একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে আলাপ। প্রায় ২৫-২৬ বছর চেনা। কাজ করতে করতে কখন বন্ধুত্ব, দাদা-বোনের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে, তা বুঝতেই পারেননি, প্রিয় দাদার মৃত্যুতে এভাবেই স্মৃতিচারণ করলেন অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৯৫ সালে সম্ভবত প্রথম কাজ। একসঙ্গে কত কাজ করেছি, গুনে বলতে পারব না। কখনও নায়ক, তো কখনও দ্বিতীয় হিরো আমার ছবির। কিন্তু কাজের সঙ্গে সম্পর্কের কোনও দিন সংঘাত হয়নি। কাজ করতে করতে কখন এত ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। আমদের চার জনের একটা গ্রুপ ছিল। আমি, মিঠুদা, কৌশিক দা (বন্দ্যোপাধ্যায়), লাবণীদি (সরকার)। একজন কমে গেল। জানি একদিন সকলকেই যেতে হবে, কিন্তু তাই বলে এত তাড়াতাড়ি। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আড্ডা-খাওয়া লেগেই থাকত।
আমি মাঝে কলকাতা ছেড়ে বাইরে ছবি করতে যাই। যোগাযোগ এখটু ছিন্ন হয়েছিল। কারণ দাদাও সেই সময় কাজ করছিল না। কিন্তু ফিরে আসার পর যে মানুষগুলো খোঁজা রাখতেন, তিনি অন্যতম। আমাদের জগতে তো কাজের বাইরে খোঁজ নেওয়ার মানুষ খুব কম, সেই সংখ্যায় ছিলেন তিনি। আসলে কোনও স্বার্থ নিয়ে আমাদের ৪ জনের বন্ধুত্ব তৈরি হয়নি।
আক্ষেপ একটা, অভিযোগও বলা যেতে পারে, কেন এমন তাড়াতাড়ি চলে গেলে। জানি ইন্ডাস্ট্রির উপর অনেক অভিমান ছিল, কিন্তু তোমার যাঁরা কাছের মানুষ ছিলেন, তাঁদের কথা ভাবলে না একবার। আর কেউ নয়, মেয়ে-বউয়ের কথাও ভাবলে না দাদা। তুমি তো তাঁদের কত ভালবাসতে।সম্বোন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল দাদার। কত আনন্দ করেছি। ডলকে (মেয়ে) চোখে হারাত। কী করে গেলে ছেড়ে!
নিজের মনের কথা কখনও বলতে চাইতেন না। হাসি-আনন্দের মধ্যে ভিতরে লুকিয়ে রাখা দুঃখ ভিতরে নিয়েই চলে গেলে। দেখতেও পেলে না, কত মানুষ তোমায় ভালবাসে। তোমার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না কত মানুষ। কত প্রশ্ন তোমায় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
এগুলো জানলে বোধহয় নেশা করে নিজের জীবন বিপন্ন করত না দাদা। কৌশিকদা বন্ধু। প্রায় ৪০ বছরের উপর তাঁদের বন্ধুত্ব। কত বোঝাতো, যা হয়ে গিয়েছে, ফিরে আসবে না। ভুলে যেতে বলত। কিন্তু বলত, সব কী ভোলা যায়! পারল না মিঠুদা পুরোন ক্ষত থেকে বের হতে। বুঝল না, ক্ষতি করে কারও ভাল হয় না, যাঁরা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, উপরওয়ালা তাঁদের শাস্তি দেবেন। তুমি মানুষের ভালবাসা পেয়েছ। এর চেয়ে বড় পাওনা একজন অভিনেতার আর কী হতে পারে।