আগরতলা: দীর্ঘ দিনের বাম বনাম কংগ্রেসের লড়াইয়ের বিপরীতে এবারের নির্বাচনে ত্রিপুরা সাক্ষী থেকেছে ত্রিমুখী লড়াইয়ের। একদিকে রয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি-আইপিএফটি জোট, অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট আর রয়েছে তিপ্রা মোথা। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ), উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে ভোট গণনা, শেষ হতে চলেছে এই ত্রিমুখী লড়াই। ৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ হয়েছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয়ে যাবে ২৫৯ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ। ৫৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে বিজেপি, তাদের শরিক আইপিএফটি প্রার্থী দিয়েছে ৬টি আসনে। ১টি আসনে দুই জোট শরিকের মধ্যে লড়াই হয়েছে। সিপিআইএম লড়ছে ৪৭টি আসনে, কংগ্রেস ১৩টিতে। অন্যদিকে, রাজবংশোদ্ভূত প্রদ্যোত মাণিক্য দেববর্মার তিপ্রা মোথা পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ৪২টি বিধানসভা কেন্দ্রে। ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আর নির্দল প্রার্থী আছেন ৫৮ জন।
বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই পূর্বাভাস মিলেছে সহজ জয় পেতে চলেছে বিজেপির জোট। ইন্ডিয়া টুডে-মাইএক্সিস-এর সমীক্ষা অনুসারে, বিজেপি-আইপিএফটি জোট ৩৬-৪৫ আসন পেতে পারে। জিনিউজ-এর এক্সিট জানিয়েছে বিজেপি এবং তাদের শরিকরা পেতে পারে ২৯ থেকে ৩৬টি আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারে ১৩-২১টি আসন, তিপ্রা মোথা ১১-১৬টি আসন। ইটিজি-টাইমস নাও-এর বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছে যে বিজেপি একক সংখ্যাগরীষ্ঠতা না পেলেও বৃহত্তম দলই থাকবে। পেতে পারে ২৪টি আসন। তৃণমূল কংগ্রেসও ত্রিপুরার ভোটের ময়দানে ছিল, কিন্তু এক্সিট পোল অনুসারে নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দলের খুব একটা প্রভাব থাকবে না।
এবার ত্রিপুরায় ৮৯.৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বুধবার, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক গিত্তে কিরণকুমার দিনাকররাও জানিয়েছেন, ভোট গণনার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি বলেছেন, “কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ৮টায় গণনা প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রায় পাঁচ থেকে আট রাউন্ড গণনা হবে। দুপুর নাগাদ প্রবণতা পরিষ্কার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজ্য জুড়ে ১ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৩ মার্চ সকাল ৬টা পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং পরীক্ষার্থীদের এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, নিরাপত্তা কর্মীরা এদিন আগরতলার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে। রাজ্যে প্রায় ২৫,০০০ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে অভূতপূর্ব উত্থান ঘটেছিল বিজেপির। ৩৬টি আসনে জয়লাভ করেছিল তারা। বিজেপির জোট শরিক আইপিএফটি জিতেছিল ১৮টি আসনে। আর সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট পেয়েছিল মাত্র ১৬টি আসন। ক্ষমতা হরিয়েছিল তারা। আরও খারাপ অবস্থা ছিল কংগ্রেসের। তাদের ঝুলিতে একটিও আসন আসেনি। এবার কি সেই উত্থান ধরে রাখতে পারবে গেরুয়া শিবির? না কি কংগ্রেসের হাত ধরে ফের ক্ষমতায় ফিরবে বামেরা? কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তিপ্রা মোথার ভূমিকা? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টার।