প্রয়াত গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই বাঙালির ঘরে পৌঁছল এই দুঃসংবাদ। এ দিন সন্ধে সড়ে সাতটা নাগাদ বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দুঃসংবাদ পৌঁছনো মাত্রই তড়িঘড়ি নিজের উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে ফিরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার বেলা ১২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শায়িত থাকবে তাঁর নিথর দেহ।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন কিংবদন্তী গায়িকা। সপ্তাহ তিনেক আগেই প্রথমে এসএসকেএম ও পরবর্তীতে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। জানা যায় তিনি তিনি কোভিড পজিটিভ। ফুসফুসে সংক্রমণ রয়েছে, রয়েছে হৃদযন্ত্রের সমস্যাও। এসএসকেএম ভর্তি হওয়ার পর তাঁকে তড়িঘড়ি দেখতে হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে অ্যাপোলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এসএসকেএমে উডবার্ন ইউনিটে একটি বিশেষজ্ঞ টিমও সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল। চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়কেও আনা হয় সেখানে। সবার সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা এগোচ্ছিল। চিকিৎসকরা জানান, হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে। পরে যদিও জানা যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কোভিডেও আক্রান্ত। উডবার্নে কোভিডের চিকিৎসা হয় না। তাই গ্রিন করিডর করে তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধেতে নিভল সন্ধ্যা প্রদীপ। চলে গেলেন গীতশ্রী। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সঙ্গীত জগৎ কার্যত মাতৃহারা। মনে পড়ে যাচ্ছে একসঙ্গে কাটানো নানা মুহূর্তে কথা। কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে এল গায়িকা হৈমন্তী শুক্লার। সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলামও জানালেন, গত বছর কোভিডের সময়েও ডিজিটাল কনসার্ট শুনে ফোন করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
মৃত্যুর এক মাস আগে কেন্দ্রের দেওয়া পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন কিংবদন্তী। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান বঙ্গের শিল্পী মহলের অধিকাংশ। তাঁর মতো শিল্পী কী করে পদ্মশ্রী দেওয়া হতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজেই কথা বলেছিলেন টিভিনাইন বাংলার সঙ্গে। গলায় অসুস্থতার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
বলেছিলেন, “আমি ওঁদের জানিয়ে দিয়েছি, পদ্মশ্রী আমি অ্যাক্সেপ্ট করব না। সোজাসুজি বলেছি, মেরা দিল নেহি চাহতা হ্যায় (আমার মন চাইছে না)। ম্যায় নেহি লুঙ্গি (আমি গ্রহণ করব না)। আমাকে ওঁরা কারণ জিজ্ঞেস করেছিল। বলেছি, ওই একটাই কারণ, মেরা দিল নেহি চাহতা হ্যায়। আমার তো এতটা বয়স হয়েছে। ব্যাস, এই টুকুই জানিয়েছি। বাড়াবাড়ি আর কোনও কথাই বলিনি।” আজ সবই স্মৃতি। অগ্রজ থেকে অনুজ– কাঁদছে বাঙালি। কাঁদছে বাংলার সঙ্গীতজগৎ।
আরও পড়ুন- Sandhya Mukhopadhyay Obituary: তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান