বলিউড অভিনেতা রাজ কুমার (Raaj Kumar)। তাঁর স্টাইল আভিজাত্য নিয়ে বরাবরই বি-টাউনে কথা হত। পুলিশের চাকরি ছেড়ে তিনি সিনেমায় আসেন। তাঁর গলার একটা অদ্ভুত টোনিং ছিল, যা আর পাঁচজন থেকে আলাদা করত। অনেক তাঁকে অহঙ্কারী বলেও দাবি করতেন। তিনি সব সময় নিজের নিয়মে কাজ করে গিয়েছেন। ১৯৫২ সাল ‘রঙ্গিলি’ ছবি দিয়ে বলিউডে ডেবিউ করেন রাজ কুমার। ১৯৯৬ সালে গলার ক্যান্সারে মারা যান। তাঁর মৃত্যর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বলিউডের কোনও সেলিব্রিটি আসুক, তা চাইতেন না তিনি। এই কথা তিনি একবার তাঁর পরিচালক মেহুল কুমারকে বলেছিলেন। পরিচালক যখন রাজের সঙ্গে ১৯৮৭ সালে ‘মর্তে দম তক’ ছবির একটি দৃশ্যের শুটিং করছিলেন সেই সময় এই কথা ভাগ করেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি পরিচালক এক সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনার উল্লেখ করেন। রাজ কুমার কেন চাইতেন না তাঁর শেষকৃত্য বলিউডের মানুষজন আসুক? রাজের মতে, “তামাশা বনা দেতে হ্যায়”। পুরো ঘটনার উল্লেখ করেন পরিচালক- ‘মর্তে দম তক’ ছবির শেষ শটটি ছিল রাজের শেষকৃত্যের মিছিলের, যা খান্ডালায় হোটেল ফারিয়াসের বাইরে শুট হচ্ছিল। রাজ জোর দিয়েছিলেন মেহুল যেন তাঁর ‘শরীরে’ একটি মালা পরান। মেহুল স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “সে ভ্যানে শুয়ে ছিল এবং আমি তাঁর গায়ে মালা পরিয়েছিলাম। রাজ সাব মজা করে বললেন, ‘জানি, (রাজ কুমারের বিখ্যাত সংলাপ) এখন পরিয়ে নাও মালা, কারণ যখন আমি চলে যাব টেরও পাবে না’। সেই মুহুর্তে আমি বেশি কিছু বলিনি, শুধু তাঁকে বলেছিলাম, ‘আশা করি আপনি দীর্ঘজীবী হন”।
কিন্তু রাজের সেই কথা মেহুলের মনে প্রশ্ন এনেছিল, কেন তিনি এমন কথা বললেন। তাই প্যাক আপ করার পরে তিনি যান অভিনেতার কাছে, প্রশ্ন করেন কেন তিনি অমন কথা বললেন? “তিনি বলেছিলেন ‘জানি, তুমি জানো অন্ত্যেষ্টিযাত্রাকে ‘তামাশা’ করে তোলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির লোকজন’ মানুষ সাদা পোশাক পরে আসবে, তারপর সংবাদ মাধ্যমও আসবে। মৃত্যুবরণকারীকে সম্মান না দিয়ে ‘তামাশা’ হয়ে যায়। আমার অন্ত্যেষ্টিযাত্রা আমার পরিবারের জন্য। আমার পরিবার ছাড়া কেউ এতে অংশ নেবে না”, এমনটাই চাইতেন রাজ। দুই বছর গলার ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর অভিনেতা ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে মারা যান।
১৯৫২ সালে শুরু করে রাজ কুমার তাঁর ক্যারিয়ারে ৭০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ (১৯৫৭), ‘হামরাজ’ (১৯৬৭), ‘হীর রাঞ্ঝা’ (১৯৭১), ‘মরিয়দা’ (১৯৭১),‘পাকিজাহ’ (১৯৭২) সহ আরও অনেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। উত্তমকুমার অভিনীত জনপ্রিয় ছবি ‘লাল পাথর’-এর হিন্দি রিমেক ‘লাল পাত্থর’ (১৯৭১) ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। সেই ছবিও খুব জনপ্রিয় হয়।
রাজের শেষ ছবি ছিল ‘গড অ্যান্ড গান’ যা ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায়। ছবিতে তিনি ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন রাজ বব্বর, জ্যাকি শ্রফ, গৌতমি। তাঁর ছেলে পুরু রাজ কুমারও একজন অভিনেতা, ‘মিশন কাশ’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। তবে বাবার মতো জনপ্রিয়তা পান পুরু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে।