পশ্চিম বর্ধমান: একটি দু‘টি নয়, অন্তত ৩০ টি গাড়ি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। ঘন ঝোপ আর মাটিতে ঢেকে যাচ্ছে সরকারি টাকায় কেনা কোটি কোটি টাকার এই গাড়ি। নতুন সব ঝকঝকে গাড়ি। কোনওটির নম্বর প্লেটও লেখা হয়নি এখনও। আসানসোল পুরনিগমে সেন্ট্রাল স্টোরে এ ভাবেই নষ্ট হচ্ছে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে কেনা আবর্জনা পরিষ্কারের গাড়ি। পুরভোটের প্রাক্কালে এই নিয়ে তৈরি হয়েছে তৃণমূল বিজেপির তরজা। এই গাড়ি অব্যবহৃত পড়ে থাকায় দায় কার ? ব্যর্থতা কার ?
তৎকালীন মেয়র বর্তমান বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি এই দায় বর্তমান পুরবোর্ডের। অন্যদিকে বিদায়ী পুরপ্রশাসক তথা এবারের প্রার্থী অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি অপরিকল্পিতভাবে গাড়ি কেনার দায় প্রাক্তন মেয়রের। এই নিয়ে শুরু হয়েছে যুযুধান দুপক্ষের লড়াই।
কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় ভারতের দ্বিতীয় অপরিচ্ছন্ন, নোংরা শহর হিসেবে উঠে এসেছিল আসানসোলের নাম। আর তারপরেই তৎকালীন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি আসানসোলকে গ্রিন এবং ক্লিন তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সাফাই কাজে বিশেষ জোর দিয়ে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প থেকে কেনা হয়েছিল প্রচুর আবর্জনা ফেলার গাড়ি, ভ্যাট কম্প্রেসার।
কিন্তু বর্তমানে সেই গাড়িগুলি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে আসানসোল পুরনিগমের সেন্ট্রাল স্টোররুমে। এমনকি বেশ কয়েকটি গাড়ি নতুন অবস্থাতেই পড়ে আছে। একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি বলে অভিযোগ। জঞ্জালের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে অন্ততপক্ষে তিরিশটি গাড়ি। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
পরিকল্পনার অভাবেই গাড়িগুলির এই অবস্থা বলে জানিয়েছেন আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসনিক বোর্ডের বিদায়ী চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের। অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এই গাড়িগুলোর চালক কিংবা সাফাই কর্মীদের বেতন কোথা থেকে দেওয়া হবে সে সব না ভেবে গাড়িগুলি কেনা হয়েছিল। যার ফলে গাড়িগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। সাফাইকর্মী ও তাঁদের বেতন প্রদান সবকিছু না দেখে না বুঝে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। ফলে, এই অবস্থা।”
জিতেন্দ্র তিওয়ারির কথায়, “তৎকালীন পুরমন্ত্রীর ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশেই গাড়িগুলি কেনা হয়েছিল। কলকাতা পুরনগিমেও এরকম গাড়ি তখন কেনা হয়। আমাদের কিনতে হয়েছিল। কিন্তু গাড়ির জন্য সাফাই কর্মী ও চালকের খরচ দেওয়া হয়নি পুরমন্ত্রকের তরফ থেকে। কিন্তু সেই খরচ দেওয়া হয় কলকাতা পুরনিগমে।”
তাঁর আরও সংযোজন, “আমি আগেও বলেছি আসানসোলকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর বঞ্চনার প্রতিবাদ এখন যাঁরা আছেন পুরনিগমের তাঁদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই। আমার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা ছিল তাই বেরিয়ে এসেছি আসানসোলের মানুষের স্বার্থে।” স্বপ্নের ‘গ্রীন আসানসোল, ক্লিন আসানসোল’ সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে তৃণমূলের রাজনীতিকেই দায়ী করেছেন জিতেন্দ্র।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় তিন বছর ধরে ব্যবহার না হওয়ায় অনেকগুলি গাড়ি বিকল হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। টায়ার, ব্যাটারি-সহ নানা যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আসানসোলে পুরভোট। ফলে, পুরভোটকে কেন্দ্র করে ‘গ্রিন আসানসোল, ক্লিন আসানসোল’ তরজা যে আরও জোরাল হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।