বহু বছর পর আবারও গুজরাটি ছবিতে দেখা যাবে আপনাকে। কেমন অনুভূতি?
প্রথমত এই ছবি আমার মাতৃভাষায় তৈরি। তাই এমনিতেই খুব স্পেশ্যাল। আমার নাটকের উপর কেন্দ্র করেই এই ছবি তৈরি হয়েছে। যে নাটকটি আমরা মঞ্চস্থ করেছিলাম ৯ অক্টোবর, ২০১১ সালে। এই এগারো বছরে আমরা এখনও পর্যন্ত ৪৩০টি শো করেছি বিশ্বজুড়ে। এই গল্পটা আমার মনের খুবই কাছের। তাই আমি বহুদিন ধরেই সেলুলয়েডে এই গল্পটি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত, আমি ভাল প্রযোজকও পেয়েছি। শুধু তাই-ই, নয় বহুদিন থেকে নিজের মাতৃভাষায় ভাল কাজ করার ইচ্ছে ছিল। আমার বিশ্বাস, গুজরাটি দর্শকদের মতো বুদ্ধিদীপ্ত দর্শক খুব কম দেখা যায়।
এই কয়েক বছরে খলনায়ক, কমেডিয়ানের মতো বিভিন্ন চরিত্রে আপনাকে দেখেছে দর্শক। এই ছবিতে কোন নতুন পরেশ রাওয়ালকে আবিষ্কার করবে দর্শক?
দেখুন, আপনি যদি ভাল কাজ করেন, তাহলে মানুষের প্রত্যাশা বাড়বেই। আর খারাপ কাজ করলে কেউ ফিরেও তাকাবে না। ভগবানের আশীর্বাদে এবং আমার সহকর্মীদের সাহায্যে আশা করি আমি দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি। তারাও আমার থেকে নতুন কিছু আশা করে। থ্রিলারের মোড়কে সম্পর্কের এক অন্য সমীকরণ দেখানো হয়েছে এই ছবিতে। এই ছবিটা একটা প্যাকেজ। সবরকমের উপাদান পাবে দর্শক।
শেষ দু’বছরে পৃথিবীর টালমাটাল পরিস্থিতি দেখেছে সবাই। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই ছবি কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয়?
দেখুন, শেষ দুবছর আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছি। এবং অতিরিক্ত ‘ফ্যামিলি টাইম’-ও কিন্তু সমস্যার। সারাক্ষণ বাড়িতে থাকলে দেখবেন ছোট-ছোট কথাও বিশালাকার ধারণ করে। তবে প্যান্ডামিকের একটি আশীর্বাদ হল এই কয়েক বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সৌজন্যে দর্শকের স্বাদ বদলেছে। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের। তাই-ই এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই ধরনের ছবি দাগ কাটবে বলে আমার ধারণা।
যেমনটা বলছিলেন, একটানা বাড়িতে থাকা, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোও বিপত্তি। আপনার বাড়িতেও কি খুঁটিনাটি ঝামেলা হতো?
হ্যাঁ, কেন হবে না? আগে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতাম। বাচ্চারা বেরিয়ে যেত। কিন্তু কোভিড আসার পর, চারিদিকে শুধু একই কথা। টিভিতে একই খবর। কাগজের পাতাতেও একটাই ইস্যু। এত অনিশ্চয়তা, হতাশাজনক পরিস্থিতি সবকিছুই প্রভাব ফেলত। মানসিকভাবে বিশেষত।
কঠিন পরিস্থিতিতে, পরিবারকে খুশি রাখতে আপনি কী করতেন?
সৌভাগ্যবশত, আমার পরিবারে সবাই পড়াশোনা করতে খুব ভালবাসে। কতক্ষণ আর আপনি নেটফ্লিক্স দেখবেন? একটা সময়ের পর নেটফ্লিক্সও আমার দূরদর্শনের মতোই লাগতে শুরু করেছিল। মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সমতা বজায় রাখাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
কী মন্ত্র ছিল?
মাথা ঠাণ্ডা রাখাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমি যদি স্ট্রেস নিই, তাহলে পরিবারের সবাই চিন্তিত পড়বে।
স্ত্রী স্বরূপ সম্পতকে এই পরিস্থিতিতে কীভাবে দেখলেন?
বাড়ির কাজে সারাদিন মশগুল তো থাকতেন। শুধু তাই-ই নয়, পনেরো দিন লাইফ স্কিলের চর্চা করিয়েছিলেন শিশুদের। তাদের ওয়ার্কশপ, খেলাধুলোতে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন। ৭৫টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথোপকথন করেছিলেন। স্বরূপ সারাক্ষণ পড়াশোনার মধ্যেই থাকত।
সময়ের সঙ্গে গুজরাটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি জগতে এক বিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমরা যদি সাত-আট বছরের যাত্রাপথ দেখি, এই শহুরে ছবি বা গ্রামীণ ছবির মধ্যে আমার কোনও পার্থক্য মনে হয়। আমি মনে করি ছবি ভাল আর খারাপ হতে পারে। সত্যি বলতে এই মুহূর্তে বেশ ভাল-ভাল ছবি তৈরি হচ্ছে গুজরাটিতে। খারাপ ছবি সব ইন্ডাস্ট্রিতেই তৈরি হয়। তবে আপাতত ছবির ভাষা বদলাচ্ছে, ছবির ধরন বদলাচ্ছে। নতুন পরিচালকেরাও ভাল কাজ করছেন। গুজরাটি ছবির জন্য এখন সত্যিই সুসময়।
শেষ কয়েক বছরে ওটিটির রমরমা। নতুন-নতুন ট্যালেন্ট উঠে আসছে। নতুন মাধ্যম নিয়ে কী বলবেন?
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম… এই নতুন মাধ্যম, নতুন সুযোগ দেখে আমি খুবই আপ্লুত। যেমন পঙ্কজ ত্রিপাঠি, যে কোনও বড় স্টারদের সমকক্ষ তিনি। বলিউড স্টারডমের সঙ্গে কোনও পার্থক্য নেই।
অভিনেতার পাশাপাশি আপনি তো নেতাও ছিলেন,কেন তারপর পিছিয়ে এলেন?
যে কাজ আমি করতে পারব না, যে কাজে আমি সময় দিতে পারব না, সেটা না করাই উচিৎ। সেই কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে আসাই উচিৎ। আর সময়ও থাকত না।
২০১৪-২০১৯ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
খুব ভাল, প্রচুর কিছু শিখেছি। এখনও শিখে চলেছি। আমরা সত্যিই ভাগ্যবান যে আমরা এমন পথ-প্রদর্শক পেয়েছি।
এই পাঁচ বছরে আপনাকে কী কী কাজ করতে হয়েছে?
অনেক কিছু। প্রতি বছর রিপোর্ট জমা দিতে হতো। কী করেছি না করেছি। যা কংগ্রেসের আমলে ছিল না। মোদীজির তত্ত্বাবধানে যে সমস্ত সাংসদরা কাজ করেন, তাঁরাই জানেন কী পরিমাণ চাপে কাজ করতে হয়। আমাদের প্রচুর প্রোগ্র্যাম হয়। সেগুলোর ফলো আপও হয়।
এত বছরের কেরিয়ারে পারিশ্রমিকের ফারাক হয়েছে কখনও?
হ্যাঁ, হয়েছে। কী করা যাবে। তবে এই বিষয়গুলি নিয়ে আমি একটুও ভাবিত নই। আমার ভাগ্যে যা আছে আমি তাই-ই পাব। হ্যাঁ কাজের ক্ষেত্রে কেউ ভাল করলে মনে হয় আমি এটা করতে পারলাম না। বড়স্টারের বি এম ডাব্লুউ দেখলে মন খারাপ হয় না। ইরফানের সিন দেখলে ঈর্ষা হয়।