বাস্তবে এই কঠিন সময়ে আমি তো বলব, রবীন্দ্রনাথের হাত ধরা যাচ্ছে না: ইমন চক্রবর্তী

করোনাক্লিষ্ট এক ধ্বস্ত পরিস্থিতিতে আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। এই সার্বিক বিপদে রবীন্দ্রনাথ বাস্তবে কতটা বন্ধু হিসেবে চর্চায় থাকতে পারছেন?

বাস্তবে এই কঠিন সময়ে আমি তো বলব, রবীন্দ্রনাথের হাত ধরা যাচ্ছে না: ইমন চক্রবর্তী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 09, 2021 | 11:26 AM

বিপদের বন্ধু রবীন্দ্রনাথ। হ্যাঁ, রবি ঠাকুরকে এভাবেই যাপন করেন অনেকে। চরম বিপদে রবীন্দ্রনাথের লেখা বা গান শান্তি দেয় অনেককে। করোনাক্লিষ্ট এক ধ্বস্ত পরিস্থিতিতে আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। এই সার্বিক বিপদে রবীন্দ্রনাথ বাস্তবে কতটা বন্ধু হিসেবে চর্চায় থাকতে পারছেন? লিখছেন গায়িকা ইমন চক্রবর্তী (Iman Chakraborty)

আজ একটা বিশেষ দিন। ২৫শে বৈশাখ। এই দিনটা সব বাঙালির কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। তবে সবার প্রথমে একটা কথাই বলতে পারি। এই মুহূর্তে কোনও সাহিত্য, কোনও সঙ্গীত আমাকে শান্ত করতে পারছে না। ‘গীতবিতান’ বা ‘সঞ্চয়িতা’ খুলে বসে যে রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ব বা মনে ভরসা জোগাব গান শুনে, সেই জায়গাতে আমি অন্তত নেই। খুব প্র্যাকটিক্যাল জ়োনে আমরা আছি। আমি মনে করি, এখন যদি রবীন্দ্রনাথ থাকতেন, উনিও লিখতে পারতেন না। কারণ এখন আমরা সত্যিকারের মৃত্যুপুরীর মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এমনটা হতে পারে কেউ কল্পনা করতে পারিনি।

গত বছর পয়লা বৈশাখ বা ২৫শে বৈশাখ গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এই বছরটা ভাল হবে। কিন্তু এই বছর আরও ভয়াল হয়েছে পরিস্থিতি। আরও কঠিন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছি আমার। আমার ব্যান্ডের একজন গুরুতর অসুস্থ। বহু পরিচিতের, বন্ধুর আত্মীয়ের মৃত্যুর খবর পাচ্ছি প্রতিদিন। কোনও কিছুই শান্ত করতে পারছে না।

Card

রবীন্দ্রনাথকে আমি সত্যিই ভালবাসি। মনে করি, আমার বেঁচে থাকার অংশ। ওঁর বিভিন্ন লেখা বিভিন্ন সময়ে মাথায় ঘুরেছে। জীবনে বিভিন্ন বিপদের মধ্যে দিয়ে যাই আমরা। আমিও গিয়েছি। মাকে হারিয়েছি এমন একটা সময়, যখন বন্ধু হিসেবে মাকে প্রয়োজন ছিল। তখনই রবীন্দ্রনাথ পাশে ছিলেন। আমি ওঁর লেখা পড়েই বিশ্বাস করতে শিখেছি, মৃত্যু মানে এক ঘর থেকে আর এক ঘরে যাওয়া। মৃত্যু মানেই কোথাও চলে যায় না মানুষটা। আত্মা থেকে যায়। আবার আমার যখন ব্রেন এমআরআই হয়েছে তখন ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়’ ভেবে গিয়েছি ওই আধ ঘণ্টা। তখন ভয় পাইনি। কিন্তু এখনকার ক্ষতিটা গোটা বিশ্বের হাহাকার। এটা অনেক কঠিন। অনেক কড়া। কোথাও গিয়ে শান্তি পাচ্ছি না। ঘেঁটে গিয়েছি। যখন একটু বৃষ্টি পড়ছে, দেবব্রত বিশ্বাসের গান চালিয়ে নিজে চিৎকার করে গাইছি।

আরও পড়ুন- পৃথিবীর নাম হোক পঁচিশে বৈশাখ

Card

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন জাগে, তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’। সেই অর্থে পজ়িটিভ দিক কোথাও গিয়ে যদি দেখতে পাই, তাহলে বলব প্রকৃতি অনেকটা সুন্দর হয়েছে। দূষণ কমেছে। কিন্তু কয়েকদিন আগেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যা চলল, যেভাবে মানুষ মানুষকে অসম্মান করছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করছে, অপমান করছে… তারপর কোভিড। মানুষ বড় বিপদে রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের জন্য থাকবেন। ২৫শে বৈশাখ থাকবে। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন নিজেদের সুস্থতা। চারপাশের মানুষের সুস্থতা। গান, সুর, বই, সাহিত্য সব থেকে যাবে। সবার আগে মানুষের প্রাণ গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকলে তবেই তো গান গাইব, রবীন্দ্রচর্চা করতে পারব। এখন সাবধানে থাকার সময়। বাস্তবে এই কঠিন সময়ে আমি তো বলব, রবীন্দ্রনাথের হাত ধরা যাচ্ছে না।

Card

আমি যতটুকু রবীন্দ্রনাথকে পড়েছি, চিনেছি, আমি বিশ্বাস করি, এখন উনি থাকলে মাঠে নেমে কাজ করতেন। বঙ্গভঙ্গের সময় সুর দিয়ে বেঁধেছিলেন। সারা দিন ঘরে বসে গান লেখেননি। বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য। বউয়ের গয়না বিক্রি করে দিয়ে শান্তিনিকেতন তৈরি করেছেন। বাড়িতে বসে এই সময় শুধু সাহিত্যচর্চা করতেন না।

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।