প্রয়াত নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্করের ১০৩ বছরের জন্মদিন পালিত হয় সাংস্কৃতিক উৎসবের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘অমলিন অমলা’। দ্বৈত নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ডান্স গ্রুপ ফেডারেশন। গত ৩ জুলাই সল্টলেক অঞ্চলের ওকাকুরা ভবনে উদযাপিত হয় নৃত্য উৎসব। শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে নৃত্য পরিবেশন করেন ৫২জন শিল্পী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন অমলা শঙ্করের জামাই, তথা সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক এবং অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের স্বামী চন্দ্রোদয় ঘোষ। বিখ্যাত ওডিসি নৃত্য শিল্পী সুতপা তালুকদারকে এদিন সংবর্ধিত করা হয়। অমলা শঙ্করের প্রতিকৃতিতে পুষ্প দান করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। চন্দ্রোদয় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি পার্বতী গুপ্ত, সুস্মিতা নন্দী, ডঃ অর্কদেব ভট্টাচার্য, কাশ্মীরা সামন্ত, আলোকপর্ণা গুহরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রীমতী অমলা শঙ্করের জীবনের কিছু ঘটনা নিয়ে একটি নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন এদিন। অনুষ্ঠান চলাকালীন চন্দ্রোদয় ঘোষ জানান, কলকাতার বাইরের শিল্পীরাও নৃত্য পরিবেশ করতে এসেছেন। এ ফেডারেশনেরই জয়।
সংবাদ মাধ্যমকে চন্দ্রোদয় ঘোষ এও বলেছেন, “রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনের প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ ছিল। এটাই আমাদের বেশি উৎসাহ দিয়েছে। নৃত্যশিল্পীদের ৪০% বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। এটাই সংগঠনের মূল লক্ষ্যকে আরও প্রসারিত করেছে। সবই যাতে শহরকেন্দ্রিক না হয়, সেই দিকে আমাদের লক্ষ্য ছিল। ভবিষ্যতেও জেলার শিল্পীদের সাড়া পাব বলেই আমাদের বিশ্বাস। আপনাদের শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ আমাদের পাথেয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঝর্ণা দত্ত। তিনিও একজন নৃত্যশিল্পী এবং উদয় শঙ্কর-অমলা শঙ্করের ছাত্রী। অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি এদিন বলেন, “ফেডারেশন তো অনেক বছর আগেই শুরু হয়েছে। আমরা প্রথম থেকে রয়েছি। দ্বৈত নৃত্যের উৎসব এবারেই প্রথম হল। তরুণ প্রজন্মের অনেক শিল্পীর নৃত্য দেখতে পেলাম। খুবই ভাল লাগল।”
সংবর্ধিত হয়ে ওডিসি নৃত্যুশিল্পী সুতপা তালুকদার বলেন, “নাচ কেউ টিকিট কেটে দেখতে আসেন না। এয়ারকন্ডিশন প্রেক্ষাগৃহে আসেন খনিকের আরাম পাওয়ার জন্যে। এই দুঃখটা আমাদের সবারই রয়েছে। আমি চাই না আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই দুঃখটার মধ্য দিয়ে যাক।”
বাংলার নৃত্য জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে থাকবেন অমলা শঙ্কর। তাঁর জন্ম ১৯১৯ সালে। ছোট থেকেই নৃত্যশিল্পে দক্ষতা প্রমাণ করেছিলেন। বিবাহসূত্রে তিনি উদয় শঙ্করের স্ত্রী, মমতা শঙ্কর ও আনন্দ শঙ্করের মা। পণ্ডিত রবিশঙ্কর তাঁর সম্পর্কে দেওর। উদয় শঙ্করের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন ‘কল্পনা’ ছবিতেও। উমার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছিলেন তখনও। ২০১২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল ছবিটি। প্রায় ৯০ বছর বয়সে তিনি নিজে গিয়েছিলেন কানে। মস্করা করে কানে বলেছিলেন, “আমিই এখানে সবচেয়ে তরুণ অতিথি।”