প্রথম ছবির রেশ ধরেই বলি ‘পারব না আমি ছাড়তে তোমাকে দিদি’: কৌশানী মুখোপাধ্যায়

utsha hazra | Edited By: বিহঙ্গী বিশ্বাস

Jun 11, 2021 | 10:07 PM

প্রথমে অভিনেতা সৌরভ দাস, তারপর অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। টলিউডের আরও এক নিউ-এজ মুখ রাজ্যের শাসকদলে। জীবনের এই নতুন ইনিংস নিয়ে কী বলছেন কৌশানী? সোজাসাপ্টা উত্তর দিলেন TV9 বাংলার প্রশ্নের।

প্রথম ছবির রেশ ধরেই বলি পারব না আমি ছাড়তে তোমাকে দিদি: কৌশানী মুখোপাধ্যায়
গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ।

Follow Us

হঠাৎ রাজনীতি কেন?

এটা একেবারেই হঠাৎ করে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত নয়। ভবিষ্যতের জন্য এই পরিকল্পনাটা বরাবরই ছিল। আজ থেকে তিন-চার বছর পর কোনও না কোনও সময় মানুষের জন্য জননেত্রী হয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম মন থেকে। সেই সুযোগটা যে এত তাড়াতাড়ি আসবে, সেটা ভাবিনি। এরকম সুযোগ পাওয়ার জন্য অনেককে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।

এই পরিকল্পনাটা কি আপনার বড় হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে তৈরি হয়েছে নাকি ইন্ডাস্ট্রিটে আসার পর মনে এসেছে?

হ্যাঁ, ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার পরই এই ভাবনা। কাজের সূত্রে এমন অনেক জায়গায় যেতাম, যেখানে যাওয়ার পথে রাস্তাঘাট দেখে অথবা সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সমস্যার কথা শুনে মনে হত, তাঁদের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম। মনে হত আমার কাছে সেই ক্ষমতা থাকলে আমি তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে পারতাম। এসব ভেবেই আমার এই পরিকল্পনা।

রাজনীতি এই শব্দটা বললে প্রথম কী মাথায় আসে?

(একটু হেসে) এক বিরাট সমুদ্র। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু আমার বললে ভুল বলা হবে, যাঁরা এই রাজনীতির মঞ্চ বেছে নিয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্য। আজ পর্যন্ত নদীর এ পারে দাঁড়িয়ে দেখেছি দিদি কাজ করছেন, দিদির সঙ্গে পার্টিতে যাঁরা য়াঁরা রয়েছেন তাঁরা কাজ করছেন। তারপর মনে হল শুধু নদীর এ পারে দাঁড়িয়ে দেখব কেন? সমুদ্রে ঝাঁপই দিয়ে দিই।

সে দিন আপনার সঙ্গে আপনার হবু শাশুড়ি-মা অর্থাৎ পিয়া সেনগুপ্ত (ইম্পার সভাপতি)-ও তৃণমূলে যোগ দেন। এই সিদ্ধান্তটা কি কোনও ভাবে শাশুড়ি মায়ের প্রভাবে (ইনফ্লুয়েন্স) নেওয়া?

না। একদমই নয়। এখানে শাশুড়ি-বউমার কোনওই ব্যাপার নেই। আমার সবসময়ই মনে হয় আন্টির (পিয়া সেনগুপ্ত) মধ্যে নেত্রী হয়ে ওঠার গুণগুলো আছে। সেই মানুষদের পাশে দাঁড়ানো কিংবা অন্যায় দেখলে চুপ করে না-থেকে তার প্রতিবাদ করা৷ আমি বরাবরই বলতাম, “তুমি কেন যোগ দিচ্ছ না?” তারপর দল থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং একই দিনে আমরা যোগ দিই।

আপনার মা-বাবা পরিবারের কেউই সিনেমা বা রাজনীতি কোনও পেশার সঙ্গেই যুক্ত নন। আপনার সিদ্ধান্তে তাঁদের কী বক্তব্য়?

আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে হার্ডকোর তৃণমূলপন্থী। রাজনৈতিক মহলে কী হচ্ছে, কোন মন্ত্রী কী বললেন—সারাদিন টেলিভিশনে এবং ফোনে বাবা রাজনীতির খবরই দেখেন৷ নিজেকে আপডেটেড রাখেন। আর সেইমতো আমাকেও আপডেটস দেন। আমার অভিনয় জীবনে আসার আসল কারণ কিন্তু আমার মা-বাবা৷ আমার চেয়েও এই পেশায় আসার জন্য ওঁরাই আমাকে বেশী ‘পুশ’ করেছেন। এক্ষেত্রেও বিষয়টা তাই-ই। জননেত্রী হয়ে উঠতে পারব কি না, এখনই বলতে পারব না। কিন্তু সেই ক্ষমতা পেলে মানুষের পাশে দাঁড়াব। তাতে আমার মা-বাবাও খুশি হবে।

বনি কী বলছে?
আমার আর বনির মধ্যে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কেরিয়ারের শুরুর দিক। তার উপর আমার বয়সটাও কম। ভেবেছিলাম বেশ কয়েকবার, এটা করা উচিৎ হবে কি না। কিন্তু বনি বলেছে, “এগিয়ে যাও। সবাই এমন সুযোগ পায় না।”

কেরিয়ারের প্রথম ইনিংসে দাঁড়িয়ে রাজনীতিতে যোগদান… কোথাও গিয়ে রিস্কি কি সিদ্ধান্তটা?

