Rath Yatra 2022: ‘বসেছে আজ রথের তলায়, স্নানযাত্রার মেলা’, কোথায় গেল সেইসব রথতলা?

megha |

Jun 30, 2022 | 3:22 PM

Rath Yatra in Bengal: খেয়াল করে দেখুন তো, আপনার বাড়িতে বা পাড়ায় থাকা খুদেরা রথের বিকেলে রথ টানতে বেরোয় কি? সেই একই উন্মাদনা কি দেখতে পান?

Rath Yatra 2022: বসেছে আজ রথের তলায়, স্নানযাত্রার মেলা, কোথায় গেল সেইসব রথতলা?

Follow Us

মেঘা মণ্ডল

রাত পোহালেই রথযাত্রা। আষাঢ় মাসের শুক্ল দ্বাদশীর দিন জগন্নাথ যাবেন তাঁর মাসির বাড়ি। সঙ্গে যাবেন বলরাম আর সুভদ্রা। এই মুহূর্তে এঁদের থেকেও বেশি খুশি আরও তিন খুদে ভাই-বোন। কাল সকালে তারা ফুল-পাতা দিয়ে তিনতলা রথ সাজাবে। বিকেলে একসঙ্গে রথ টানতে-টানতে যাবে পাশের পাড়ার মেলায়। সেখানে নাকি বড় নাগরদোলা এসেছে। বিক্রি হচ্ছে লাল-নীল মাছ। মেলায় গেলে পেট ভরে খাওয়া যাবে পাপড়, জিলিপি। পড়ে খুব ‘জিয়া নস্ট্য়াল’-অনুভূতি হচ্ছে? যদিও সেটাই স্বাভাবিক। কারণ রথতলার সঙ্গে কমে গিয়েছে রথের মেলার রেশটাও।

১০ বছর আগেও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে মেলা বসত। কিন্তু এখন খেয়াল করে দেখুন তো, আপনার বাড়িতে বা পাড়ায় থাকা খুদেরা রথের বিকেলে রথ টানতে বেরোয় কি? সেই একই উন্মাদনা কি দেখতে পান? না, সেই রথযাত্রার সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে রথের মেলাও।

যতদূর জানা যায়, শ্রীচৈতন্যে দেবের সময় থেকে বাংলায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে রথযাত্রা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা বিশ্বখ্যাত হলেও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রথযাত্রা পালিত হয় শ্রীচৈতন্যেদেবের সময়কাল থেকে। একটু খেয়াল করে দেখুন, যে-যে অঞ্চলে রথ রয়েছে বা একসময় যেখানে ধুমধাম করে রথযাত্রা পালিত হত, সেই জায়গার আঞ্চলিক নাম ‘রথতলা’। এমন ‘রথতলা’ আপনি বাংলায় কয়েকশো পেয়ে যাবেন। এমনকী রবীন্দ্রনাথের কবিতাতেও পাওয়া যায় রথতলার প্রসঙ্গ, ‘বসেছে আজ রথের তলায়, স্নানযাত্রার মেলা’… কিন্তু রথ থাকত বলেই কি সেটা রথতলা?

প্রাচীন কলকাতা বিশারদ গৌতম বসুমল্লিকের কথায়, “এমন কিছু রথ রয়েছে যেগুলো খোলা আকাশের নীচে রাখা যায়। কিন্তু এমন বহু রথ রয়েছে যেগুলো খোলা আকাশের নীচে রাখা যায় না। যেখান দিয়ে রথ টানা হবে, সেই রাস্তার কাছেপিঠের কোনও স্থানে রথ রাখা হয়। রথের চারিদিক ঢাকা অবস্থায় রাখা হয় যাতে রথ বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়ে যায় (কাঠ আর লোহা দিয়ে তৈরি হয় এই আবরণ)। যেহেতু রথের তলা, তা-ই এই অনুসারে জায়গার নাম হয় ‘রথতলা’। অর্থাৎ রথ যে জায়গার নীচে রাখা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে তলা। এভাবেই জন্ম একাধিক ‘রথতলা’-এর।”

প্রথমদিকে, শ্রীচৈতন্যে দেবের ভক্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল রথযাত্রা। তারপর সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসতে শুরু করে। তাছাড়া মেলা মানেই মিলনস্থল। সেই মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরেও মিলত নানা সামগ্রী। পাশাপাশি থাকত কিছু বিনোদনের উপকরণও। হয়তো নাগরদোলা নয়, কিন্তু অন্য কোনও খেলার জিনিস। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, মানুষ তখনই মেলার আয়োজন করত, যখন হাতে টাকা থাকত অর্থাৎ আর্থিক পরিস্থিতি যখন একটু উন্নত হত। কারণ সপ্তাহের অন্যান্য হাটবারের তুলনায় রথের মেলায় বিকিকিনি বেশি হত। এরপর গ্রামগুলো ধীরে-ধীরে নগরে রুপান্তরিত হতে শুরু করল। যত নগরায়ন হল, এর সঙ্গে এই মেলার ধারণাও পরিবর্তিত হল। ধীরে-ধীরে মেলার সংখ্যাও কমে গেল।

শুধু রথ নয়, এখন চড়ক, রাসের মতো বাংলার অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যে সব মেলাগুলো হত, সেগুলোরও পরিমাণ কমে গিয়েছে। এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া যেগুলো জরুরি সামগ্রী, সেগুলোও সহজেই পাওয়া যায়। পাশাপাশি এখন মেলা শুধুমাত্র বিনোদনকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজোকে কেন্দ্র করে এখনও মেলা বসে ঠিকই, কিন্তু সেখানে স্পনসরশিপও লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং সেই রঙিন দিন ফিরে পাওয়া এই ক্ষেত্রে বেশ কঠিন। আরও যত দিন যাবে এই ‘স্পনসরশিপ’ মেলার সংখ্যাও কমবে।

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ

Next Article