আগরতলা: রাত পোহালেই ত্রিপুরার রায়। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা। বাম-কংগ্রেস জোটে কতটা হাওয়া বইবে? পাশা কি পাল্টাবে? নাকি আবারও ক্ষমতা ফিরবে গেরুয়া শিবির? কতটা ছাপ ফেলতে পারবে জনজাতিদের ভোট? ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে রয়েছে তৃণমূল শিবিরও। ঘাসফুলই বা কতটা ফ্যাক্টর হতে চলছে আগামিকালের ভোটগণনায়? চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষাই পড়শি রাজ্যে এগিয়ে রাজ্যে বিজেপি শিবিরকে। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষার সব সমীকরণকে ওলট পালট করে দেওয়ার ইতিহাস অতীতে একাধিকবার রয়েছে। ত্রিপুরায় বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘর ওয়াপসির পর ত্রিপুরায় সংগঠনকে মজবুত করার গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আগামিকালের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন রাজীবও। ত্রিপুরার ভোট রাজীবের কাছেও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ত্রিপুরায় দলের সংগঠনকে কতটা মজবুত করতে পেরেছেন তিনি, সেই পরীক্ষাও হবে আগামিকাল। ভোটের ফলাফল নিয়ে স্নায়ুর চাপ কি অনুভব করছেন তৃণমূলের ত্রিপুরার ইনচার্জ? টেনশনে রয়েছেন কি? ভোটগণনার আগের বিকেলে টিভি নাইন বাংলাকে জানালেন মনের কথা।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলে সেকেন্ড ইনিংস শুরু করে ত্রিপুরার দায়িত্ব পাওয়ার পর সে রাজ্যে প্রথম নির্বাচন ছিল পুরভোট। সেখানে একাধিক জায়গায় ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল তৃণমূল। এবার বিধানসভা নির্বাচনেও ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু রাজীব বাবু বলছেন, ‘হয়ত দু’একটি আসনে লড়াই দিতে পারব।’ কী এমন হল হঠাৎ? সেই ব্যাখ্যাও দিলেন রাজীববাবু। বললেন, ‘পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে লড়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। কোথাও ২৭ শতাংশ ভোট, কোথাও ২৪ শতাংশ ভোট, কোথাও আবার ২১-২২ শতাংশ। গড় করলে দেখা যাবে ২৪ শতাংশ ভোট ছিল।’ কিন্তু এবারের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে দু’একটি আসনে হয়ত তৃণমূল লড়াই দিতে পারবে বলে মনে করছেন রাজীববাবু। কিন্তু যেখানে পুরভোটে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল তৃণমূল, সেখান থেকে কেন আজ এই অবস্থা? রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য স্বীকার করছেন দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ভুলের কথা।
টিভি নাইন বাংলার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘ত্রিপুরায় আমাদের একটাই ভুল হয়েছে। যেখানে আমরা দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে আজ হয়ত আমরা সরকার গড়ারই স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু কোথাও কোথাও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ভুল হয়, একটি ভুলের শিকার আমরাও হয়েছি।’ তবে দল যে এই অবস্থা থেকে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে, সেই বিষয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী তৃণমূলের ত্রিপুরার ইনচার্জ। কোথায় কোথায় খামতির কারণে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ল তৃণমূল? সেই কথাও জানালেন নিজেই। বললেন, ত্রিপুরায় পুরভোট পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষেত্রে ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’ ও ‘সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে ভুল চয়নের’ কারণে দল হয়ত কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। রাজীববাবু কথায়, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল আবার এই নির্বাচনে লড়াই দিয়েছে।
ত্রিপুরার ভাগ্য গণনার আগে বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলিতেই দাঁত ফোটানোর সুযোগ পায়নি তৃণমূল। তবে এই সব বুথ ফেরত সমীক্ষায় গুরুত্ব দিতে নারাজ ত্রিপুরায় তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা রাজীব। তিনি বলছেন, ‘আমরা লড়াই দিয়েছি। লড়াই শুধু জয়-পরাজয়ের জন্য নয়। বুথ ফেরত সমীক্ষা কতটা সত্যি-মিথ্যা, তা পরের কথা। অন্তত কয়েকটি আসনে আমরা ছাপ ফেলতে পারব।’
দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মেনেও কেন জোটের সঙ্গে যায়নি তৃণমূল? সেই ব্যাখ্যাও দিলেন রাজীব। বললেন, ‘আমাদের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা এভাবে আদর্শহীন জোট বা অশুভ আঁতাতের মধ্যে ঢুকতে পারি না। যে সিপিএমের বিরুদ্ধে আমরা এতদিন লড়াই করেছি, তাঁদের সঙ্গে জোট করা যায় না। আবার কংগ্রেসকে আমরা নিজেরা বলেছিলাম গোয়ায় জোট করার জন্য, ওরা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই জায়গা দাঁড়িয়ে আমরা আলাদা ভাবে লড়ছি। তবে ফলাফল যাই হোক, আমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকব।’ কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন হয়, যে দু’একটি আসনের ব্যাপারে রাজীববাবু আশাবাদী, সেগুলিই সরকার গঠনের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকায় উঠে আসে? তাহলে কি জোটকে সমর্থন করবে তৃণমূল? সরাসরি কোনও উত্তর না দিলেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘আমাদের প্রথম ও প্রধান শত্রু বিজেপি। বিজেপিকে আটকানোর জন্য তখন আমাদের হাই কমান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই হবে।’