না, আমার একদমই তা মনে হয় না। আমার আগে এই ইন্ডাস্ট্রিরই মিমি, নুসরত, দেব—এঁরা কিন্তু চুটিয়ে কাজ করছে। ব্র‍্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট থেকে ছবির কাজ… সবই তো করছে। এমপির পদ পেয়ে তাঁদের তো কোনও ক্ষতি হয়নি। উল্টে আমার তো মনে হয়, একটা ক্ষমতা এসেছে যার জোরে তাঁরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন। অভিনয় সত্ত্বা কখনওই হারিয়ে যেতে পারে না। এই পরিচিতির জোরেই তো আজ ওঁরা এই জায়গায়।

টলিউড এবং রাজনীতি—বাংলার বিনোদনে এটা এখন একটা স্বতন্ত্র বিষয়। রাজনৈতিক মেরুকরণও স্পষ্ট। সোশ্য়াল মিডিয়ায় ট্রোলিং শুরু হলে হ্যান্ডেল করতে পারবেন তো?

ট্রোলিং আজ হচ্ছে না, আপনাকে কে বলল? ট্রোলিং তো প্রতিটা ছবি আপলোড করা হলে হয়… প্রতিটা ভিডিয়ো আপলোড করা হলে হয়। যাঁরা ট্রোল করার, তারা করবেই। ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগোঁ কা কাম হ্য়ায় কহেনা।’ তো কহেনে দো।

অনেকেরই ধারণা, বাংলা ছবির বাজারে মন্দার কারণে বর্তমানে সিনেমা জগতের অনেকে রাজনীতিকে সেকেন্ড কেরিয়ার অপশন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। আপনারও কী মত?

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সত্যিই খারাপ সময়ের শিকার। ছবি সত্যিই হলে গিয়ে মানুষ দেখছে না। প্রোডিউসারদের সেভাবে ব্যবসা হচ্ছে না। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যদি পলিটিক্যাল কেরিয়ার শুরু হয়, আর সেটা যদি ভালভাবে শুরু হয়, আমার মনে হয় সেটা তো তাহলে ‘চেরি অন দ্য কেক’। আর জীবনে উন্নতির কোনও শেষ নেই। একটার সঙ্গে আর একটাকে যদি ব্যালেন্স করে আমরা চলতে পারি, তাহলে তো কোনওই সমস্যা নেই। আর সেই প্রতিশ্রুতিই আমি দিয়েছি। সেকেন্ড কেরিয়ার অপশন নয়, দু’টোই আমার কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছেন?

না, একদম না। সেইসময় একদম এই সব ভাবিইনি। তবে আজ মনে হয় অনেক তরুণ, তরুণী আছে যারা বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে বসে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু বাইরে এসে কথা বলার সাহস পান না। আমাকে দেখে তারা যদি এগিয়ে আসার সাহস পায়, তাহলেই বা কম কী।

রাজনীতর মঞ্চে আপনার আদর্শ কে?

দিদি ছাড়া আর কারও কথা আমি বলতেই পারব না। প্রথম ছবির রেশ ধরেই বলি ‘পারব না আমি ছাড়তে তোমাকে দিদি’। মুখ্য়মন্ত্রী হিসেবে এই একজন মহিলাই এভাবে গোটা রাজ্য পরিচালনা করছেন।

তৃণমূলে যোগ দিয়ে আপনি বলেছিলেন, “এই দলটাকে আমি আদর্শ মনে করি। দিদির সৈনিক হয়ে দাঁড়াক আরও অনেকে।” নিজেকে ‘দিদির সৈনিক’ হিসেবে দেখে কী-কী কাজ করতে চান?

আমি কী-কী কাজ করতে চাই, সেটা পুরোটাই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের উপর। আমি কী পাব, কতটা জায়গা পাব—সবটাই ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করছে। মেয়েরা যাতে যথাযথ সম্মান পায়, বাচ্চারা যেন সমাজে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে… বিশেষত নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা-যা করার, আমি করতে চাই।

রুদ্রনীল ঘোষের বিজেপি-ঘনিষ্ঠতাকে নিয়ে কী বলবেন?

এই প্রশ্নের আমি কোনও উত্তর দিতে চাই না। এটা ওঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে আমি কোনও পলিটিক্যাল মন্তব্য এই মুহূর্তে আমি করতে চাই না।

গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ।
Next Article