একের পর এক বলিউডের হিন্দি ছবি বক্স অফিসে অসফল। সিনেমা বিশেষজ্ঞ, ট্রেড অ্যানালিস্ট, সিনেমা হল মালিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ইতিমধ্যেই। সকলেই এর কারণ খুঁজতে নেমে পড়েছেন ময়দানে। ২০২২ সালে প্রথম ৮ মাস শেষ। অমিতাভ বচ্চন, অজয় দেবগণ, আমির খান, অক্ষয় কুমার, রণবীর কাপুর থেকে রণবীর সিং, আয়ুষ্মান খুরানা, টাইগার শ্রফ সকলেই বক্সি অফিসে নিজেদের করিশ্মা দেখাতে ব্যর্থ। বিশেষ করে অক্ষয় কুমার অভিনীত তিন তিনটে ছবির গায়ে ফ্লপের তকমা পড়ে গিয়েছে। আলিয়া ভাট, কার্তিক আরিয়ান, বরণ ধাওয়ান শুধুমাত্র মুখ রক্ষা করেছেন। তিন জনের ছবি ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিওয়ারি’, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ আর ‘যুগ যুগ জিও’ বক্স অফিসে শুধু সফলই নয়, ১০০ কোটির ক্লাবেও নাম লিখিয়েছেন। কার্তিক এবং বরুণ-দুইজনের বিপরীতেই নায়িকা ছিলেন কিয়ারা আডবাণী।
এছাড়া বলিউডের বাকি ছবির অবস্থা খুব খারাপ। কেন এমন হচ্ছে এই নিয়ে বিশ্লেষণে বলিউড। এর আগেও অনেকবার বাঁধার মুখোমুখি হয়েছে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, যার বিপরীতে থেকেছে একটি পরিবর্তন, এমনটাই খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। জানুয়ারী ২০২১ সাল থেকে ৪৩টি হিন্দি সিনেমার গড় রেটিং ছিল মাত্র ৫.৯, ১৮টি হিন্দি ডাব করা সিনেমার ৭.৩ রেটিং থেকে অনেক নিচে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ইকোনমিক রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট অনুসারে, একটি সাধারণ হিসেব ইঙ্গিত করছে যে অতিরিক্ত এক পয়েন্ট আইএমডিবি রেটিং ১৭ কোটি টাকা বেশি সংগ্রহের দিকে নিয়ে যায়।
সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল হ্রাস পেয়েছে এবং সিনেমাগুলো এখন মাল্টিপ্লেক্সেই মুক্তি পাচ্ছে। একটি মাল্টিপ্লেক্সে টিকিটের মূল্য একক পর্দার সিনেমা হলের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি। দামি টিকিটের দামও হিন্দি সিনেমার জন্য উচ্চ বিনোদন করের কারণে।ঘটনা হচ্ছে ৬২ শতাংশ সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হল দক্ষিণ ভারতে, যেখানে উত্তর ভারতের অংশ মাত্র ১৬ শতাংশ এবং পশ্চিমে সমস্ত সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলের ১০ শতাংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা (স্থানীয় এলাকায়) সম্প্রতি বলিউডের সিনেমার চেয়ে বেশি আয় করছে যার একটা কারণ এটিও হতে পারে।
আর একটি কারণ হিসেবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিও ধরা হচ্ছে। কারণ সেখানে বিভিন্ন ঘরানার যেমন অ্যাকশন, হরর, নাটক, থ্রিলার এবং কমেডি নানা ধরনের ছবি রয়েছে। লক ডাউনের সময় এমন প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রভাব দর্শকদের উপর প্রবল পড়েছে। দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলিতে উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলির তুলনায় বয়স্ক লোকদের বেশি ভাগ রয়েছেন যাঁরা এখনও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের চেয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। ওটিটি-র জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি সিনেমার দর্শক এবং লাভের অংশ সবটাই কেড়ে নিচ্ছে। কারণ ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এক মাসে ৫ ঘন্টার বেশি ওটিটি ব্যবহার করেন, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অর্থনৈতিক গবেষণা বিভাগের একটি রিপোর্ট এমনটাই দাবি করেছে। এছাড়াও স্মার্ট টিভি, ক্রোমকাস্টের মতো বিকল্পগুলো ছবিতে আসছে যা বিনোদনের ঐতিহ্যগত মোড়ককে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। এই উন্নয়নগুলি বাড়িতেই সিনেমার হলের অভিজ্ঞতা আনতে সাহায্য করছে, ফলে দর্শক বেশি টাকার টিকিট কেটে সিনেমা দেখার থেকে বাড়িতেই সকলের সঙ্গে ছবি দেখছে বলে রিপোর্ট জানাচ্ছে।
ভারতীয় বিনোদন শিল্পে একটি বড় বাধা হল ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) এর উত্থান, যা বিনোদন শিল্পের প্রায় ৭-৯ শতাংশ ভাগ করে এবং ৪০ টিরও বেশি এই মাধ্যম সমস্ত ভাষায় সিনেমা দিচ্ছে। রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ৪৫ কোটি ওটিটি গ্রাহক রয়েছে নএবং ২০১৩-এর শেষ নাগাদ এটি ৫০ কোটিতে পৌঁছবে বলেই আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ সিনেমা শিল্পের উপর আরও চাপ পড়তে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।