সম্প্রতি সোশ্য়াল মিডিয়ায় (Social Media) ঘোরাফেরা করছে একটি ছবি। ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কেওড়াতলা মহাশ্মশানের একটি ফটোতে ‘লাভ’ ইমোজি দিয়ে ইংরেজিতে লেখা ‘আই লাভ কেওড়াতলা (I love Keoratala)‘। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। শ্মশান কি কেউ ভালবাসতে পারে? এই প্রশ্ন তুলে সরকারকে দুষছে নেটপাড়ার একাংশ। যদিও লালবাজার তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই পোস্ট সম্পূর্ণ ভুয়ো অর্থাৎ ফেক। যে দু’জনের প্রোফাইল ব্যাবহার করে কেওড়াতলা মহাশ্মশান নিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় মিথ্যে পোস্ট ছড়ানো হয়েছে, ই-মেল মারফত তাঁদের নোটিস করেছে কলকাতা পুলিশ। পুরসভার তরফে টালিগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (CM Mamata Banerjee) এই পোস্টের তীব্র নিন্দা করেছেন। এই বিতর্কের মাঝেই TV9 বাংলা খোঁজ নিল কোথা থেকে এসেছে এই আসল ‘আই লাভ’ চিহ্ন? ইতিহাস জানলে অবাক হবেন আপনিও।
কলকাতা থেকে শুরু করে গোয়া, দার্জিলিং থেকে হায়দরাবাদ—আজকাল সর্বত্র তাকালেই এই লাভ ইমোজি দেওয়া সাইনেজ বা চিহ্ন চোখে পড়বে। এই ‘আই লাভ’ সাইনেজ খুবই ট্রেন্ডিং একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। নিন্দুকেরা আবার বলেন, কলকাতার মতো শহরে যত্রতত্র এর ব্যবহার অবশ্য বর্জনীয়। পাড়ার মোড় থেকে শুরু করে ওয়ার্ড—এ দিক, ও দিক, সে দিক… সর্বত্রই এই ‘আই লাভ’ চিহ্নের ছড়াছড়ি। কিন্তু কী এই ‘আই লাভ’ সাইনেজের উৎস? শুনলে অবাক হয়ে যাবেন আপনিও। সর্বপ্রথম এই চিহ্নের ব্য়বহার হয়েছিল নিউ ইয়র্কে। পেশায় গ্রাফিক্স ডিজ়াইনার মিলটন গ্লেসার (Milton Glaser) ১৯৭৭ সালে প্রথম এই লোগো তৈরি করেন। সে সময় অপরাধমূলক কাজে ভরে গিয়েছিল নিউ ইয়র্ক। তখন পর্যটকদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাঁদের নিউইয়র্কমুখী করার উদ্দেশেই এই লোগো তৈরি করেছিলেন ওই শিল্পী। একটি সাক্ষাৎকারে মিলটন বলেছেন, “যখন আপনি মনে করেন এই ধরনের কাজ করে পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব, তখন তেমনটাই করা উচিত।” প্রসঙ্গত, একটি ক্যাবে চড়ার সময় গ্লেসারের মাথায় এসেছিল এই ‘লাভ’ আইডিয়া। বিভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করে টি-শার্ট, কফি কাপ—সব জায়গায় এই লোগোর ব্যবহারের পর নিউ ইয়র্ক শুধুমাত্র নিজেদের ব্যবহার করার জন্য় ‘উই লাভ নিউইয়র্ক সিটি’ লেখা একটি লোগো লঞ্চ করেছে, যার ডিজ়াইন বাজার চলতি আই ‘আই লাভ’-এর থেকে অনেকটাই আলাদা।
গ্লেসারের তৈরি-করা এই লোগো অচিরেই আখ্যা পায় ‘the most frequently imitated in history’ হিসেবে অর্থাৎ মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হওয়া চিহ্ন বা লোগো। নিউ ইয়র্ক শহরকে একপ্রকার ‘মেকওভার’ দিয়েছিল গ্লেসারের এই লোগো। ১৯২৯ সালে নিউ ইয়র্কে জন্ম নিয়েছিলেন গ্লেসার। ম্যানহাটানের কুপার ইউনিয়ন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড আর্ট (Cooper Union for the Advancement of Science and Art)-এ পড়াশোনার পর তিনি চলে যান ইতালির বোলোগ্না (Bologna)-য়, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ। কুপার ইউনিয়নের তিন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৫৪ সালে গ্লেসার স্থাপন করেন তাঁর স্টুডিও Push Pin Studios।
১৯৭৪-এ গ্লেসার তৈরি করেন তাঁর নিজের ডিজ়াইন সংস্থা: Milton Glaser, Inc। এর তিন বছর পর, অর্থাৎ, ১৯৭৭-এ অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নিউ ইয়র্কে ট্যুরিজ়ম-ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ডিজ়াইন করেন তাঁর বিখ্যাত ডিজ়াইন: “I ♥ NY”। ক্যাবে যেতে-যেতে যে খামের উপর লাল ক্রেয়ন পেন দিয়ে গ্লেসার এই ডিজ়াইনটি করেছিলেন, সেই খামটি এখনও রাখা Museum of Modern Art (MoMA)-তে। নিতান্ত খেলার ছলে আঁকা এই ডিজ়াইন যে এই ধরনের সেনসেশন হয়ে উঠবে, তা কে-ই বা আঁচ করতে পেরেছিল? 9/11-এর পর গ্লেসার তাঁর বিখ্যাত সেই ডিজ়াইনে এনেছিলেন একটা বদল, যা সন্ত্রাসবাদীদের জন্য ছিল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী: “I ♥ NY MORE THAN EVER“। “I ♥ NY MORE THAN EVER“. ২০২০ সালে ৯১ বছর বয়সে মৃত্য হয় গ্লেসারের।