হিন্দি সিনেমার অন্যতম সেরা থ্রিলার ছবি ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’। এই ছবি মুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ করেছে। রাজীব রাই পরিচালিত ১৯৯৭ সালের ছবিতে ববি দেওল এবং মনীষা কৈরালা প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। একজন অবসেসিভ প্রেমিকা থেকে সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয় করে সকলে অবাক করে দেন অভিনেত্রী কাজল (Kajol)। সেই সময় এমন একটি চরিত্র বেছে নেওয়া ছিল ‘সাহসী’ পদক্ষেপ। এমনটাই মনে করেন কাজল। যে কোনও ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে কাজলের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ‘গুপ্ত’ ছবির চরিত্রটি ছিল বেশ অন্যরকম। ‘গুপ্ত’ ছিল রাই এবং শাব্বির বক্সওয়ালার টানটান লেখা, অভিনেতাদের শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং আনন্দ বক্সীর গানের সঙ্গে ভিজু শাহের বিস্তৃত সাউন্ডট্র্যাক সহ একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ।
সাহিল (ববি দেওল),ইশা (কাজল), শীতল (মণীষা কৈরালা)-এই তিনজনকে নিয়ে গল্প ছিল ‘গুপ্ত’। সাহিল তার সৎ বাবার (রাজ বব্বর) হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত। বান্ধবী ইশা এবং বন্ধু শীতলের সাহায্যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জেল থেকে বেরিয়ে আসে সে। মুল গল্প এটি। কাজল পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এটি ছবির শক ভ্যালু হচ্ছে, চরিত্র এবং আসল সত্য যে এই ভাবে সামনে আসবে কেউ এটি আশা করেনি। সেই সময়ে এটি করা খুব সাহসী ছিল। গল্প এবং ভূমিকাই আমাকে এটি করতে বাধ্য করেছিল।”
কাজল আরও জানান, তাঁর বাবা পরিচালক সোমু মুখোপাধ্যায় পরিচালক রাইয়ের বাবা প্রযোজক গুলশান রাইয়ের বন্ধু ছিলেন। তাই পরিচালক যখন ‘গুপ্ত’-এর স্ক্রিপ্ট শোনাতে আসেন তখন তিনি উত্তেজিত ছিলেন। “আমার মনে হয় তিনি কিছুটা নার্ভাস ছিলেন কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন না যে আমি ছবিটি করব কি না। তিনি দুই ঘন্টা বসেছিলেন স্ক্রিপ্ট শোনানোর জন্য এবং প্রচুর ঘামছিলেন। কিন্তু গল্প শোনার পর তানিশা (বোন) এবং আমি দুজনেই বলেছিলাম ‘এই ছবিটি করতে হবে’। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ছিল না, এটা আমার জন্য পারফেক্ট ছিল,’ যোগ করেন ৪৭ বছর বয়সী অভিনেত্রী।
কাজল তখনও পর্যন্ত ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘বাজিগর’ আর ‘ইয়ে দিল্লাগি’-এর মতো ছবিতে মিষ্টি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি এমন নেগেটিভ চরিত্র করতে পারেন তা অনেককেই চমকে দিয়েছিল। এই ছবিতে সেরা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। এবং কাজলই প্রথম মহিলা অভিনেত্রী যিনি খলচরিত্রের জন্য পুরস্কৃত হন। তবে সেই পুরস্কারের থেকেও যেটা কাজলের কাছে বেশি ছিল তা হল, তাঁর মা এবং অভিনেত্রী তনুজার প্রশংসা। “আমার মনে আছে মা আমাকে বলেছিলেন, ‘ওহ মাই গড, কি একটা ছবি!’। এবং এটাই সর্বোচ্চ প্রশংসা যা আমি পেয়েছি, কারণ আমার মা খুব কমই আমার সিনেমা পছন্দ করেন। তিনি আমার অভিনয় পছন্দ করলেও, সিনেমা করতেন না,” যোগ করেন কাজল।
সম্প্রতি ২৫ বছর উপলক্ষে ‘গুপ্ত’-এর একটি বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানেই ছবি মুক্তির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কাজল। অনুষ্ঠানে বলি দেওল ও রাজীব রাইও উপস্থিত ছিলেন।জুলাই মাসে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজলের তিন দশক পূর্ণ হবে। রাহুল রাওয়েল পরিচালিত তাঁর প্রথম ছবি ‘বেখুদি’ ৩১ জুলাই, ১৯৯২ সালে মুক্তি পায়। তাঁর অভিনয়র যাত্রা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন যে তিনি পরিচালকদের কাছে কৃতজ্ঞ তাঁকে দুর্দান্ত চরিত্র দেওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে তাঁর অনুরাগীদের কাছেও অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।”আমি ভাগ্যবান যে আমি দুর্দান্ত সিনেমা পেয়েছি, কিছু দুর্দান্ত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি এবং সিনেমাগুলিতে দুর্দান্ত সঙ্গীত পেয়েছি। আমি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব যে আমার ভক্তরা আমাকে বিশ্বাস করেন। এবং এই সবই আমাকে ৩০ বছর ধরে এইখানে জুড়ে রেখেছে,” মনে করেন কাজল। ২০২১ সালে ‘ত্রিভাঙ্গা’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি ডিজিটালেও ডেবিউ করেছেন।