বনগাঁ: পঞ্চায়েতের মাঠে (Panchayat Election 2023) গোঁজ অস্বস্তিতে জেরবার রাজ্যের শাসক শিবির (TMC)। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বার বার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বলে দেওয়া হয়েছে, দলের বেছে দেওয়া প্রার্থীকেই যেন সব কর্মীরা সমর্থন করেন। কেউ দলবিরোধী কাজ করলে, বা গোঁজ হয়ে ভোটে দাঁড়ালে যে কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না, সেই বার্তাও এসেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে একাধিকবার। কিন্তু এত কিছুর পরেও গোঁজ নিয়ে মাথাব্যথা কমছে না শাসকের। তাই ভোটের মুখে কড়া পদক্ষেপও করছে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের এক নেতাকে দলবিরোধী কাজের জন্য আইএনটিটিইউসি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
সাসপেন্ড হওয়া ওই নেতার নাম গণেশ ঘোষ। আইএনটিটিইউসির বাগদা পূর্ব ব্লকের সভাপতি ছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকেলেই সাংবাদিক বৈঠক করে ওই নেতাকে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন থেকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ঘাসফুল শিবিরের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের ওই নেতার পরিবারের এক সদস্য অন্য দলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ভিতরে ভিতরে ওই নেতাও বাড়ির সদস্যের হয়ে প্রচার করছিলেন বলে খবর আসে তৃণমূলের কাছে। আর এরপরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দলের তরফে। আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা হয়েছে তৃণমূল জেলা সভাপতির।
গতকাল তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব একটি বৈঠকে বসছিল। সেই বৈঠকের পর গোঁজ প্রার্থী ইস্যুতে আরও কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন জেলার নেতারা। জেলা নেতৃত্বের তরফে, আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল যাঁরা গোঁজ হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য। সেই নির্দেশের পর অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু যাঁরা প্রত্যাহার করেননি, তাঁদের ৭২ ঘণ্টার চরম সীমা বেঁধে দিল দলের জেলা নেতৃত্ব। এই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের লিফলেট বিলি করে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নামতে হবে। নাহলে, তাঁদের দল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বের করে দেওয়া হবে। শুক্রবার বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস।
অতীতে পুরসভা ভোটের সময়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা থেকে যাঁরা গোঁজ হয়ে জিতে দলে ফেরার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের এখনও দলে ফেরানো হয়নি। সেই কথাও এদিন পঞ্চায়েতের গোঁজ প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেন জেলা সভাপতি। কড়া বার্তা দিয়ে রাখলেন, গোঁজ হয়ে ভোটে দাঁড়ালে দলের দরজা বন্ধ। আর কোনওদিন তাঁদের দলে ফেরানো হবে না।
যদিও শাসক দলের জেলা নেতৃত্বের এই হুঁশিয়ারিকে কার্যত অন্তঃসারশূন্য হিসেবেই মনে করছে বিজেপি শিবির। পদ্ম শিবিরের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডলের কথায়, ‘যেমন হাঁড়ি, তেমন সরা। যেমন দল, তেমন সৈন্য-সামন্ত।’ তবে গোটা বিষয়টিই তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই মন্তব্য করেন তিনি। গোটা বিষয়টি চোখে পট্টি পরানোর মতো করেই দেখছেন তিনি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এরাই আবার শাসক শিবিরের ‘গলার মালা’ হয়ে উঠতে পারে বলেও কটাক্ষ করেছেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক।