আগরতলা: ত্রিপুরা ভোটে বিজেপি পরাজিত হলে মূল্যবৃদ্ধি কমবে। শুক্রবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচারে গিয়ে এমনই দাবি জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এপ্রসঙ্গে বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তী সময়ের উল্লেখ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আগেরবার বাংলায় হেরেছিল বলে বিপ্লব দেব ৫ টাকা করে পেট্রোল-ডিজেলে দাম কমিয়েছে। এবারেও বিজেপি হারলেই ত্রিপুরায় মূল্যবৃদ্ধি কমবে।”
ত্রিপুরায় তৃণমূল জয়ী হলে বাংলার মতো সমস্ত পরিষেবা পাবে, এমনকি ত্রিপুরাবাসী বাংলাতেও বিভিন্ন সুবিধা পাবে বলে দিন দুয়েক আগেই আগরতলায় গিয়ে বলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড বলেন, “বাংলায় তৃণমূল যা করেছে, ত্রিপুরায় আমরা জিতলে সেই সমস্ত কিছু করব। আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিই না। সেগুলি বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করি। বাংলায় সেটা করে দেখিয়েছি। তৃণমূল ত্রিপুরায় জিতলে একমাস পর অর্থাৎ ২ এপ্রিলের মধ্যে গৃহকর্ত্রীদের হাতে মাসে হাজার টাকা করে পৌঁছে দেবে।” এছাড়া বাংলার মতো স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, খাদ্যশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী সহ সমস্ত প্রকল্প সহ মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় করারও প্রতিশ্রুতি দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
গত ৫ বছর ধরে ত্রিপুরায় ডবল ইঞ্জিন সরকার চললেও স্কুলে শিক্ষক নেই, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, বেকার যুবকদের হাতে কাজ নেই বলে তোপ দাগেন অভিষেক। এপ্রসঙ্গে বাম সরকারের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, “সব ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পিছিয়ে গিয়েছে। ২৫ বছর সিপিএম যে ক্ষতি করেছে, তার থেকে বেশি ক্ষতি ৫ বছরে বিজেপি করেছে। ৫ বছরে ৫০ বছর পিছিয়ে গিয়েছে ত্রিপুরা। কোনও দলের স্বাধীনতা নেই। কেউ মিটিং-মিছিল করতে পারে না। সংবাদমাধ্যমেরও স্বাধীনতা নেই। গণতন্ত্র নেই। ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ দিল্লি ঠিক করছে। ৫ বছর ধরে ত্রিপুরাবাসীকে ভাঁওতা দিয়েছে ডবল ইঞ্জিন সরকার।” এদিনও তাঁর সভা আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা হুঁশিয়ারি, “নির্বাচনের পর তৃণমূলের ঝাঁঝ আরও বাড়বে। বিজেপির ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক। তৃণমূল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবে। এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না তৃণমূল। এদের কী ভাবে উৎখাত করতে হয়, বাংলায় মমতা দেখিয়েছে। এখানেও করে দেখাব।”
গত ৫ বছরে বিজেপি সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করেনি, বিমানবন্দর করলেও সেটা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে না বলেও কদমতলার জনসভা থেকে সোচ্চার হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এপ্রসঙ্গে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অভিষেক বলেন, “বিজেপির ক্ষমতা থাকলে এই মাঠে ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সভা করুক। রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুক। ৫ বছরে কী কাজ করেছে। আমিও রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসব। মমতা ৫ বছরে কী করেছে বাংলায়। যদি ১০-০ গোলে না হারাই তাহলে ত্রিপুরার মানুষের কাছে মুখ দেখাব না।” তাঁর দাবি, “তথ্য-পরিসংখ্যান সামনে রেখে রাজনীতি হওয়া উচিত। সন্ত্রাস দিয়ে নয়।” অন্য দলের মতো কেবল ভোটের সময় নয়, তৃণমূল সর্বদা সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে বলেও দাবি জানান অভিষেক।
প্রসঙ্গত, এদিন একদিনের সফরে ত্রিপুরায় আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দু-বার ত্রিপুরায় এলেন অভিষেক। এদিন ত্রিপুরার কমলপুর ও কদমতলায় দুটি জনসভা করেন তিনি। দুটি সভাতেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।