কলকাতা: হিন্দি বলয়ের চার রাজ্যের নির্বাচন শেষ। রবিবার ফল প্রকাশ হতে দেখা যাচ্ছে, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে শুধু তেলঙ্গানা। দীর্ঘদিন বাদে, এই বারের নির্বাচনে বিজেপি লড়াই করেছে কোথাও কোনও মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী ছাড়াই। সাধারণত ভোটের আগেই নেতা ঠিক করে, তাঁকে সামনে রেখেই লড়াই করে বিজেপি। সম্ভবত, কর্নাটকের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই, এবার আগে থেকে কোনও রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেনি গেরুয়া শিবির। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নাম ও ডাবল ইঞ্জিন সরকারের কাজের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছিল বিজেপি। সেই কৌশল যে কাজে লেগেছে, ভোটের ফলফলই তার প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখকে সামনে রেখে নির্বাচনী লড়াইয়ে জিতলেও, তিনি তো আর রাজ্যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না। তাই, বিজেপির আসল পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে এখন। মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে কাকে মুখ্যমন্ত্রী করবে বিজেপি?
মধ্য প্রদেশে ফের ‘মামা’, না অন্য কেউ?
মধ্য প্রদেশে, ২০০৩ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে সামনে রেখেই নির্বাচনে লড়েছে বিজেপি। কিন্তু, এইবার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মোকাবিলা করতে, কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির পরিবর্তে মধ্য প্রদেশে যৌথ নেতৃত্বে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি। বেশ কয়েকজন সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও প্রার্থী করেছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শিবরাজ সিং চৌহান, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, প্রহ্লাদ প্যাটেল, নরেন্দ্র সিং তোমর – এই সকল বিশিষ্ট নেতাদের সকলেই নির্বাচনে জয়লাভ করছেন। তবে, বিজেপির এই বিশাল জয়ের পিছনে মোদী ফ্যাক্টরের পাশাপাশি শিবরাজ সিং চৌহান সরকারের লাডলি বেহনা যোজনার মতো জনকল্যআণমূলক প্রকল্পগুলির ভূমিকাও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। এছাড়াও, শিবরাজের জনপ্রিয়তা, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তাকে উপেক্ষা করা কঠিন। তাছাড়া, শিবরাজ সিং চৌহানের যেমন রাজ্য জুড়ে প্রভাব রয়েছে, বিজেপির বাকি নেতাদের সেই রকম রাজ্যব্যপী প্রভাব নেই। তাঁদের প্রভাব অনেকটাই অঞ্চল ভিত্তিক। কাজেই, বর্তমানের নেতা হিসেবে শিবরাজ সিং চৌহানই দৌড়ে এগিয়ে আছেন, তবে, বিজেপির অন্দরের খবর, ভবিষ্যতের নেতার হিসেবে নতুন মুখের খোঁজও চলছে। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল, রাকেশ সিং এবং অবশ্যই জ্যোতিরাদিত্ব সিন্ধিয়ার নাম নিয়ে আলোচনা চলছে।
রাজস্থানে কার দিকে হাওয়া?
রাজস্থানেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি। আগের চারটি নির্বাচন বিজেপি লড়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেকে সামনে রেখে। কিন্তু, এবার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কোনও নাম ঘোষণা করা হয়নি। রাজস্থানে বিজেপির সবথেকে শক্তিশালী নেতা বসুন্ধরা রাজে, এই নিয়ে কোনও সংশয় নেই। পুরো রাজ্যেই তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। কাজেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সকলের আগে রয়েছে বসুন্ধরা রাজের নামই। তবে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। এমন পরিস্থিতিতে দল কি ফের বসুন্ধরা রাজেকেই মুখ্যমন্ত্রী করবে? এই প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। কিন্তু বসুন্ধরা গোষ্ঠীর নেতারা যেভাবে একের পর এক আসনে বিজয়ী হয়েছেন, তাঁকে উপেক্ষা করা কঠিন। বসুন্ধরা রাজের বিকল্প হিসেবে রয়েছে বাবা বালকনাথ, দিয়া কুমারী এবং গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের মতো নেতাদের নাম। বালকনাথ রাজস্থানে বিজেপির হিন্দুত্বের পোস্টার বয়। ভোটের আগে যতগুলি সমীক্ষা হয়েছে, তাতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সবার আগে ছিল তাঁর নামই। উত্তর প্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের মডেলেই মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে মোহান্ত বালকনাথকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের নামও মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদারদের মধ্যে রয়েছে। তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আর নাম রয়েছে রাজপরিবারের সদস্য দিয়া কুমারীর নাম। তবে, বিজেপি যেভাবে পরিবারতন্ত্রহীন দল হিসেবে নিজেদের প্রচার করতে চাইছে, তাতে রাজপরিবারের সদস্য হওয়াটাই দিয়া কুমারীর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে।
কে হবেন ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রী?
ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির জয়, বিজেপির জন্য রাজস্থান এবং মধ্য প্রদেশের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এই রাজ্যে জযের বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত ছিল কংগ্রেস। রাজনৈতিক প্রভাবে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে টক্কর দেওয়ার মতো কোনও নেতাও ছিলেন না বিজেপিতে। বাঘেল সরকারের বিরুদ্ধে সেভাবে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াও ছিল না। কাজেই এই জয়ের পিছনে মোদী ম্যাজিকের বড় ভূমিকা আছে তা বলাই বাহুল্য। এই রাজ্যে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা. রমন সিংকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তিনি জিতেছেন। ১৫ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তবে, ৭১ বছরের রমন সিংয়ের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে সবথেকে বড় বাধা তাঁর বয়স। বিজেপি অবশ্য ইতিমধ্য়েই ভবিষ্যতের নেতা তৈরির দিকে নজর দিয়েছে। রাজ্যে দলের সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে, অরুণ সাউয়ের হাতে। বিধানসভা নির্বাচনে তিনিওজয়ী হয়েছেন। তাই তিনিও রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে। মুখ্যমন্ত্রী পদের তৃতীয় দাবিদার হিসেবে উঠে এসেছে ব্রিজমোহন আগরওয়ালের নাম। তিনি রায়পুর দক্ষিণ বিধানসভা আসন থেকে সাতবারের বিধায়ক। এবারও অষ্টমবারের মতো জয়ী হয়েছেন। রমন সিংয়ের সরকারে মন্ত্রীও ছিলেন। এছাড়া ছত্তীসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে আছেন সরোজ পান্ডে, বিজয় বাঘেল এবং রেণুকা সিং-এর নামও। শেষ পর্যন্ত কার শিকে ছেঁড়ে, এখন সেই দিকেই নজর সকলের।