‘মাতৃদুগ্ধ’ কথাটার মধ্যে কার্যত স্পষ্ট বাবার শূন্যস্থান। তবে আধুনিক দিনে সেই চিরাচরিত ধারণায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। আজকাল চিকিৎসকেরা মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময় মায়ের দোসর হিসেবে বাবার ‘পরোক্ষ’ অংশগ্রহণের উপরও জোর দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে মায়ের জন্য—যিনি ইতিমধ্যেই শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন—প্রক্রিয়াটি আরামদায়ক হয়ে উঠতে পারে সহজেই।
কী বলছেন বিশিষ্ট প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ আমোদিতা আহুজা? তাঁর মতে, যদি একজন নতুন বাবা মাতৃদুগ্ধ পান করাতে ব্যস্ত মাকে সাহায্য করার প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে মা এবং বাবা—দু’জনের সম্পর্কই সুদৃঢ় হয়।
কী-কী উপায়ের কথা বলছেন আহুজা—যিনি একাধারে একজন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জেন এবং বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞও?
শিশুকে জামা কাপড় পরানো, ডায়াপার চেঞ্জ করে দেওয়া:
মা যখন শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে ব্যস্ত থাকবেন, বাবা সেই সময় শিশুর ঢেঁকুর উঠলে সদ্য়োজাতকে সাহায্য করতে পারেন। এ ছাড়াও মা যদি শিশুকে স্নান করান, তখন বাবা সন্তানকে জামা-কাপড় পরিয়ে দিতে অথবা তার ডায়াপার বদলে দিতে পারেন।
শিশুকে ফিডিং বোতল থেকে দুধ খাওয়ানো:
যদি মা কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বা ক্লান্ত থাকেন, সেই সময় বাবারা সবচেয়ে উপযোগী হতে পারেন শিশুকে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে। বোতলে দুধ নিয়ে শিশুকে সঠিক সময়ে যদি খাওয়ানো যায়, তাহলে শিশুর যথাযথ পুষ্টির পাশাপাশি বাবার সাথে তার সম্পর্কও গড়ে উঠবে।
মায়ের পুষ্টির খেয়াল রাখা:
মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময় মায়ের পুষ্টির খেয়াল রাখা খুব জরুরি। একজন মাকে প্রচণ্ড সচেতন হতে হবে এই ব্যাপারে। কিন্তু শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় এই কথা ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই-ই এই ব্যাপারে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বাবাকে। শিশুর মা যাতে সময় মত খাবার এবং যথাযথ আরাম পান, সেটা দেখার দায়িত্ব কিন্তু প্রাথমিকভাবে বাবার। এমনটা হলে মা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিশুর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেই আরও ‘ফোকাসড’ থাকতে পারবেন।
বাড়ির কাজ (রান্না, বাড়ি পরিস্কার রাখা) করা:
শিশুর জন্মের পর, বাড়ির বিভিন্ন টুকটাক কাজগুলিতে বাবাদের অংশগ্রহণ খুব জরুরি। আজকের দিনে অধিকাংশ পরিবারই একাকিত্বে ভোগে। সাহায্যের কেউ থাকে না। সেই কারণেই যদি বাড়ির নিত্যনৈমিত্তিক কাজগুলো—যেমন, রান্না করা, বাড়ি পরিস্কার রাখা ইত্যাদি—বাবারা করতে পারেন, তাহলে মায়েদের অনেক সুবিধে হয়। ব্য়াপারটা আপাতদৃষ্টিতে কঠিন হলেও, নিজের স্ত্রী আর শিশুর সুবিধার্থে ধৈর্য্য় নিয়ে এটা করতে পারাতেই একজন স্বামী আর বাবার সাফল্য।