ফিটেস প্রশিক্ষক হতে গেলে, সার্টিফিকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফিটনেস বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর কোনো সার্টিফিকেশন কোর্স করা প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা থেকেই ফিটনেস প্রশিক্ষকদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে। এর জন্য সাধারণত লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়।
ধাপ ৩: তবে, শুধু পড়াশোনা ও সার্টিফিকেট পেলেই হবে না, ফিটনেস প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করতে গেলে অভিজ্ঞতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই, চাকরি খোঁজা শুরু করতে হবে। প্রথম দিকে বেতন নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না। এই পর্যায়ে অগ্রাধিকার হল অভিজ্ঞতা অর্জন, বেতন নয়। মোটামুটি বেতন পেতে গেলে, কমপক্ষে ২ বছরের অভিজ্ঞতা দরকার।
ধাপ ৪: পুরোদস্তুর পেশাদার হতে গেলে, যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এমন ক্লায়েন্টদের সন্ধান করতে হবে, যারা আপনাকে ফিটলেস প্রশিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে ইচ্ছুক। পরবর্তীকালে সময় করে স্নাতক ডিগ্রিও করে নেওয়া যেতে পারে।