নয়া দিল্লি: বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। তার আগে তেইশের পাঁচ রাজ্যের ভোট ছিল লিটমাস টেস্টের মতো। রবিবাসরীয় সকাল থেকেই গোটা দেশের রাজনৈতিক মহলের নজর ছিল চার রাজ্যের জনমতের দিকে (মিজোরামের ভোটগণনা আগামিকাল)। এখনও পর্যন্ত যা ছবি উঠে এসেছে, তাতে তিন রাজ্যেই ধরাশায়ী হচ্ছে কংগ্রেস। একেবারে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে। রবিবার সকাল পর্যন্তও কংগ্রেস আশাবাদী ছিল জয়ের বিষয়ে। কিন্তু খেলা ঘুরে গিয়েছে। মোদী ম্যাজিকেই আস্থা রেখেছে আমজনতা। মধ্য প্রদেশে ভরাডুবির পথে কংগ্রেস। যে দু’টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল, সেই রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়েও জোর ধাক্কা খেয়েছে। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে, কংগ্রেসের কামব্যাকের রাস্তা প্রায় বন্ধ। টিমটিম করে কংগ্রেসের লম্ফ শুধু জ্বলে রয়েছে তেলঙ্গানায়। সেখানে এক দশকের কেসিআর সরকারকে মসনদচ্যুত করতে চলেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের এই বেহাল দশা নিয়ে ইতিমধ্যেই কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে ইন্ডিয়া ব্লকের অন্দরমহলে। কেউ কেউ প্রকাশ্যেও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যেমন বর্ষীয়ান জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী কোনও রাখঢাক না রেখেই বলে দিয়েছেন, “কংগ্রেসের পরাজয় মানে ইন্ডিয়া ব্লকের পরাজয় নয়।” তাঁর আরও সংযোজন, “এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অক্ষম কংগ্রেস। এই সিনড্রোম থেকে কংগ্রেসকে বেরিয়ে আসতে হবে।” উল্লেখ্য, ভোটে ভরাডুবির মধ্যেই আগামী ৬ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া ব্লকের বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। সেই নিয়েই মৃদু উপহাসের সুর বর্ষীয়ান জেডিইউ নেতার গলায়। তাঁর বক্তব্য, “ক্ষেতে ফসল শুকিয়ে যাওয়ার পর আর বৃষ্টি হয়ে কী লাভ!”
বিরোধীদের ইন্ডিয়া ব্লকের অন্যতম প্রধান মুখ এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার। কংগ্রেসের হার ইন্ডিয়া ব্লকের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করলেও, এখনও বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না তিনি। বর্ষীয়ান এনসিপি নেতার বক্তব্য, তিনি দিল্লিতে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাড়িতে যাবেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করবেন। যাঁরা তৃণমূল স্তরের বাস্তব ছবির সঙ্গে অবগত, তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। তারপরই এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে বলে ব্যাখ্যা শরদ পাওয়ারের। পাশাপাশি তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের সাফল্যের নেপথ্যে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করছেন এনসিপি নেতা।
ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্য তবে কেন শুধু দক্ষিণ ভারতেই দেখা গেল? উত্তরের তিন রাজ্যে কেন বলে বলে গোল খেতে হচ্ছে কংগ্রেসকে? জাতিগত শুমারি ইস্যুতে কি তাহলে হিন্দি বলয়ের ভোটারদের মনে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারল না বিরোধীরা? এখনও পর্যন্ত যা ছবি, তাতে মধ্য প্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় উভয় রাজ্যেই তফসিলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে পিছিয়ে রয়েছে। হিন্দি বলয়ে কংগ্রেসের ভরাডুবির বিরোধী ব্লকে নতুন করে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।