কলকাতা: চন্দ্রচূড় সেন, কোচবিহারের এই ছেলের নাম আজ নক্ষত্রখচিত। কোচবিহার রামঘোলা স্কুলের ছাত্র চন্দ্রচূড় সেন এবছর মাধ্যমিকে প্রথম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩। কোচবিহারের ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলের সাফল্যে আজ জেলায় উৎসবের মেজাজ। সাফল্যের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল চন্দ্রচূড়ের কাছে। তাঁর বক্তব্য, “অধ্যাবশায়ের মধ্যে দিয়ে নিজের লক্ষ্যকে আত্মস্থ করা। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করা।”
কেবল মেধাবী নয়, চন্দ্রচূড় অত্যন্ত সুবক্তা। তার বলা প্রত্যেক কথা অত্যন্ত মন নিয়ে শুনতে ইচ্ছা হবে। প্রত্যেকটা শব্দ ভাবাতে বাধ্য করবে। সকাল থেকেই চন্দ্রচূড়ের বাড়িতে ছিল একটা উৎকন্ঠা। প্রথম দশে যে ছেলে থাকবেই, তা নিশ্চিত ছিল, কিন্তু উৎকন্ঠা ছিল স্থান নিয়েই। চন্দ্রচূড়ের বাবা ব্যবসায়ী। মা বরাবর ঘর আর ছেলের পড়াশোনা সামলে এসেছেন। সকাল থেকে চন্দ্রচূড়ের বাবা-মা টিভির সামনে বসেছিলেন। চন্দ্রচূড় বলল, “যখন প্রেস কনফারেন্স চলছিল, আমি ঘরে ছিলাম না, দোতলায় চলে গিয়েছিলাম। যখন নামটা বলল, তখন বাবা-মাই আমাকে ডেকে আনে। আপ্লুত মুহূর্ত অবশ্যই।” চন্দ্রচূড় জানায়, “প্রথম পাঁচে থাকব, এটা ভাবছিলাম। এটা অবশ্য আমার থেকেও বেশি, যাঁরা আমার ওপর প্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরা ভাবছিলেন। যাই হোক, তাঁদের প্রত্যাশা বিফলে যায়নি, তাতে আমি আনন্দিত।”
নিজের সাফল্যের চাবিকাঠি কী? চন্দ্রচূড়ের কথায়, “সময়ানুবর্তিতা ছিল, তবে রুটিনমাফিক নয়। এরকম কোনও ব্যাপার ছিল না রোজ নির্দিষ্ট এই সময়ই পড়তে হবে।”
বায়োলজি ভালো লাগে সবচেয়ে বেশি। তারপর পদার্থবিদ্যা, রসায়ন। সায়েন্স নিয়েই পড়ার ইচ্ছা চন্দ্রচূড়ের। তারপর জয়েন্ট এন্ট্রাস দিয়ে ডাক্তারি পড়া।
একটা অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রশ্ন করা হয়েছিল চন্দ্রচূড়কে। এই সাফল্যের পিছনে কার কার ভূমিকা রয়েছে। সে প্রশ্নের উত্তরেই চন্দ্রচূড় বলেন. “রেজাল্ট, যেটাকে আমরা বলি একটা মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর, সেটা এক জন ছাত্রের পক্ষে একাকী সম্ভব হয় না। বাবা-মা, আত্মীয় পরিজন, স্কুলের শিক্ষক, গৃহশিক্ষক সকলের সম্মিলিত নিরলস অধ্যাবশায়, প্রচেষ্টা, সবকিছুই একটা ফলাফল হিসাবে ধরব এই সাফল্যকে। যদিও মাধ্যমিকই চূড়ান্ত নয়। আরও অনেক পথ চলা বাকি। তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাই আমার অভিষ্ট।”
পড়াশোনা ছাড়া আবৃত্তি চর্চা, গান, ড্রয়িং, গল্প, শিল্পকলা সঙ্গে জড়িত চন্দ্রচূড়। আগামী প্রজন্মের জন্য চন্দ্রচূড়ের পরামর্শ, “কনসেপ্ট গ্রো করতে হবে। কেবল মুখস্থ করলে চলবে না। আমাদের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র দেখলেই বোঝা যাবে, অনেক কিছুই কনসেপ্ট বেসড ছিল। পাঠ্যপুস্তক খুটিয়ে পড়তে হবে। সঙ্গে সহায়িকা বইও রাখতে হবে। লিখে লিখে অভ্যাস করাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কৌতুহল তোমাকে শেখাবে, যে কী করে জিনিস জানতে হয়। সুতরাং জ্ঞানপিপাসাটাকে বাড়াতে হবে।” ব্রেক লার্নিং মেথডে পড়াশোনা করত চন্দ্রচূড়। একাধিক মক টেস্ট দিয়েছিল। আর সেটাই অনুসরণ করতে বলল আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের।