TIPRA Motha: ত্রিপুরার ‘রাজাই’ কিংমেকার! কীভাবে উত্থান হল তাঁর দল ‘তিপ্রা মোথা’র

TV9 Bangla Digital | Edited By: অঙ্কিতা পাল

Mar 02, 2023 | 2:29 PM

TIPRA Motha: ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে এই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে প্রদ্যোৎ দেববর্মার দল তিপ্রা মোথা। প্রথম থেকেই এই দলকে কিং মেকার হিসেবে ধরা হচ্ছিল।

TIPRA Motha: ত্রিপুরার ‘রাজাই’ কিংমেকার! কীভাবে উত্থান হল তাঁর দল ‘তিপ্রা মোথা’র
ফাইল ছবি

Follow Us

আগরতলা: বৃহস্পতিতে ফলাফল উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের। এর মধ্যে অন্যতম হল ত্রিপুরা (Tripura)। সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট গণনা। গণনার প্রথম দিকে বিজেপি ১৭ দিয়ে শুরু করলেও সেখানে মাঝে ৪০ টি আসনে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি জোট। আর বর্তমানে ৩২ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি জোট। আর বাম কংগ্রেস জোট এগিয়ে রয়েছে ১৮ টি আসনে। টিলার রাজ্যে রীতিমতো শাসক-বিরোধীদের মধ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এই আবহে ৯ টি আসনে এগিয়ে তিপ্রা মোথা। আর সিমনা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছে তিপ্রা মোথা প্রার্থী। রাজনীতির ময়দানে এই নির্বাচনেই প্রথম হাতেখড়ি হয়েছে ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মা। প্রথম নির্বাচনেই এই ফলাফল যথেষ্ট আশাজনক। বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছিল যে সে রাজ্যে কিং মেকার হতে পারে তিপ্রা মোথা। জেনে নেওয়া যাক কোথা থেকে এল তিপ্রা মোথা?

তিপ্রা মোথার প্রধান:

তিপ্রা মোথার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ত্রিপুরার রাজপরিবারের বর্তমান প্রধান প্রদ্যোৎ মানিক্য দেববর্মা। কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি প্রদ্যোতের। তাঁর বাবা কিরীট বিক্রম দেববর্মা কংগ্রেসের তিনবারের সাংসদ ছিলেন এলং মা বিভু কুমারী ছিলেন কংগ্রেসের দুইবারের বিধায়ক। ত্রিপুরার রাজস্ব মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। মা-বাবার মতোই কংগ্রেসের একজন সক্রিয় রাজনাীতিবিদ ছিলেন তিনি।

তবে ২০১৯ সালে কংগ্রেসের হাত ছেড়ে দেন তিনি। এনআরসি ইস্যু নিয়ে ত্রিপুরা কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা যায়। সে বছরই কংগ্রেসের সভাপতি পদ ত্যাগ করেন এবং বেরিয়ে আসেন কংগ্রেস থেকে। তারপর বেশ খানিকটা বিরতি রাজনীতি থেকে। তবে আগাগোড়াই ত্রিপুরার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর একটা জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেই কারণেই এই বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে কিং মেকার হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ত্রিপুরায় ২০ থেকে ২৫ টি আদিবাসী অধ্যুষিত বিধানসভাকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে প্রদ্যোতের এই তিপ্রা মোথাই।

তিপ্রা মোথার উত্থান:

কোনও রাজনৈতিক দল নয় প্রাথমিকভাবে তিপ্রা মোথা একটি সামাজিক সংগঠন হিসেবেই নিজেদের যাত্রা শুরু করে। দেববর্মা এই সংগঠনকে রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে একটি লড়াই বলেই উল্লেখ করেন। ২০১৯ সালে কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেন দেববর্মা। তারপরই ত্রিপুরার জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিকারের কথা তুলে ধরতে তিপ্রা মোথা নামে এই সামাজিক সংগঠন শুরু করেন।

২০২১ সালের ত্রিপুরা উপজাতি অঞ্চল স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ (Tripura Tribal Areas Autonomous District Council election) নির্বাচনের আগে দেববর্মা তাঁর সামাজিক সংগঠনকে একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা স্পষ্ট করেন। তখন থেকেই তিপ্রা মোথা সামাজিক সংগঠনের মোড়ক থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০২১ সালে আদিবাসী ন্যাশনালিস্ট পার্টি অফ টুইপ্রা (আইএনপিটি), টিপ্রাল্যান্ড স্টেট পার্টি (টিএসপি) এবং আইপিএফটি (টিপ্রাহা) টিআইপিআর-র সমর্থন পেয়েছিলেন। আর ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রথম নির্বাচনেই টিটিএএডিসি নির্বাচনে ৩০ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি জিতেছিল প্রদ্যোৎ দেববর্মার দল তিপ্রা মোথা।

এরপরই ত্রিপুরায় তিপ্রা মোথার সম্ভাবনা টের পেয়েছিল বিজেপি ও কংগ্রেস। তাই ২৩-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁরা তিপ্রা মোথার সঙ্গে জোট করার চেষ্টাও করেছিল। তবে দেববর্মা সেই আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ পৃথক বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড রাজ্যের প্রতিশ্রুতি দিতে প্রস্তুত ছিল না বিজেপি বা কংগ্রেস কোনও দলই। তিপ্রা মোথার উত্থানের আরেকটি কারণ হল আদিবাসীরা এখনও পূর্ববর্তী রাজপরিবারকে শ্রদ্ধা করে এবং তাঁরা দেববর্মাকে ‘বুবাগরা’ বা রাজা হিসাবে উল্লেখ করেন।

তিপ্রা মোথার দাবি কী?

প্রথম থেকেই ত্রিপুরার জনজাতিদের অধিকারের কথা তুলে ধরেছে তিপ্রা মোথা। জনজাতিদের অধিকার ও নিজস্বতা রক্ষার্থে বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ডের দাবি তুলে ধরেছে। দেববর্মার দল মনে করে রাজ্যের উপজাতি সম্প্রদায়ের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা রক্ষার্থে ব্যর্থ হয়েছে সব সরকার। তাই তাঁরা মনে করেন, সংবিধানের ২ ও ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ত্রিপুরার ১৯ টি উপজাতি নিয়ে পৃথক রাজ্যই এই জনজাতিদের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে পারে।

তিপ্রা মোথা তাদের ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেয়। এছাড়াও জনগণের সমস্য়ার দ্রুত সমাধান, আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে TTAADC-র ক্ষমতায়ন, ২০ হাজার নতুন চাকরি, সর্বহারাদের জমি পাট্টার দেওয়ার কথা দিয়েছে তিপ্রা মোথা।

Next Article